বুধবার, মে ১, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়শীতলক্ষ্যায় আরেকটি লাশ, বিজিবি মোতায়েন

শীতলক্ষ্যায় আরেকটি লাশ, বিজিবি মোতায়েন

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের শান্তিনগর ও চর ধলেশ্বরী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার মোর্শেদ জানান, সকালে উদ্ধার করা লাশটি শনাক্ত করা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশটি নজরুলের বন্ধু লিটনের, নাকি গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের তা শনাক্ত হয়নি। এ নিয়ে দুই দিনে শীতলক্ষ্যা থেকে সাতটি লাশ উদ্ধার করা হলো। পুলিশ জানায়, আজ উদ্ধার করা অর্ধগলিত লাশটির হাত-পা ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। মুখমণ্ডল বিকৃত। পুরো শরীর কোপানো। লাশ ইটভর্তি বস্তা দিয়ে ডোবানো ছিল।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে বিজিবির ২০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামের সমর্থকেরা সকালে আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাঁরা খুনিদের বিচার দাবি করছেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে গত রোববার একসঙ্গে সাত ব্যক্তি অপহূত হন। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিম।

গতকাল দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নজরুল, চন্দন কুমার, মনিরুজ্জামান, তাজুল ও ইব্রাহিম। অপর লাশটি নজরুলের বন্ধু লিটনের, নাকি গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের তা শনাক্ত হয়নি। আজ আরেকটি লাশ পাওয়া গেল।

নজরুল ইসলাম অপহরণের ঘটনায় আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে কেউ ধরা পড়েনি। নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীসহ সবাইকে অপহরণ করেছে নূর হোসেন, ইয়াসিন ও তার ক্যাডাররা। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করেনি।

একে একে ছয়জনের লাশ পাওয়ার পর গতকাল নারায়ণগঞ্জ শহরে স্বজন-শুভানুধ্যায়ীদের কান্নার রোল পড়ে যায়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। পরিবহনের কাউন্টার ভাঙচুর করে। পেট্রলপাম্পে আগুন দেয়।

গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকার গুচ্ছগ্রাম চরের পাশে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা-মেঘনা নদীর মোহনাসংলগ্ন (মুন্সিগঞ্জের মোড়) এলাকায় দুর্গন্ধ পায় স্থানীয় ব্যক্তিরা। সেই সূত্রে তারাই প্রথম শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে এবং পুলিশকে খবর দেয়। যেখানে লাশগুলো মিলেছে, তার অপর পারটি মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা।

বেলা তিনটায় প্রথমে একটি লাশ পানি থেকে তোলে বন্দর থানার পুলিশ। খবর দেওয়া হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। দাড়ি আর পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি দেখে লাশটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামের বলে শনাক্ত করেন তাঁর ছোট ভাই আবদুস সালাম। নজরুলের হাত-পিঠমোড়া করে এবং পা বাঁধা ছিল। লাশের পেট ছিল চেরা এবং লাশ যাতে ভেসে না ওঠে সে জন্য ইটভর্তি দুটি বস্তা লাশের সঙ্গে বাঁধা ছিল।

দুর্গন্ধ সত্ত্বেও নদীর পারে ভিড় জমায় শত শত মানুষ। দুর্গন্ধের উত্স খুঁজে ওই লাশের কিছু দূরে এলাকাবাসী আরও পাঁচটি লাশের সন্ধান দেয়। একে একে উদ্ধার করা হয় ওই পাঁচ লাশও।

নদী থেকে লাশগুলো তোলার সময় শান্তিনগরে ছুটে যাওয়া স্বজনেরা ছুটছিলেন লাশ দেখতে। প্রতিটি লাশই ফুলে উঠেছে। পরনের কাপড়, বিশেষ চিহ্ন আর শরীরের গড়ন দেখে স্বজনেরা লাশ শনাক্ত করেন। লাশ দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তাঁরা।

সব লাশের হাত-পা ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা, পেট চেরা। লাশের সঙ্গে বাঁধা থাকা প্রতিটি সিমেন্টের বস্তায় ১৬টি করে নতুন ইট ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে চৌকোনা করে বাঁধা ছিল। ইটগুলোতে লেখা ‘এমবিবি’। নজরুলের পর শনাক্ত হয় তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপনের লাশ। শনাক্ত করেন তাঁর ভাই রিপন। স্বপনের ডান হাতের পাঁচ আঙুল কাটা ছিল। নজরুলের আরেক বন্ধু তাজুল ইসলামের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাই আনিস। এরপর অপহূত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর দুই ভাগনে আবু বকর ও সাঈদ।

উদ্ধার করা অপর দুটি লাশের পরিচয় নদীর তীরে শনাক্ত করা যায়নি। পরে ছয়টি লাশই নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে আঙুলে আংটি ও হাতের ব্রেসলেট দেখে চন্দন সরকারের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাগনে আইনজীবী প্রিয়তম দেব এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। অপর লাশটি শনাক্ত করা যায়নি। বন্দর থানার ওসি আক্তার মোর্শেদ জানান, শনাক্ত না হওয়া লাশটির ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে।

রাতে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা আফাদুজ্জামান জানান, এই ছয়জনের প্রত্যেকেরই মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার পর তাঁদের পেট চিরে পানিতে ফেলা হয়েছে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাত ১১টার দিকে নজরুলের প্রথম জানাজা শেষে লাশ একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। চন্দন সরকারের লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন।

রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদালত থেকে একটি মামলায় জামিন নিয়ে নজরুল তিন সঙ্গীকে নিয়ে নিজের গাড়িযোগে ঢাকার দিকে আসার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে গাড়ি ও গাড়িচালকসহ অপহূত হন। প্রায় একই সময় একই সড়ক থেকে গাড়ি ও গাড়িচালকসহ অপহূত হন আইনজীবী চন্দন সরকার। নজরুলের গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে এবং আইনজীবীর গাড়ি রাজধানীর নিকেতন থেকে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ