বুধবার, মে ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়নতুন তিনটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু

নতুন তিনটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সর্বশেষ সভায় দেশের তফসিলভুক্ত ৫৯তম ব্যাংক হিসাবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ‘কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সব শর্ত পূরণ না করায় ওই সভায় লাইসেন্স না দিয়ে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে পিপলস ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংককে। শর্ত পূরণ করার পর এ তিনটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার কথা বলা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

নির্বাচন কমিশন ৮ নভেম্বর দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।  তফসিল ঘোষণার পর সরকারের রুটিন কাজের বাইরে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকার বিধান রয়েছে। এ অবস্থায় অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা তিন ব্যাংকের ভাগ্যও ঝুলে গেছে। নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত ঝুলে যাওয়া ব্যাংকের অনুমোদন সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক অনুমোদনের সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের রুটিন কাজের বাইরে কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তফসিল ঘোষণার পর নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার চেষ্টা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। কারণ এ ধরনের উদ্যোগ ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি।

গত ২৯ অক্টোবর পরিচালনা পর্ষদ সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় চারটি ব্যাংকের প্রস্তাব তোলা হয়। এর মধ্যে একটি ব্যাংককে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি ব্যাংককে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের প্রস্তাব ও নথিপত্রে কিছু ঘাটতি ও ত্রুটি রয়েছে। সেগুলো সংশোধন করে দিলেই পর্ষদ অনুমোদন দেবে।

চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া ব্যাংকের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের তিনজনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে কর-সংক্রান্ত মামলা চলছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে আমাদের জানালে পর্ষদ অনুমোদন দেবে। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা এমএ কাশেমের বিদেশে কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, তা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠালে তা পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। পর্ষদ সেটি বিবেচনা করে ব্যাংক স্থাপনের আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দেবে। আর সিটিজেন ব্যাংকের প্রস্তাবে কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেগুলো ঠিকঠাক করে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই নতুন ব্যাংক অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তারা। এ প্রসঙ্গে পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের জন্য আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এমএ কাশেম  বলেন, কিছু কাগজপত্রে ত্রুটির কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক গত পর্ষদ সভায় পিপলস ব্যাংকের অনুমোদন দেয়নি। যে কাগজপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছে, তা এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। আশা করছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদের আগামী সভায় পিপলস ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। এ বিষয়ে গভর্নরের সঙ্গে আলাপ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

অনুমোদন না পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ‘বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের’ জন্য আবেদন করেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। যদিও শুরুতে ‘বাংলা ব্যাংক’ নামেই অনুমোদনের আবেদন জমা দেয়া হয়েছিল। বেঙ্গল গ্রুপের অধীনে বর্তমানে বিভিন্ন খাতের প্রায় ২০টি শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন নোয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম, যিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক। এর আগে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন মোরশেদ আলম। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড হসপিটাল ও পিপলস ইউনিভার্সিটির পরিচালক।

সিটিজেন ব্যাংকের আবেদনটি এসেছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পরিবার থেকে। আনিসুল হকের মা জাহানারা হককে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনপত্রে।

সূত্রমতে, নতুন ব্যাংকের জন্য ২০১১ সালে আবেদন চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় জমা পড়ে ৩৭টি আবেদন। সরকারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। যদিও আর কোনো ব্যাংকের অনুমোদন না দেয়ার পক্ষেই মত ছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। ২০১২ সালে ওই নয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে অনুমোদন পায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উদ্যোগে সীমান্ত ব্যাংক। এরপর আরো কয়েকটি ব্যাংককে অনুমোদন দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সুপারিশ পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি সুপারিশের উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিতে আপত্তির কথা জানায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ