সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে সরকার। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকটের মধ্যে কমছে রাজস্ব আদায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে। মে মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। ২০২২ সালে জুনে যা ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম এগারো মাসে (জুলাই-মে) সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এসময় দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি। তখন পর্যন্ত উল্টো আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার রেকর্ড ৭১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ও ডলার সংকটে এই লক্ষ্যমাত্রাকে অস্বাভাবিক বলেছিল অর্থনীতিবিদরা।
রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ৩৪ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। এই দশ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। যদিও রাজস্বের এই আহরণ বিগত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারে। সাধারণত এ মাসেই সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করা হয়। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও পিছিয়ে আছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে সরকারের নানা কড়াকড়ি আরোপের কারণে খাতটিতে বিনিয়োগ কমে এসেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো থেকে বড় আকারে ঋণ নিতে সরকার বাধ্য হবে।
চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা আছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে আসন্ন ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম।
রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, আগামী সাড়ে তিন বছর ধরে স্বাভাবিক গতির চেয়ে দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে। আর সেই কৌশল প্রণয়ন করতে হবে এই জুনের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইএমএফ’র চাপে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে আসন্ন বাজেটে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব হিসেবে ৫ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।