মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউসর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, রাজপথে থাকবেন খালেদা জিয়া

সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, রাজপথে থাকবেন খালেদা জিয়া

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশ অচল করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রধান এই বিরোধী দল। হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও, অসহযোগ, গণবিক্ষোভ, স্বেচ্ছা গ্রেফতার ও লাগাতার অবস্থান নেয়ার মতো কঠোর ও কঠিন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট।

একের পর এক এসব কমসূচি ঘোষণা করা হবে কেন্দ্র থেকে। তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে স্থানীয় পর্যায় থেকেও কর্মসূচি ডাকার কৌশল নেয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কর্মসূচি পালনে কড়া নির্দেশ রয়েছে জোটের শরিকসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের ওপর।

আন্দোলন-কর্মসূচির পুরো বিষয়টি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। কর্মসূচি পালনে যে কোনো সময় রাজপথে নামবেন খালেদা জয়া নিজেই। আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়টাকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনও সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে একের পর এক আইন করছে, যা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য সাহায্য করবে। এ অবস্থায় আন্দোলনের বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্টÑ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা না করে যে মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ওই মূহূর্ত থেকেই দেশ অচল করে দেয়া হবে। সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে। কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি যা যা করার, তার সবই করবে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া, ‘সর্বদলীয়’ নামে নির্বাচনী মন্ত্রিসভা গঠন এবং চলতি সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বক্তব্যে সংলাপ ও সমঝোতায় ক্ষমতাসীনদের কোনো আন্তরিকতা নেই বলে ধরেই নিয়েছেন বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে নবম সংসদের সমাপনী অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি তাকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্বপালন করতে বলেছেন।

এ বক্তব্যের পর বিএনপি নেতৃত্ব নিশ্চিত সরকার আর আলোচনা-সমঝোতায় আসছে না। তারা মনে করছেন, সংলাপ নিয়ে দায়সারাগোছের বক্তব্য দিয়ে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এ অবস্থায় যে কোনোভাবে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করার কঠোর পথে পা দিচ্ছে বিরোধী দল।

দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংলাপ-সমঝোতার জন্য শেষ অপেক্ষা করবেন খালেদা জিয়া। সেখান থেকে কোনো রকমের উদ্যোগ বা সাড়া না পাওয়া গেলে চলতি সপ্তাহে এক দিনের সর্বাত্মক অবরোধ পালনের পাশাপাশি টানা ৭২ অথবা ৯৬ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি ডাকার পরিকল্পনা করছে ১৮ দল। এ অবস্থায় আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্বে নিতে রাজধানীকে আটটি সাংগঠনিক অঞ্চলে ভাগ করে ৮ জন প্রভাবশালী নেতাকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহকে কাফরুল ও গুলশান এলাকা, মির্জা আব্বাসকে মতিঝিল, সবুজবাগ ও খিলগাঁও, নজরুল ইসলাম খানকে তেজগাঁও ও বনানী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও দারুসসালাম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল ও ওয়ারী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে লালবাগ ও হাজারীবাগ, বরকত উল্লাহ বুলুকে উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান এবং সালাহউদ্দিন আহমদকে ডেমরা ও শ্যামপুর এলাকার দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার বিভিন্ন আসন থেকে অংশ নেয়া বিএনপি নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্বপালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, আগে বিএনপির নেতারা যারা যে যে আসন থেকে নির্বাচন করেছেন এবং তাদের সেসব এলাকায় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আন্দোলন জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দলের মধ্যম সারির আরও কয়েকজন নেতাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশের নেতাকর্মীদের ডাক দেয়া মাত্র রাজপথে নেমে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ