মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

পুঁজির জন্য সরকারের দেওয়া অর্থ সরবরাহসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা সম্মেলন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের শেখ হাসিনা বলেন, “কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। “লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দেয়। আমরা চাই তরুণ সমাজ নিজের পায়ে নিজেই দাঁড়াবে। নিজে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে অন্যকেও সুযোগ করে দেবে।” ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিজিটাল সেন্টারগুলোর প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তা নিয়ে ‘ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তা সম্মেলন’র আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প। সারা দেশের সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

তরুণ উদ্যোক্তদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। অর্থও আমাদের রয়েছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে যে কোনো যুবক জামানতবিহীন ঋণ নিতে পারে। “নিজের কাজ নিজেই করতে পারবে। মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে। অন্যের মুখ ঝামটা খেতে হবে না। তোমরাই পারবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।” ২০০৮ সালে ভোটের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

ক্ষমতায় আসার পরই গ্রাম পর্যায়ে তথ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। এ কার্যক্রমের সূচনা লগ্নের ওপর আলোকপাত করে উদ্যোক্তা সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, “২০০৮ সালে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম তখন অনেকেই মনে করেছিলেন এটা সম্ভব নয়। তবে আজ আর কেউ বলে না, এটা কীভাবে হবে। “শুরুর দিকে চিন্তা ছিল প্রতিটি গ্রামে আমরা সাইবার ক্যাফে করবো; যেখান থেকে মানুষ তথ্য সেবা নিতে পারবে। সেটা হয়নি। তবে ২০০৯ সালে আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। “যদিও তিন বছরের মধ্যে এটা করার কথা ছিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে এ সেবা আমরা পৌঁছে দিতে সক্ষম হই।” বাংলাদেশে এখন চার হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। এছাড়া ৩২১টি পৌরসভা ও ১১ সিটি কর্পোরেশনের ৪০৭টি ওয়ার্ডেও এ  সেন্টার বসেছে।

এসব কেন্দ্র থেকে ৬০ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে পারছেন নাগরিকরা, যার মধ্যে জন্ম নিবন্ধন, বিদেশে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা রয়েছে। গত চার বছরে এসব ডিজিটাল কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সেবা দানের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটিতে পৌঁছেছে। জন্ম নিবন্ধন হয়েছে সাত কোটি মানুষের। আর এসব ডিজিটাল সেন্টার থেকে মোট আয় হয়েছে ১৪০ কোটি। এসব তথ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। একাধিক উদ্যোক্তা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

জয় বলেন, “এর আগে আমি রংপুর গিয়েছিলাম। সেখানে ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বললাম- তাদের কেউ কেউ আমাকে জানালেন, তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছে।এই উত্তরাঞ্চলে পাঁচ ছয় বছর আগে মঙ্গা হত, খাদ্যের অভাবে মানুষ প্রাণ হারাত। এখন মঙ্গা তো দূরের কথা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে বসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছে তারা।  অনুষ্ঠানে এক উদ্যোক্তা জানান, তাদের ইন্টারনেটের গতি কম এবং অনেক ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধি তাদের ‘মেনে নিতে’ পারছেন না বা ‘ভালো চোখে’ দেখছেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় দুজনেই ইন্টারনেটের ধীরগতির কথা স্বীকার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে তা দ্রুত করার প্রতিশ্রুতি দেন। শেখ হাসিনা বলেন, “ইন্টারনেটের গতি সময়োপযোগী না। তবে দেশের জনগণ পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের পুনর্নির্বাচিত করেছে। এজন্য অনেক অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারবো আমরা।”

জয় বলেন, “তবে এটা বাস্তব যে, ইন্টারনেটের স্পিডের দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। এদিকে আমরা নজর দিয়েছি। সরকারের এই মেয়াদের মধ্যেই ফাইবার অপটিক কেবল পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যাবে।” অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক জানান, ২০১৬ সালের মধ্যে দেশের এক হাজার ইউনিয়নে এবং ২০১৭ সালের মধ্যে সবে ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে হাইস্পিড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে। এদিকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যাতে ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি সতর্ক করে দিতে চাই, যারা জনপ্রতিনিধি মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কেউ যেন আমার এই ডিজিটাল সেন্টারে শিং দিয়ে গুঁতোগুঁতি না করে। যারা উদ্যোক্তা, প্রথম শুরু করেছে তাদের কেউ সরাতে পারবে না। তাদের স্থান অবশ্যই সেখানে থাকবে।” ডিজিটাল উদ্যোক্তারা বর্তমানে যে কাজগুলো করছে এর পাশাপাশি তাদের কাজের পরিধি আরো বাড়ানো হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন শুধু জন্ম নিবন্ধনই নয়, আগামীতে মৃত্যু নিবন্ধনও এসব ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ