সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউ এক নরঘাতকের কাহিনি এবং তার ফাঁসির রায়

এক নরঘাতকের কাহিনি এবং তার ফাঁসির রায়

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

একাত্তরে হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দিনের কার্যতালিকার প্রথমেই প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। তার বিরুদ্ধে আনীত ৬টি অভিযোগের ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এরমাঝে ৬ নাম্বার অভিযোগ, হযরত আলী লষ্কর হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্‌টিটিউট থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র রাজনৈতিক শাখা ইসলামি ছাত্র সংঘে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং একই বছর স্নাতোকত্তর অধ্যয়ন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় তিনি ইসলামি ছাত্র সংঘের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতাদের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে আধাসামরিক বাহিনী আলবদরে যোগ দেন। কিন্তু বাংলাদেশ যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করে ও নতুন সরকার রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর, নতুন সরকার জামায়াতকে পুনরায় রাজনীতির অনুমতি প্রদান করে। কাদের মোল্লা দলে সক্রিয় হতে থাকেন। তিনি দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তার জনপরিচিতি ও দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক হওয়ার সুবাদে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে দুইবার সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২৫ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে পল্লবীর দুয়ারীপাড়ার বাসিন্দা আমীর হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা সরদার আবদুস সালাম, খাজা আমিনউদ্দিন (মৃত), আকতার গুণ্ডাকে (পাকিস্তানে পলাতক) আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিদের সঙ্গে আরও অপিরিচিত ৬০-৭০ জন অবাঙালিকে নিয়ে কাদের মোল্লা নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা গণহত্যায় অংশ নেন। মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালের আমীর হোসেন মোল্লা মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে ১০০-১৫০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আসামিদের আস্তানা আক্রমণ করেন। তখন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, মীর আবুল কাশেম, সরদার আবুল কালামসহ অন্য আসামিরা ভারী অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি চালায়। এতে বাদী আমীর হোসেন মোল্লার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার শহীদ হন। বাদীর ডান পায়ে ও ডান হাঁটুতে গুলি লাগে। পরে স্বজনদের খুঁজতে এসে অনেকেই ঘাতক আল-বদরদের হাতে নিহত হন। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার বিষয়ে ২০০৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। সংসদে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নে সরকার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি আসে ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ। ২০১০ সালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় এবং ২০১২ সালের মে মাসে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। কাদের মোল্লাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহয়তা, ধর্ষণ ও ঢাকার মিরপুর এলাকায় গনহত্যার দায়ে দোষী সাবস্থ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে ৩৪৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যাসহ ৬টি অভিযোগ আনা হয়:

১. আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১ নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনে পুনরায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে এসে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পল্লবের দেহ দুদিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল্লবের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গুণ্ডা পল্লবের বুকে পরপর ৫টি গুলি করে হত্যা করে।

২. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আলবদরবাহিনী নেতা আাসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে মিরপুরের মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে বাড়ির সিরাজ নামক এক ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

৩. ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ হতে তার নিজ বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য আসেন। বাসার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় তিনি পুনরায় আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেয়ার জন্য মিরপুর ১০ নং বাসস্ট্যান্ডে গেলে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদরা বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাসে ওঠার আগেই খন্দকার আবু তালেবকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর আসামি আব্দুর কাদের মোল্লার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তাকে জবাই করে হত্যা করে।

৪. আব্দুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী বাহিনী আলবদর সদস্য ও পাকি সৈন্যদের নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ নবেম্বর ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামে কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় বাড়িঘড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

৫. কাদের মোল্লার নেতৃত্বে একাত্তরের ২৪শে এপ্রিল তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় আলোকদী গ্রাম ঘিরে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারযোগে তুরাগ নদীর পাড়ে আলোকদী গ্রামের পশ্চিম পাশে অবতরণ করে। পূর্বদিক থেকে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আবদুল কাদের মোল্লা তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য ও কতিপয় অবাঙালি বিহারিদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় ও যোগসাজশে আলোকদী গ্রাম ঘিরে ফেলে ও নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বাসু মিয়া, জহিরুল হক ওরফে  জোরা মোল্লা, জেরাত আলী, ফোয়াদ আলী, শুকুর মিয়া, আওয়াল মোল্লা, ছলে মোল্লা, রুস্তম আলী ব্যাপারী, করিম মোল্লা, জয়নাল মোল্লা, কাশেম মোল্লা, বদরউদ্দিন, বিষু মোল্লা, অজল হক, ফজল হক, রহমান ব্যাপারী, নবী মোল্লা, আলামত মিয়া, মোকলেছুর রহমান, ফুলচান, নওয়াব মিয়া, ইয়াছিন ভানু, লালুচান ব্যাপারী, সুনু মিয়া সহ ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়।

৬. আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলী লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তাণ্ডব চালায়। ঢাকার মিরপুরের ১২ নং  সেকশনের কালাপানির ৫ নং লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে এই তাণ্ডব চালানো হয়। সেখানে আবদুল কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আমেনা এবং শিশুকন্যা খোদেজা ও তাছলিমাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবু, যার বয়স মাত্র ২ বছর, তাকে মাটিতে আছড়িয়ে হত্যা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়ে আমেনা (১১)কে পালাক্রমে ১২ জনে ধর্ষণ করে।

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে বিচারপতি এম ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ১৯৭৩ এর ২০(৩) ধারা অনুযায়ী প্রমান সাপেক্ষে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম। ১৩২ পৃষ্ঠার রায়ের ৩৫ পৃষ্ঠা পড়ে শোনান তিন বিচারক। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (প্রচলিত আইন অনুযায়ী ৩০ বছর) দেয়া হয়। ১, ২ ও ৩ নম্বর অপরাধে তাকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় আলাদা করে এ সাজা তাকে ভোগ করতে হবে না। ৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। অপরাধে সংশ্লিষ্টতার জন্য ঘটনাস্থলে অভিযুক্তের উপস্থিতি অপরিহার্য নয় বলেও রায়ে বলা হয়। এ রায়ে প্রসিকিউশন এবং আসামি দুই পক্ষই অসন্তোষ প্রকাশ করে। আসামি পক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করবে বলে জানায়। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রায়ে হতাশা ব্যক্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বাইরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাও রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, রায়ের প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে জামায়াত।

এদিকে, কাদের মোল্লার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার শাহবাগ মোড়ে একটি বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয় যার প্রধান দাবী ছিল, সকল যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে আন্দোলন সাড়া দেশে ছড়িয়ে পরে। হাজার হাজার জনতা শাহবাগ একত্র হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ও এই আন্দোলনকে ২০১৩-র শাহবাগ আন্দোলন বলা হয়। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জনতা একনাগাড়ে শাহবাগ অবস্থান করতে থাকে এবং ঘোষণা দেয়, যতক্ষন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের সব্বোর্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত তারা শাহবাগ ত্যাগ করবেন না। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে জামায়াতও একটি আন্দোলন শুরু করে যাদের দাবি ছিল, কাদের মোল্লাসহ তাদের দলের সমস্ত নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রথমদিকে ২০০০ সালে গঠিত চার দলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতকে সমর্থন করে। বিএনপি শাহাবাগ আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করে, সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের সব্বোর্চ শাস্তির দাবির এই আন্দোলন থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত নয়। শাহবাগ বিক্ষোভের ফলশ্রুতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাব কাদের মোল্লার সদস্যপদ বাতিল করে। জামায়াতের সদ্যসরাও বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে এবং তারা এই বিচারকে সরকারের রাজনৈতিক বিচার বলে অবহিত করে। তারা তাদের আন্দোলনকে ঢাকার ধর্মঘট বলে উল্লেখ করে ও ঢাকার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সর্বস্তরের জনতার দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন সংশোধন করলে ৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। এদিকে আসামীপক্ষও বেকসুর খালাস চেয়ে আপিল করে। ১ এপ্রিল আপিল শুনানি শুরু হয়ে ২৩ জুলাই তা শেষ হয়।

আপিল আইভাগের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষসহ দেশের আপামর জনতা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এক প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক মামা রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এরা বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে। এদের কোনো ক্ষমা নেই। এ কারণেই যাবজ্জীবনের রায় প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আজ বড্ড শান্তি পেয়েছি। কবি মেহেরুন্নেসাকে মাথা কেটে ঝুলিয়ে দিয়েছে তার বাহিনী, পল্লবকে ধরে আঙ্গুল কেটে দিয়েছে। আমি মহাআনন্দিত। প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। Justice delay, Justice Done. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেত চাই, নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চাইলে দ্রুত রায় কার্যকর করুন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে বলতে চাই, আপনার কারণে এই রাজাকার-আলবদরদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়েছে। আপনাকে কোর্টে দাঁড়িয়ে জনতার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’

এদিকে শাহবাগে রায় ঘোষনার আগে থেকই জড়ো হতে শুরু করেন গণজাগরণকর্মীরা। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ড. ইমরান এইচ সরকার বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস এ রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ না থাকায় যাবজ্জীবন ঘোষনার পর ভি-চিহ্ন দেখিয়েছিল কাদের মোল্লা। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠীত হয়েছে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হল। বাকি যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলোও দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বাচ্চু রাজাকারকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক যুদ্ধাপরাধী মইনুদ্দীনকেও ফিরিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৫মে আমরা ছিলাম হতাশ, আর আজ আমরা আনন্দিত।’

এদিকে এ রায়ের কারণে রাজধানীতে গত সোমবার থেকেই নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু সড়ক। এছাড়া গোয়েন্দা তত্পরতাও বাড়ানো হয়েছে লক্ষ্য করার মতো।  অপরদিকে রায় ঘোষনার কিছু পরই রিভিউ পিটিশনের আবেদন করেছে কাদের মোল্লার আইনজীবীরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ