শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নির্বাচনী সহিংসতায় সারাদেশে নিহত ১৯

নির্বাচনী সহিংসতায় সারাদেশে নিহত ১৯

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার ভোট গ্রহণের দিনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জন।

এদের মধ্যে চট্টগ্রামের লোহাগ‍াড়ায় একজন, রংপুরের পীরগাছায় দুই জন, নীলফামারীর ডিমলায় একজন, জলঢাকায় একজন, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে একজন, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একজন, দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে তিনজন, বীরগঞ্জে ১জন ফেনীর সোনাগাজীতে দুইজন এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় তিনজন, নওগাঁর মান্দায় একজন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একজন এবং যশোরের মনিরামপুরে একজন নিহত হয়েছেন।।

নিহতদের মধ্যে একজন আনসারের প্লাটুন কমান্ডার বলে জানা গেছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়িতে ভোটকেন্দ্রে ককটেল ছুঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুকুরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন একজন।

শনিবার গভীর রাতে ডিমলা ও টঙ্গীবাড়িতে, রোববার ভোররাতে পীরগাছায়, সকাল আটটা ও দুপুর সাড়ে বারোটায় পাবর্তীপুরে, দুপুরে বীরগঞ্জে, সকাল দশটায় জলঢাকায়, সকাল সাড়ে দশটায় সোনাগাজীতে, দুপুর সাড়ে বারোটায় রামগঞ্জে, দুপুর একটা ও পৌনে তিনটায় ঠাকুরগাঁওয়ে, বিকেল তিনটায় নওগাঁয়, বিকেল পৌনে চারটায় লোহাগাড়ায়, দুপুর দেড়টায় সুন্দরগঞ্জে এবং দুপুর আড়াইটায় যশোরের মনিরামপুরে পৃথক পৃথক সংঘর্ষে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার ভোররাতে পীরগাছার মেহেরা ও মেকুরা ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা।

এ সময় পুলিশ গুলি ছুঁড়লে মেকুরায় হাদিউজ্জামান হাদি (২৫)ও পীরগাছার দেউটি এলাকায় মিরাজুল ইসলাম মিরাজ (২৪) নিহত হন। তবে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুকুল হোসেন এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।  নীলফামারীর ডোমার ও জলঢাকা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই জামায়াত কর্মী।

শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপারিতল‍া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে প্রাণ হারান জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন জানান, গভীর রাতে জামায়াত-শিবির কর্মীরা এই ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে নির্বাচনী উপকরণ লুট করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীর। নিহত জাহাঙ্গীর খালিশা ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক বলে জানা গেছে।

অপরদিকে রোববার সকাল ১০টায় জলঢাকা উপজেলার কৈমারী বালাপাড়া কাঁচারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মমতাজ উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তি। নিহত মমতাজ কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত।

জলঢাকা থানা পুলিশ জানায়, জামায়াত-শিবির কর্মীরা এই ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান জামায়াতের ওই কর্মী। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় ভোটকেন্দ্রে হামলা চালানোর সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুরে ডুবে মারা গেছেন এক ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা।

শনিবার গভীর রাতে উপজেলার কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রোববার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ ভোট কেন্দ্রের পাশের একটি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। নিহত ছাত্রদল নেতা কঙ্কন মিয়া (২৮) শিমুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। টঙ্গীবাড়ী উপজেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রামগঞ্জ উপজেলার মাসুমপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট কেন্দ্রে হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মো. রুবেল নামের নামের এক যুবক। নিহত যুবককে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত।সকাল দশটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পাবর্তীপুরের একটি ভোটকেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের হামলায় নিহত হয়েছেন আবদুল ওয়াহেদ নামের আনসারের এক প্লাটুন কমান্ডার (পিসি)। পাশাপাশি পৃথক অপর দু’টি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন দুই ১৮ দল কর্মী।

রোববার সকাল ৮টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই উত্তর শালন্দার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রাণ হারান আনসার পিসি আব্দুল ওয়াহেদ।

ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল সাইদুর রহমান জানান, সকালে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা এই কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ সময় তারা পিটিয়ে আনসার পিসি আবদুল ওয়াহেদকে হত্যা করে। এছাড়া তাদের হামলায় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সুবল চন্দ্রসহ অন্তত আটজন আহত হন। পরে প্রিজাইডিং অফিসারসহ ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে যান। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুপুর বারোটার দিকে পার্বতীপুরে মন্মথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজিবির গুলিতে মাসুদ (২০) নামে যুব জাগপার এক সদস্য এবং ঘোড়াখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৮ দল- আ.লীগ সমর্থকদের সংঘর্ষে চুন্নু(৩০)নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হন।

এ সময় গুলিবিদ্ধ হন মাহফিজুল ও হাসান নামের দুই যুবদল কর্মী।তাদের স্থানীয় ল্যাম্ব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।নিহত মাসুদ হয়বতপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে বলে জান‍া গেছে।

অপরদিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে দুপুরে বীরগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৮ দলের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে সালাউদ্দিন  (১৫) নামের এক কিশোর। রোববার সন্ধ্যায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  মৃত সালাউদ্দিন উপজেলার ভগিরপাড়া গ্রামের আব্দুল কালামের ছেলে।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যুবলীগ-যুবদল সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন পৌর ছাত্রদলের নেতা জামসেদ আলম (২৮) ও যুবদল নেতা শহীদুল্লাহ (৩০) । সকাল দশটার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হন পুলিশ-আনসারসহ ১২ জন।

নিহত শহীদুল্লাহ সোনাগাজী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি এবং জামশেদ আলম ২নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ সভাপতি বলে জানা গেছে। জামসেদের পিতার নাম জামাল উদ্দিন এবং শহীদুল্লাহ একই এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র। সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুভাষ চন্দ্র দুই জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন বিএনপি কর্মী। দুপুর সোয়া একটার দিকে সদর উপজেলার বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বিএনপির দুই কর্মী। নিহতরা হলেন, বিএনপি কর্মী হারুন (২০) এবং জয়নাল (২১)। জয়নাল আবেদিনের বাড়ি বাসুদেবপুর ও হারুনের বাড়ি খাগড়াবাড়ী গ্রামে।

অপরদিকে বিকেল পৌনে ৩টায় গড়েয়া ইউনিয়নের শিমুল ডাঙ্গী গোপালপুর গ্রামে আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে আবু হানিফ নামে আরো এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। নিহত আবু হানিফ ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার আমিনুলের পুত্র বলে জানা গেছে।

এছাড়া আহত হয়েছেন খোচাবাড়ী গ্রামের পরিমল, ধীরেন, বেগুনবাড়ির আতিবুর রহমান, হরিনারায়নপুরের কামরুল, মোমিনুল হক, মঞ্জুর আলী।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামে যৌথবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ১৮ দলের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বাবুল হোসেন (৩৫) নামের এক বিএনপি কর্মী। রোববার বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাবুল হোসেন চকবেদীরাম গ্রামের বাসিন্দা।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নিহত হয়েছেন সাহাবুল ইসলাম তারা (২৮) নামের এক শিবির কর্মী। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের খানাবাড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সাহাবুল উপজেলার মনমথ গ্রামের সলেয়া রহমানের পুত্র বলে জানা গেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়ছার আলী খান  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার ভবানীপুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন এক শিবিরকর্মী।রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

লোহাগাড়া থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. শাহজাহান  জানান, ভবানীপুর এলাকায় একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে পালানোর সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শিবিরের এক কর্মী মারা গেছে। তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহত যুবকের বয়স আনুমানিক ২২ বছর বলে জানান তিনি।

যশোরের মণিরামপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন এক শিবির কর্মী।নিহত মতিয়ার রহমান(২০)উপজেলার বিপ্রকোনা গ্রামের আব্দুল মজিদের পুত্র। উপজেলার বাজিতপুর ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। স্থানীয় দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলী তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে জামায়াত শিবির উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাজিতপুর কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হলে গুলিবিদ্ধ হন মতিয়ার।

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যেই রোববার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ৩শ’ নির্বাচনী আসনের মধ্যে ১৪৭টি আসনে একযোগে সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৪টায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ