বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নজরুল-চন্দনসহ ছয়জনের লাশ শীতলক্ষ্যায়

নজরুল-চন্দনসহ ছয়জনের লাশ শীতলক্ষ্যায়

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জের শান্তিনগর ও চর ধলেশ্বরী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বুধবার বিকেলে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, স্বপন, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ অপহৃত ৬জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

লাশ ৫টি এক কিলোমিটারের মধ্যে পায়ে ২৪টি করে ইটবোঝাই সিমেন্টের ব্যাগ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় নদীতে ডোবানো ছিল। পা ছিল দড়ি দিয়ে বাঁধা। হাত পেছনে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে গলার কাছে বাঁধা ছিল। পেট ধারালো অস্ত্র দিয়ে সোজাসুজি ফাঁড়া ছিল।

বুধবার বিকেলে প্যানেল মেয়র নজরুলের ভাই আব্দুস সালাম ও স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি নজরুলের লাশ শনাক্ত করেন। এছাড়া নজরুলের সঙ্গেই অপহৃত স্বপনের লাশ তার ছোট ভাই রিপন এবং তাজুল ইসলামের লাশ তার বোন শিরীন আক্তার শনাক্ত করেন।

অপহৃত আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে। এছাড়া নজরুল ইসলামের সহযোগী লিটনের লাশ তার স্বজনেরা শনাক্ত করলেও আরেকটি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। ময়না তদন্তের জন্য রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৬টি লাশই নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় মৌচাক ঈদগাহ মাঠে নজরুলের জানাজা হবে।

এর আগে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকার শীতলক্ষ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের অর্ধগলিত ৪টি লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে আরও ২টি লাশ পাওয়া যায়। উদ্ধার অভিযান সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে।

লাশ উদ্ধার করতে যাওয়া বন্দর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোকাররম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এলাকাবাসীর খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করছি। প্রতিটি লাশই ইট দিয়ে বাঁধা ছিলো। যেনো লাশ ভেসে উঠতে না পারে তারজন্যই দুর্বৃত্তরা এটি করে থাকতে পারে। চেহারা বোঝা যাচ্ছেনা। পাঞ্জাবী-পাজামা পরা লাশটি প্রথমে শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। আর এটিই প্যানেল মেয়র নজরুলের বলে শনাক্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুপুরের পর থেকে লাশগুলো ভেসে উঠতে শুরু করে। প্রতিটি লাশের হাত-পা বাঁধা ছিল। মুখ পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিলো। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।

এদিকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে উদ্ধারস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শহিদুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) আজিমুল আহসান, বন্দর থানার ওসি আকতার মোর্শেদ।  বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকতার মোর্শেদ জানান, শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভেসে যাওয়ার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬টি লাশ উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা এসে লাশগুলো শনাক্ত করেন।

এদিকে প্যানেল মেয়র নজরুলের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ। তার সমর্থকেরা সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। তারা গাড়ি ভাঙ্চুর করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৭ এপ্রিল রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের(নাসিক) সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নজরুলের সঙ্গে অপহৃত হয়েছিলেন- তার প্রাইভেটকারের চালক জাহাঙ্গীর, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগকর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, লিটন ও তার গাড়ির ড্রাইভার।

জানা যায়, ওইদিন দুপুর আড়াইটায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলার হাজিরা শেষে সাদা রঙের এক্স করোলা(ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৯১৩৬) দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ফিরে যাওয়ার পথে শিবুমার্কেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতে নজরুলের গাড়িটি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে শালবনের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে তাদের কোনো সন্ধান মিলছিল না।

একইদিন আদালতপাড়া থেকে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ২জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। চন্দন সরকারেরও গাড়ি পরে ঢাকার নিকেতন থেকে উদ্ধার  করে লিশ। তাদেরও হদিস বুধবার পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না। আর এ দুটি অপহরণের ঘটনায় ফুঁসে ওঠে নারায়ণগঞ্জ। নজরুল অপহরণের পর প্রশাসনের পক্ষে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাবের সিও, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ