সোমবার, মে ১৩, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......কাফকো ও সিইউএফএল : ৪৪ কোটি টাকার গ্যাসে ১৮০ কোটি টাকার সার!

কাফকো ও সিইউএফএল : ৪৪ কোটি টাকার গ্যাসে ১৮০ কোটি টাকার সার!

 

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

চট্টগ্রামের দুই প্রধান সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের কারণে গ্যাস দুর্ভোগে ভুগছে চট্টগ্রামবাসী। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গ্যাসের চুলা, সিএনজি স্টেশনে গ্যাস না থাকায় গাড়ির চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম আর শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) ও চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) প্রতিমাসে গ্যাস পুড়ছে ৪৩ থেকে ৪৪ কোটি টাকার। আর বিপরীতে প্রতিমাসে উৎপাদন করছে মাত্র ১৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকার সার।
কাফকো ও সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ করছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। পেট্রোবাংলা ও কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দুই সার কারখানায় দৈনিক ১১৫ মিলিয়ন ঘনফুটের চাহিদা থাকলেও দৈনিক প্রায় ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানই দৈনিক প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়ে থাকে। যে পরিমাণ সার এই দুই কারখানার একটি ব্যবহার করে সেই পরিমাণ গ্যাস নগরীতে সরবরাহ করা হলে নগরীর আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
দুই কারখানার সার উৎপাদনের খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, দুই কারখানা ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে। এর মধ্যে কাফকো ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে দৈনিক গড়ে ১৭০০ টন সার উৎপাদন করে, সিইউএফএল উৎপাদন করে ১৩৫০ টন। এ হিসেবে কাফকো প্রতিমাসে ৫১ হাজার টন ও সিইউএফএল ৪০ হাজার ৫০০ টন সার উৎপাদন করে। দুই কারখানার মধ্যে উৎপাদনে সাড়ে ১০ হাজার ৫০০ টনের পার্থক্য থাকলে সারের বাজারমূল্যের ব্যবধান বেশি। কাফকো আন্তর্জাতিক দরে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সার বিক্রি করে এবং সিইউএফএল দেশীয় দামে সার বিক্রি করে থাকে। সে হিসেবে কাফকোর উৎপাদিত সারের বাজারমূল্য ১২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং সিইউএফএল’র ৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অপরদিকে কেজিডিসিএল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, কাফকো ও সিইউএফএল সমপরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করলেও কাফকো থেকে বেশি টাকা পায় কেজিডিসিএল। কাফকো প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৪ ডলারে (প্রতি ডলার ৭৯ টাকা হিসেবে ৩১৬ টাকা) কিনলেও সিইউএফল কিনছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা দরে। সে হিসেবে কাফকো থেকে প্রতিমাসে কেজিডিসিএল পাচ্ছে গড়ে ৩৫ কোটি টাকা এবং সমপরিমাণ গ্যাস দিয়ে সিইউএফএল থেকে পাচ্ছে ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ আলম  বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কখনো লাভ দেখিনা। সরকারের প্রয়োজনে নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত দরে কাফকো ও সিইউএফএলকে আমরা গ্যাস সরবরাহ করে থাকি। তবে দুটি সারকারখানা একত্রে চললে নগরীতে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়ে থাকে।’

এদিকে কাফকোর মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে সরকার বেশি লাভবান হয়ে থাকে। আমরা সিইউএফএলের সমপরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে বেশি সার উৎপাদন করি। এছাড়া কেজিডিসিএলকেও আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী সিইউএফএলের তুলনায় প্রায় ১৫০ গুণ বেশি টাকা দিয়ে থাকি।’
অপরদিকে সিইউএফএলের মহাব্যাবস্থাপক (অপারেশন) আতাউল করিম বলেন, ‘আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান। গ্যাস সমস্যার কারণে গত ১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ছিল। এখন আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে চালু করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেজিডিসিএল’র একজন কর্মকর্তা জানান, ২০ থেকে ৩০ বছরের পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে সিইউএফএল চালু থাকায় এখানে বেশি পরিমাণে গ্যাস ব্যবহৃত হয়। নতুন যন্ত্রপাতির অভাব ও লিকেজের কারণে এখানে গ্যাস অনুপাতে সার উৎপাদিত হচ্ছে না।

গত ১৬ নভেম্বর থেকে সিইউএফএল চালু করায় নগরীতে গ্যাস বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নগরীতে দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হলেও পাচ্ছে ২১৫ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্যাস সঙ্কটের কারণে নগরীর বাকলিয়া, আন্দরকিল্লা, দেওয়ানবাজার, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, ওআর নিজাম রোড, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট ও অক্সিজেনসহ প্রায় অর্ধেক শহরে গ্যাসের চাপ নেই। এতে জ্বলছে না গ্যাসের চুলা এবং গ্যাসের চাপ না থাকায় সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। চাপ কম থাকায় গাড়িতে গ্যাস প্রবেশ করছে না। গত ৬ মাস ধরে কাফকো সচল থাকলেও এ সমস্যা দেখা যায়নি, সিইউএফএল চালু হওয়ার পর থেকে সমস্যা প্রকট হচ্ছে।

দুটি সার কারখানা একসাথে চালু থাকায় নগরীতে গ্যাস সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে কেজিডিসিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (রক্ষণাবেক্ষণ) প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, এদের একটি কারখানার সমপরিমাণ গ্যাস নগরীতে সরবরাহ করা হলে নগরীর হাজার হাজার আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প কারখানায় গ্যাস দেয়া যেতো। কিন্তু সার কারখানা চালু রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকায় আমাদের কিছুই করার নেই। সাঙ্গু গ্যাস ক্ষেত্র বন্ধ ও সেমুতাং মাত্র ৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করায় জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের সরবরাহ না বাড়লে এ দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী রেহাই পাবে না।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ