শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনএকবছরেও হয়নি বন্দরে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ঠিকাদার নিয়োগ

একবছরেও হয়নি বন্দরে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ঠিকাদার নিয়োগ

নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর গত হতে চললেও চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং কাজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে দেন দরবার এবং অভিযোগ উঠলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। আর এই সুযোগে পুরানো প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পণ্যের সিংহভাগই আসে কন্টেনার বোঝাই করে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য ভর্তি কন্টেনারগুলোর একটি অংশ ওভাবেই বিভিন্ন ফ্যাক্টরি বা আইসিডিতে চলে যায়। আবার বিরাট একটি অংশের পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের ভিতর খালাস করে ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়। পণ্য বের করে নেয়ার পর খালি কন্টেনারটি নিয়ে আমদানিকারকের আর মাথাব্যাথা থাকে না। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে ইয়ার্ডে ফেলে রেখে চলে যায়। বন্দরের অভ্যন্তরে প্রতিদিন এই ধরনের বিপুল সংখ্যক খালি কন্টেনার বিভিন্ন ইয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ইয়ার্ডে নিয়ে রাখতে হয়। এমটি কন্টেনার হ্যান্ডলিং নামের এই কাজ বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে সম্পন্ন করে। প্রায় পাঁচ বছর আগে এমটি কন্টেনার হ্যান্ডলিং কাজের টেন্ডার আহ্বান করে এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। গতবছরের (২০১৭) জুন মাসে ওই টেন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর নতুন কন্ট্রাক্টে কাজ করানোর কথা ছিল। কিন্তু নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডারে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যাতে হাতে গোনা দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কেউ অংশ নিতে না পারে। ইতোপূর্বেকার টেন্ডারে বার্ষিক চার কোটি টাকা টার্নওভার আছে এমন প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারলেও এবারকার টেন্ডারে শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যে, বন্দরের এই টেন্ডারে অংশ নিতে হলে বার্ষিক কমপক্ষে চৌদ্দ কোটি টাকা টার্নওভার থাকতে হবে। এই একটি মাত্র শর্তের কারনে বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে এমন বহু প্রতিষ্ঠানই ছিটকে পড়ে। বিশেষ করে সাইফ পাওয়ারটেক, এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ, এ এন্ড জে শিপিং এবং এম এইচ চৌধুরী শিপিং লাইন্স ছাড়া অন্য কেউ টেন্ডারে অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হয়। বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়।

পরবর্তীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বার্ষিক টার্নওভার দশ কোটি টাকা আছে এমন প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডারে অংশগ্রহনের সুযোগ দিয়ে এমটি কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর টেন্ডার আহ্বান করে। গত ৪ জুন এই টেন্ডার দাখিল হয়েছে। কিন্তু এক মাসেরও বেশি গত হলেও টেন্ডারের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। অপরদিকে প্রায় পাঁচ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানই দায়িত্ব পালন করছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াকে ইচ্ছেকৃতভাবে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক বার্থ অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, এই টেন্ডার আহ্বান করার কথা ছিল এক বছরেরও বেশি আগে। নতুন কন্ট্রাক্টে কাজ শুরুর কথা ছিল গত বছরের পহেলা জুলাই থেকে। অথচ এক বছরেরও বেশি গত হলেও এখনো নতুন কন্ট্রাক্টে ঠিকাদার নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। পুরো বিষয়টিকে ইচ্ছেকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লেগে গেছে। নতুন করে আহুত টেন্ডার নিয়েও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) অভিযোগ করা হয়। এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজই এই অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ শুনানির জন্য আগামীকাল তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বন্দরের উক্ত কর্মকর্তা বলেন, ওই শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই টেন্ডার নিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। তাই আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ