মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিজামালপুর জেলা স্কুল মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ...

জামালপুর জেলা স্কুল মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে

জামালপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেলা স্কুল মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনায় ৩২টিরও বেশি চেয়ার স্থাপনের জায়গা রেখে এ মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। তবে, জনসভার আয়োজকদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা বড় করে চলেছে গুমোট আবহাওয়া। অবশ্য, শুক্রবার বিকেলে আকাশ মেঘলা থাকলেও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত জেলার কোথাও বৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার জামালপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেলা স্কুল মাঠে জনসভার আয়োজন করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন খালেদা। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং দ্রুত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। জনসভায় যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে জামালপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন খালেদা।

জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপিসহ স্থানীয় জোট নেতাদের উপস্থিতিতে মঞ্চের শেষ গাঁথুনি দিয়ে চলেছেন নির্মাণকর্মীরা। মঞ্চে যেন প্রধান অতিথি খালেদা জিয়ার আসনসহ ৩২টিরও বেশি আসন রাখা যায় সেভাবে তৈরি করা হচ্ছে। তবে, মঞ্চ নির্মাণে সন্তোষ প্রকাশ করলেও মাঠের দিকে তাকাতেই মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে আয়োজক নেতাদের। শুক্রবার বিকেলে বৃষ্টি না হলেও আগের কয়েক দফা বর্ষণের কারণে মাঠ কর্দমাক্ত রয়ে গেছে। পানি জমে না থাকলেও পায়ের গোড়ালি সমান কাদা জমে থাকায় কর্মী-সমর্থকদের দাঁড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে নেতাদের। অবশ্য, নেতাকর্মীদের অবস্থানের জন্য স্বাভাবিক করতে মাঠের পাশে ইতোমধ্যে বালু এনে জমা রাখা হয়েছে। শনিবার সকালেই বালু ফেলে মাঠ কর্দমামুক্ত করার কথা জানানো হচ্ছে।

এছাড়া, শহরের মূল সড়ক থেকে মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছানোর সড়কেও কাদা জমে থাকায় খালেদার গাড়িবহরের চিন্তায় কপাল চাপড়াতে হচ্ছে আয়োজকদের। যদিও মূল সড়ক থেকে মঞ্চে পৌঁছানোর জন্য ইট বিছিয়ে প্রায় ১০-১২ ফুট চওড়া ও ২৫০ মিটার লম্বা একটি নতুন পথ বানানো হচ্ছে, তথাপি বৃষ্টি হলে এই আপাত সমাধানও অকার্যকর হওয়ার শঙ্কা কাজ করছে নেতাকর্মীদের মনে।

বিএনপিসহ জেটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও মাঠের পরিস্থিতি ও গুমোট আবহাওয়ার কারণে অজানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। বিশেষত বৃষ্টি হলে একেবারে দাঁড়ানোর অনুপযোগী হয়ে যাবে স্কুল মাঠ। আর বৃষ্টির কারণে অন্য জেলা বা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেমন নেতাকর্মীদের আগমন নিয়ে দুর্ভাবনা থাকবে, তেমনি সমাবেশ সফলের ব্যাপারে থাকবে উদ্বেগও। যদিও কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।

এদিকে, খালেদার আগমন ঘিরে উৎসবের আমেজ লেগেছে জামালপুরে। জেলা শহর ছাড়াও পুরো জামালপুরকেই উৎসবকেন্দ্রের মতো সাজিয়ে নিয়েছেন বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। জনসভা সফল করতে জেলা বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি ঘাম ঝরাচ্ছেন শহর সাজানোর ব্যস্ততায়। পুরো ‍জামালপুর শহর ঘুরে দেখা গেছে,  শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও সড়কের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক সাজে সজ্জিত তোরণ লাগানো হয়েছে। ব্যানার, ফেস্টুনে ভরে ফেলা হয়েছে শহরের প্রতিটি অলি-গলি।

জেলা বিএনপির দাবি, শহরজুড়ে কয়েক হাজার ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে সহস্রাধিক তোরণ। অন্তত ২০-৩০ হাত পরপর তোরণ লাগানো হয়েছে। নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দাবি করছেন, সাজগোজের দিক থেকে খালেদার গত একবছরের সবগুলো জনসভাকে ছাড়িয়ে গেছে জামালপুরের আয়োজন। জনসমাগমও সবগুলো জনসভাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শহরের প্রধান ছয়টি প্রবেশমুখ রেলগেট মোড়, দয়াময়ী মোড়, ফৌজদারি মোড়, পাঁচ রাস্তার মোড়, ব্রিজ সংলগ্ন মোড়, বিজিবি ক্যাম্প মোড়সহ প্রায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তোরণ সাজানোর পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের রঙিন পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা নেতাকর্মীদের শুভকামনার ব্যানার-ফেস্টুনও। তবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপেক্ষাকৃত কমই দেখা গেছে।

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে শুভেচ্ছা সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি জনসভা সফল করতে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, কৃষক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত আহ্বানের ব্যানার-ফেস্টুনেও ছেয়ে গেছে জামালপুর শহরের রাজপথ আর মাঠঘাট। খালেদার আগমনে ব্যানার-ফেস্টুন ঝোলাতে পদবিধারীদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরাও। তারাও জনসভা সফল করতে এবং খালেদা-তারেককে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন সাজিয়েছেন শহরজুড়ে। রঙিন তোরণে-তোরণে সাজানো জামালপুর শহরে প্রবেশে যে কেউ কোনো উৎসবকেন্দ্রে প্রবেশ করছেন বলে বিভ্রান্ত হতে পারেন।

শনিবারের জনসভার আয়োজন নিয়ে আলাপকালে জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম বলেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। নেতাকর্মীদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। শনিবারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আশা করছি। জামালপুর জেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী শেরপুরসহ নিকটস্থ অন্য জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা দলে দলে জনসভায় যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ফরিদুল কবির। সমাবেশ সফল করতে জেলা শহরছাড়াও পুরো জামালপুরজুড়ে চলছে অবিরাম মাইকিং। মাইকিংয়ে জনসভায় দলে দলে যোগ দিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এদিকে, বিএনপি জোটের জনসভা ঘিরে প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে আলাপকালে জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, জনসভাকে ঘিরে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা পুলিশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ