রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়প্রহসনের ভোট ঠেকানোর ডাক দিলেন তারেক

প্রহসনের ভোট ঠেকানোর ডাক দিলেন তারেক

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কারো নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে  আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে এবং নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ শনিবার লন্ডন থেকে  পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান এই আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, “চলমান রাজনীতিতে যেন দেশের এই অস্তিত্বকে ঘিরেই বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের যে সংজ্ঞা আমরা চিরকাল জেনেছি, ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক জনসমষ্টি নিজেদের স্বার্থে আজ সেই সংজ্ঞাকে বদলে ফেলছে। প্রতিবেশি যে রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক হতে পারে স্বাভাবিক, ভিত্তি হতে পারে পারস্পরিক মঙ্গল ও সমঝোতা, সেই সম্পর্ককে ব্যক্তিগত ও সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে সেই রাজনৈতিক জনসমষ্টি আজ জনমতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।

গণতন্ত্রের পালাবদলেই এক সময়ে আজকের এই জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার সেই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সেই প্রক্রিয়াকে মেনে নিয়ে বিরোধী দলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশের সম্পদের অভূতপূর্ব লুটপাট, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বর ন্যাক্কারজনক বিনাশ, আর রাজনৈতিক-বিরোধী ও সমালোচকদের নজিরবিহীন দমনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের ক্ষমতা লাভের সেই প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষেই কলঙ্কজনক ছিল।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জুড়ে আজ চলছে এক গভীর রাজনৈতিক সংকট। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের উপর বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে দেশের মানুষ। জনসমর্থন ও আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোঁটায় পৌছানো আওয়ামী লীগ সরকার গণমানুষের ইচ্ছাকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা, রাজনৈতিক গুম-খুন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের গণহত্যা, আর দুর্নীতির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব অভিযোগের মুখে মানুষ প্রতিটি পদে-পদে এ সরকারের উপর অনাস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও বিএনপি প্রার্থীদের ব্যাপক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থান – দু’টোকেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।”

তারেক রহমান বলেন, “পুরো দেশ যেন আজ একটি কারাগার, যেখানে জান-মালের নিরাপত্তা নেই; আছে কেবল ভীতি ও আতঙ্ক। নিরপেক্ষ নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয় আর গণহত্যা-নৈরাজ্য-দুর্নীতি-অপশাসন সৃষ্টির দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয় থেকেই কি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এই অবস্থান? দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়া, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, এসবের কি কোনোই মূল্য নেই? আওয়ামী লীগ কি আবারও চূড়ান্ত ভাবে সেই বাকশালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে; যেখানে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ আর সমালোচনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা হত্যা করা হত? বাকশালের পরিণতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।

তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হওয়া এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য, এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও তা ভালো ফল বয়ে আনেনি। আমাদের সবার রাজনীতি যেহেতু দেশের কল্যাণার্থেই হওয়া উচিত, তাই মানুষকে সাথে নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে যাত্রা না করে কেন আমরা আবার সেই অরাজক অতীতে ফিরে যাব?”

তিনি বলেন, “২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে.এম. হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। অভিযোগ করা হয়েছিল যে বিচারপতি কে.এম. হাসান বিএনপিপন্থী। অথচ আজ যে শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হতে চাচ্ছেন, তিনি কেবল অনিরেপক্ষই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে – বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে? সংবিধান তো ঐশী বাণী নয় যে এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না।

দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মতো আমিও প্রশ্ন করতে চাই: সংবিধানের জন্য জনগণ, নাকি জনগণের জন্য সংবিধান? জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে এ পর্যন্ত ১৫ বার আমাদের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের সংবিধানে যদি ৯৮ বার সংশোধন এসে থাকে, তাহলে জনগণের চাওয়া অনুযায়ী, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে, আমরা কেন ষোড়শ সংশোধনী করতে পারব না?”

তারেক রহমান ১৮ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “বিএনপি ও ১৮ দলের সর্বস্তরের নেতা, কর্মী ও সমর্থকের উদ্দেশ্যে বলছি – ইতিহাস ও রাজনীতির পালাবদল আমাদেরকে আজ এক অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে আজ আমরা পরিণত হয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সেনানীতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার “দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও” শ্লোগানের মর্মার্থ আজ দেশবাসী পদে-পদে অনুভব করছে। উজ্জ্বল প্রভাতের পূর্বে রাত যেমন গভীর ও অন্ধকার হয়, তেমনি আমাদের উপর নেমে এসেছে অন্য দেশের তাবেদারিতে নিমজ্জিত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের গুম, খুন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টিমরোলার।

আজ আমাদের লড়াই কোনো সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়। আজ আমাদের লড়াই একটি বন্দী জাতির মুক্তির জন্য এক অশুভ আশীর্বাদপুষ্ট স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে। সেই অশুভ তৎপরতাই একদিন আমাকে আপনাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। আজও শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমি সশরীরে আপনাদের মাঝে উপস্থিত নেই। তবে আমি প্রতিটি মুহুর্তে নিজেকে আপনাদের মাঝেই অনুভব করি। আপনাদের উপর আসা আঘাত, আপনাদের ত্যাগ, আপনাদের সংগ্রাম আমাকে সর্বদা আচ্ছন্ন করে রাখে। আপনাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই, এখন সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। আর নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা নয়।

এখন থেকে লক্ষ্য একটাই – সকল ক্ষুদ্র বিভাজন ভুলে স্বৈরাচারী সরকার আর তার প্রহসনের নির্বাচনকে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আর অন্ধ সমর্থক ছাড়া প্রতিটি বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ আমাদের সাথে রয়েছেন। কেউ সশরীরে আছেন; আর বাকিদের সমর্থন, প্রেরণা ও দোয়া আমাদের সাথে আছে।

দেশের মানুষ রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির কামনায় চেয়ে আছেন বিএনপির দিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দিকে। এত জনসমর্থিত একটি আন্দোলনের সাফল্য ইনশাল্লাহ অনিবার্য। প্রয়োজন শুধু এই সংগ্রামকে – যা চলে আসছে আমাদের বিপুল ত্যাগ-তীতিক্ষা, বহু সহযোদ্ধা ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্যে – সেই সংগ্রামকে, এই দেশ ও জাতির স্বার্থে যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখা।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ