শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদপ্রবাসী সময়ফিলিপাইনে সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস...

ফিলিপাইনে সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

বাংলাদেশ দূতাবাস, ম্যানিলার উদ্যোগে এ বছর ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’ উদযাপিত হয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিসংঘ ফিলিপাইন অফিসের সাথে  সম্মিলিতভাবে দূতাবাস একটি সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিভিন্ন বিষয়ের অনুষদবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিকবৃন্দ, আন্তর্জাতিক ও  বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী এবং মিডিয়াকর্মীসহ প্রায় আড়াইশত অতিথি উক্ত সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন।

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়-এর দিলিমান ক্যাম্পাসের NISMED অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ‘Multilingual Education: An Essential Strategy for Transforming Education Systems’ শীর্ষক একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলিমান ক্যাম্পাস উপাচার্য অধ্যাপক এডগারদো কার্লো ভিসতান, সমাজবিজ্ঞান ও দর্শন অনুষদ ডিন অধ্যাপক রুথ লুস্টেরো রিকো, ফিলিপাইনে নিযুক্ত জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক জনাব গুস্তাভ গঞ্জালেস এবং ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন। সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ এডুকেশন প্রধান অধ্যাপক ডিনা জোয়ানা ওকাম্পো। সিম্পোজিয়াম শেষে ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগ প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মারিয়া ক্রিস্টিনা।

রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এর তাৎপর্য বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর প্রভূসুলভ মনোভাবের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং ভাষার ভিত্তিতে বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। এই পথ পরিক্রমায় শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এই ভাষা সংগ্রামের অর্জনেই লুকিয়ে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ কে সামনে রেখে বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষা কীভাবে সকল শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের সহায়তা করতে পারে তা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের মধ্যে ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণার উপর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাবনা করেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ডিনা ওকাম্পো তাঁর প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, বহুভাষাবাদ সবার জন্য উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজ তৈরি করে। তাঁর বক্তব্য সমর্থনে বেশ কিছু গবেষণাপত্রের সূত্র উল্লেখ করে তিনি পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের জন্য অভিন্ন ভাষা ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক জনাব গুস্তাভ গঞ্জালেস তাঁর বার্তায় বলেন, বহুভাষা ভিত্তিক এবং বহুসাংস্কৃতিক সমাজ সুসংরক্ষিত ভাষা কর্তৃক নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। সকলকে সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ ও সমতাভিত্তিক শিক্ষার জন্য মাতৃভাষা ও বহুভাষাবাদ একটি ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ।

উপাচার্য অধ্যাপক এডগারদো কার্লো ভিসতান তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘ অফিস এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভাষাতত্ত্ব বিভাগকে যৌথভাবে এ ধরণের সিম্পোজিয়াম আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানান।

সিম্পোজিয়াম শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমেই বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ১২টি ভাষায় সমবেত ভাবে গাওয়া একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রদর্শিত হয়। এরপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় নৃত্য দল KontraGapi স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আঞ্চলিক ভাষায় পরিবেশিত গানের তালে তালে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশনা করেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের সম্মানে বাংলাদেশি খাবারের এক বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়।

এর আগে, সকাল ৭টায় বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। নীরবতা পালন শেষে রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হাউস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে উপস্থিত সকলে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ