শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......মাঠে নেই চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সাংসদরা

মাঠে নেই চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সাংসদরা

স্পর্শকাতর সময়ে মাঠে নেই চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সাংসদরা

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় পরবর্তী সময়  বন্দরনগরীর জন্য স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচিত হলেও চট্টগ্রামের মাঠে নেই মন্ত্রী-এমপিসহ অধিকাংশ ‘দায়িত্বশীল’ নেতা। যে কোন পরিস্থিতিতে মাঠ দখলে রাখতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে কেউ হজ্বে, কেউ সংসদ অধিবেশনে আবার কেউ ব্যস্ত আছেন মন্ত্রণালয়ের কাজে।

ফলে রায়ের পর চট্টগ্রামের রাজপথ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিলনা। এ সুযোগে বেশকিছু এলাকায় সাকা’র সমর্থকরা প্রতিরোধ ছাড়াই ঘটিয়েছে বিভিন্ন নাশকতা।

তবে এরপরও কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা রায়ের পরই নগরীতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন। কিন্তু নিজ নিজ এলাকায় মন্ত্রী, এমপিরা তো ছিলেনই না, তাদের সমর্থকদেরও সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি।

রায়ের পর রাজপথে সরব থাকা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম  বলেন, ‘সালাউদ্দিন কাদের চট্টগ্রামের কলংক। তার বিচারের জন্য, ফাঁসির জন্য আমরা দিনের পর দিন চিৎকার করেছি। কিন্তু ফাঁসির আদেশের পর রাজনৈতিক প্রয়োজনে মাঠে থেকে যেভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ ছিল, সেটা আমরা পারিনি।’

রাজপথে থাকা আরেক নেতা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘মন্ত্রী, এমপি কিংবা সিনিয়র নেতাদের সবার মাঠে থাকা উচিৎ ছিল, সেটা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো মন্ত্রী-এমপির দল নই, কর্মীদের দল। মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে, এমপি সংসদে কাজ করছেন আর আমরা যারা কর্মী আছি, তারা মাঠে ছিলাম। অতীতেও থেকেছি, ভবিষ্যতেও থাকব।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে হ্জ্ব পালনের জন্য সৌদিআরবে অবস্থান করছেন। গত শনিবার তিনি চট্টগ্রাম ছাড়েন।

নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কোতয়ালী আসনের সাংসদ নূরুল ইসলাম বিএসসি সংসদ অধিবেশন নিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত আছেন। তিনি না থাকায় তার অনুসারীদের কাউকে সাকা’র রায়ের পর মাঠে কোন কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংসদ বিএসসি’র মোবাইলে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু গত ২২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা.আফছারুল আমিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী। তিনিও নগরীর একটি আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ। মন্ত্রণালয়ের ব্যস্ত থাকা আফছারুল আমিন ছিলেন না চট্টগ্রামের কর্মসূচীতে। তার কিছু অনুসারী রায়ের পর মূল কর্মসূচীতে যোগ দিলেও নিজ এলাকায় কোন মিছিল-সমাবেশ তারা করেননি বলে জানা গেছে। নগর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ‍ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী হজ্ব করতে সৌদিআরব গেছেন।

মঙ্গলবার রায়ের পর নগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে একমাত্র তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিদের সবাই এবং অধিকাংশ সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যও রায়ের পর কর্মসূচীতে অনুপস্থিত ছিলেন। মাঠে ছিলেন না নগরীর বন্দর আসনের সাংসদ এম এ লতিফ এবং তার অনুসারীরাও।

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী ‍বাবুল  বলেন, ‘আমি অসুস্থ। তারপরও কেউ না থাকায় আমি নিয়মিত কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছি। মহিউদ্দিন ভাই সৌদিআরব থেকে প্রতিদিন দু’তিনবার ফোন করছেন। তিনি যেভাবে কর্মসূচী পালন করতে বলছেন সেভাবে করছি।’

দায়িত্বশীল নেতাদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপির উপর নির্ভর করেনা। সহ সভাপতি, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের কেউ কেউ প্রথম দিন না থাকলেও আজ (বুধবার) হরতালের প্রতিবাদে যে কর্মসূচী পালন করেছি সেখানে সবাই ছিলেন।’

নগরীর বাইরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় দলীয় সংসদ সদস্য থাকলেও কেউই রায়ের পর স্পর্শকাতর সময় বিবেচনায় সেখানে যাননি। এমনকি তাদের অনুসারীরাও কোন কর্মসূচী পালন করেননি বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘সংসদের শেষ অধিবেশন হওয়ায় কেউ একদিনও যাতে অনুপস্থিত না থাকে, দল থেকে সেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য এমপিরা সম্ভবত এলাকায় আসতে পারেননি। অনেকে এমপি হলেও সেভাবে তো দলের কোন পদে নেই।’

অন্যদিকে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মহাজোটের সাংসদ এবং মিরসরাই, সীতাকুন্ড, রাঙ্গুনিয়া, রাউজানে আওয়ামী লীগের সাংসদ থাকলেও সেখানে দায়সারা গোছের কিছু কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়ায় সাকা’র সমর্থকরা ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা চালিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে দিলেও কোন জোরালো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দিনভর সেখানে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা হয়েছে। গত নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়ায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ।

রাউজানে রায় ঘোষণার পর হাতেগোণা কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল বের করেন। মিছিলটি কিছুদূর গিয়েই আবারও দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসেন। সাকা’র নির্বাচনী এলাকা ফটিকছড়িতে মিষ্টি বিতরণের পাশাপাশি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম  বলেন, ‘রায় ঘোষণার পর বিএনপিও তো কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তারা যদি জোরালোভাবে মাঠে নামত, আমাদের নেতারাও হয়ত সেক্ষেত্রে ঘরে বসে থাকতনা।’ এদিকে রায় ঘোষণার পর নগরীতেও গাড়িতে আগুন দেয়া এবং বুধবার হরতালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল  বলেন, ‘কিছু নৈরাজ্য তারা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা তো সরকারী দল, যে কোন পরিস্থিতিতে আমাদের শান্তি বজায় রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করতে হবে। আমরা সেই দায়িত্বশীলতা থেকে সরে যাইনি।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ