বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনজাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানকে ১৮৪ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানকে ১৮৪ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত

তৈরি পোশাক ও ফিশিংসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করা ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যাংকঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এসব ঋণ শোধ না করে গ্রুপটির একাধিক কর্ণধার বিদেশে পাড়ি জমান।

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী সাবেক এমপি মাহজাবীন মোরশেদকে দুই মাসের মধ্যে ১৮৪ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।morshed-wife

বেসিক ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার দায়ের করা ঋণখেলাপি মামলায় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানান, ১৮৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০২১ সালে আইজি নেভিগেশন লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে বেসিক ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা।

মামলার চার বিবাদি হলেন আইজি নেভিগেশন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মাহজাবীন মোরশেদ, তার স্বামী মোরশেধ মুরাদ ইব্রাহিম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হুমাইরা করিম ও মোজাফফর হোসেন।

মামলা দায়েরের পর চার বিবাদিকে পাসপোর্ট জমাসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় একতরফা রায় প্রদান করেন আদালত।

বেসিক ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১০ সালে জাহাজ আমদানিতে বেসিক ব্যাংক আগ্রবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ক্রিস্টাল গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠান আইজি নেভিগেশন। এছাড়া একই বছর ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং-এর নামে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় ক্রিস্টাল গ্রুপ।

কিন্তু এক দশকেও ঋণের টাকা ফেরত পায়নি বেসিক ব্যাংক। এছাড়া ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং-এর কর্ণধার মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমও কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।

অর্থ ফেরত না পেয়ে ২০২১ সালে বেসিক ব্যাংক অর্থঋণ মামলা দায়ের করে। বর্তমানে ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং-এর কাছে ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখার পাওনা ১৩৫ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১২ সালে ‘ক্রিস্টাল সাপায়ের’ নামক একটি জাহাজ কিনতে বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ঋণ নেয় ক্রিস্টাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বে নেভিগেশন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল মুরাদ ইব্রাহিমের (মোরশেদ মুরাদের ভাই) নামে নেওয়া এ ঋণ এখনো শোধ করা হয়নি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১২৭ কোটি টাকা।

এছাড়া গ্রুপটির অপর প্রতিষ্ঠান এমআরএফ ট্রেড হাউজ একই ব্যাংকের জুবলী রোড শাখা থেকে ঋণ নেয়। বতর্মানে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে শাখাটির পাওনা প্রায় ৭০ কোটি টাকা।

তৈরি পোশাক ও ফিশিংসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করা ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যাংকঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এসব ঋণ শোধ না করে গ্রুপটির একাধিক কর্ণধার বিদেশে পাড়ি জমান।

বেসিক ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ফয়সাল শাহ কোরেশি বলেন, ‘ক্রিস্টাল গ্রুপের চার প্রতিষ্ঠানের কাছে বেসিক ব্যাংকের তিন শাখার এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু আগ্রাবাদ শাখারই ৩২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

‘রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ ঋণ নিয়েছেন সাবেক সাংসদ মাহজাবীন মোরশেদ ও তার স্বামী মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম। দীর্ঘদিনেও টাকা ফেরত না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

বেসিক ব্যাংক ছাড়াও গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে রূপালী ব্যাংক মতিঝিল শাখার ১১৪ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের গুলশান ও খাতুনগঞ্জ শাখার ৭৬ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক দিলকুশা শাখায় ৫০ কোটি টাকা, আল আরাফাহ ওআর নিজাম রোড শাখার ১৩ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংক গুলশান শাখার তিন কোটি টাকা, বিডি ফাইন্যান্স-এর ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

২০০৯ সালে মোরশেদ মুরাদের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সাংসদ মনোনীত হন। পদ্মা ব্যাংক (ফারমার্স ব্যাংক), এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন মোরশেদ মুরাদ ও তার পরিবারের সদস্য।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ