সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েচট্টগ্রাম বিভাগদুর্ভোগ মাড়িয়ে ঘরে ফেরা শুরু: বগি সংকটে রেলের অবস্থা নাজুক, মহাসড়কের বেহাল...

দুর্ভোগ মাড়িয়ে ঘরে ফেরা শুরু: বগি সংকটে রেলের অবস্থা নাজুক, মহাসড়কের বেহাল দশা, পথে পথে যানজট

যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছিলেন, ২০ জুলাইর মধ্যে দেশের সব সড়ক মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। ঈদে ঘরমুখী মানুষ আশা করেছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রী কথা রাখবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখতে পারেন নি। গতকাল নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার শুরুতে হাজারো মানুষ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘাটে ঘাটে দুর্ভোগে পড়েছেন। কুমিল্লা এলাকায় চল্লিশ কিলোমিটারেরও বেশি যানজটে নাকাল হয়েছে ঘরে ফেরা হাজারো মানুষ। রেলওয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অতিরিক্ত বগি এবং স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্ঞ্ঝাটে প্রিয়জনের কাছে পৌঁছতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু গতকাল ঈদ যাত্রার শুরুতে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে। ট্রেন যাত্রা করলেও বগি সংকটে অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছিল। পুলিশ বলেছিল, কোথাও যানজট হবে না। সেক্টর এবং সাব সেক্টরে ভাগ করে সব ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকাকে যানজট মুক্ত রাখা হবে। কিন্তু মহাসড়কের বেহাল দশায় পুলিশের সব উদ্যোগই ভেস্তে গেছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষকে যথারীতি নাকাল হয়ে পথে নামতে হয়েছে।

চাঁদ দেখা গেলে আগামী মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। সোমবার থেকে শুরু হবে ঈদের তিন দিনের ছুটি। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদের অঘোষিত ছুটি শুরু হয়েছে। ঘরে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। আজ এবং আগামীকাল সরকারি ছুটি। রোববার একদিনের ঐচ্ছিক ছুটি ম্যানেজ করে হাজারো মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে গতকালই যাত্রা করেছে। আবার কেউ কেউ আজ সকালে পথে নামবে। গত ২০ জুলাই দেয়া ট্রেনের অগ্রিম টিকেট নিয়ে গতকাল পাঁচ হাজারেরও বেশি যাত্রী ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে। কেউ পরিবারপরিজনের বিশাল বহর নিয়ে, কেউবা একাকী। এদিকে অনেক আগেই নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রমজান ও ঈদের ছুটি থাকায় অনেকই পরিবার পরিজনকে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গতকাল নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এবং বাস কাউন্টারগুলোতে বেজায় ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। শত শত যাত্রী পরিবার পরিজন নিয়ে ট্রেন এবং বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। নগরী ফাঁকা হতে শুরু করেছে।

রেলমন্ত্রী মজিবুল হক অতিরিক্ত বগি সংযোজনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু গতকাল ট্রেন যাত্রার সময় অতিরিক্ত বগি সংযোজিত হয়নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে আন্ত:নগর ট্রেনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম কোচ নিয়ে যাত্রা করেছে। ওয়ার্কশপ থেকে যথাসময়ে বগি মেরামত হয়ে না আসায় অতিরিক্ত বগি সংযোজন সম্ভব হয়নি বলে রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঢাকাচট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস, গোধূলি ও তূর্ণা নিশীতায় ১৮টি করে কোচ থাকার কথা থাকলেও সংকটের কারণে ১৭টি করে চলতো এতোদিন। তবে গতকাল এসব ট্রেন ১৮টি বগি নিয়ে চলাচল করলেও অনেকগুলো ট্রেনই ১৭টি বগি নিয়ে যাত্রা করেছে। ঈদ উপলক্ষে গত জুন মাস থেকে বগি মেরামত শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৬৫ কোচ মেরামত করা হয়েছে। অথচ আশা করা হয়েছিল অন্তত আশিটি কোচ মেরামত করা হবে। অপরদিকে মেরামত করা বগিগুলো দ্বিতীয় শ্রেণীর। তাই এগুলো আন্তঃনগর ট্রেনের খুব বেশি কাজে আসছে না।

ঈদের অগ্রিম টিকিটে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী ও তূর্ণা এক্সপ্রেস, চট্টলা এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি, সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস, চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। এই ভিড় আজ থেকে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করে রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, ঈদের ঘরমুখো মানুষের প্রথম দিনের যাত্রা সম্পন্ন হলেও ক্রমাগত যাত্রীর চাপ বাড়বে। বাড়তি যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হবে বলেও তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি রুটের রেলপথও নড়বড়ে। তাই ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। এতে ট্রেনের সময়সূচির বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় না ঘটলেও অধিকাংশ ট্রেন ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

ও পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেনসহ আগামী ২৬ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম থেকে ৯ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে।

এদিকে গতকাল ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ছিল। গতকাল দেয়া হয়েছে ২৮ তারিখের টিকিট। অগ্রিম টিকিটের জন্য আগের দিন রাত থেকেই স্টেশনে ভিড় করেছে হাজার হাজার মানুষ।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ২৮ জুলাইয়ের সব টিকিট।

গতকাল অসংখ্য যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। যাত্রীদের পক্ষ থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করা হলেও স্টেশন ম্যানেজারের দাবি অধিকাংশ যাত্রীই টিকিট পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল টিকিটের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। রাত থেকেই স্টেশনে টিকিটের জন্য যাত্রীরা ভিড় করেছেন। তিনি জানান, যাত্রীদের চাহিদা বেশি থাকায় দুপুর দেড়টার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

অপরদিকে সড়ক পথের অবস্থা নাজুক। গতকাল বাসে চড়ে বহু মানুষ নগরী ছেড়েছে। কিন্তু পথে পথে যানজটে নাকাল হতে হয়েছে মানুষকে। গতকাল নগরীর বাস কাউন্টারগুলো থেকে শত শত মানুষ গ্রামের পথে যাত্রা করেছেন। তবে সীতাকুণ্ড এবং কুমিল্লা এলাকায় যানজটে নাকাল হয়েছে হাজারো মানুষ। গতকাল সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় যানজট লেগে ছিল। কুমিল্লার গৌরিপুর থেকে সেনানিবাস পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার যানজট লেগেছিল সারা দিন। হাজারো মানুষকে পথের নানা বিড়ম্বনা সয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।

গতকাল হানিফ এন্টারপ্রাইজের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা চট্টগ্রাম থেকে সময়মতো গাড়ি ছাড়ছি। এসব গাড়ি ঠিকঠাক ভাবে গন্তব্যে পৌঁছে আবার ফেরৎ আসতে পারলে পরবর্তীতে বাসের সিডিউল ঠিক থাকবে। কিন্তু গাড়ি যদি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে আবার ফেরৎ আসতে না পারে তাহলে কোন পরিবহনই সিডিউল রক্ষা করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের ভোগান্তি সহ্য করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

শ্যামলী পরিবহনের একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। রাস্তার অবস্থা ভালো নয়। গাড়ি কখন যাবে আর কখন আসবে তার উপরই পরবর্তী যাত্রা নির্ভর করবে। তিনি গতকাল থেকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রথম দিন খুব বেশি ঝামেলা নেই। তবে আজ থেকে পুরোদমে যাত্রীর চাপ শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ