মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আকস্মিক ধর্মঘটে অসহায় রোগীরা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আকস্মিক ধর্মঘটে অসহায় রোগীরা

ctg docotorনাক ও কানের সমস্যায় ভুগছেন কক্সবাজারের উখিয়ার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ। মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিবিরের হরতাল উপেক্ষা করে বন্দরনগরীতে এসেছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। এজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নীলকান্ত ভট্ট‍াচার্যের চেম্বারে অপেক্ষমাণ রোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তও করে রেখেছিলেন আগেই। আর সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা থেকে নাতিকে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা.ওয়াজিউর রহমানকে দেখানোর জন্য এসেছিলেন জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। নির্ধারিত সময় মঙ্গলবার বিকেলে ডাক্তার দেখাতে এসে চরম বিপাকে পড়েন তারা। চট্টগ্রামের বেসরকারী সিএসসিআর হাসপাতালে এসে শুনেন, ধর্মঘটের কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আজ (মঙ্গলবার) রোগী দেখবেন না।

চিকিৎসকদের আকস্মিক এ ঘোষণায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মাহবুব উল্লাহ কিংবা জাকিরের মত দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা। আর অসহায় হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। অস্ত্রোপচারের পর ভুলে শরীরে ভেতর নিডেল রেখে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুরমান আলীর জামিন বাতিল করে সোমবার কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। আদালতের এ নির্দেশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহবান করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা প্রাইভেট চেম্বার ও ক্লিনিকে কোন রোগীকে চিকিৎসা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এ কর্মসূচি নিয়ে চট্টগ্রামের সর্বস্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ এ কর্মসূচীকে দাবি আদায়ের নামে নৈরাজ্য বলে অভিহিত করেছেন। আইনজীবীরা বলছেন, এ কর্মসূচি ঘোষণা করে চিকিৎসকরা একদিকে আদালতের আদেশের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন আবার অন্যদিকে রোগীদের জিম্মি করেছেন।  তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ বিষয়ে বলছেন অন্য কথা। তাদের বক্তব্য, এ ধর্মঘটের কারণে তারা বরং নিজেদের অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ করেছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং রোগ নিরুপণী কেন্দ্র ঘুরে  দেখা গেছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ে। তাদের কাছে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। পাশাপাশি ভর্তি হওয়া অনেক রোগীকে হাসপাতাল ছাড়তে দেখা গেছে।

নগরীর অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী হাসপাতাল সিএসসিআর ক্লিনিকে অবস্থিত নিজস্ব চেম্বারে বিভিন্ন রোগে বিশেষজ্ঞ অন্তত ৩০ জন চিকিৎসক রোগী দেখেন। কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মাহবুব উল্লাহ ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হরতালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে এসেছি। অথচ ডাক্তাররা ধর্মঘটের নামে আমাদের মত অসহায় রোগীদের সময় দিয়েও দেখতে আসলেন না। এটা কোন ধরনের নৈতিকতা ?’ জাকির হোসেন বলেন,‘অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ঠুনকো অজুহাতে ডাক্তাররা রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা কি আমাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝে না?’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থিত পপুলার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড। এ রোগ নিরুপণী কেন্দ্রে বিভিন্ন ফ্লোরে নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখেন অন্তত অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এরকম একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সুজা। তার কাছে আসেন ফটিকছড়ির বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি জানতে পারেন, আজ আর ডাক্তার স্যার রোগী দেখবেন না। এ খবর শুনে হতাশ হয়ে পড়েন এ বৃদ্ধ।

প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ফোন করে রোগী দেখবেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা তা রোগীদের অবহিত করেছি।’ চট্টগ্রাম রয়েল হসপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এ সিদ্ধান্তের কারণে আমরা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছি। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা দেব বুঝে উঠতে পারছি না।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধর্মঘট চলাকালে যদি কোনো রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যান, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে।’

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. রবিউল করিম বলেন, ‘আমরা আইনী প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নয়। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু জামিনযোগ্য মামলায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জামিন বাতিল করে আদালতে প্রেরণ করা দুর্ভাগ্যজনক।’

ডা. রবিউল করিম বলেন,‘এ ধর্মঘট প্রতীকী প্রতিবাদ। আমরা সন্ধ্যায় রোগী দেখে অর্থ উপার্জন করি। এখন এ ধর্মঘটের কারণে তা বন্ধ হয়ে পড়বে।’ চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন,‘চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলায় যে কোন সময় আদালতের কাছে জামিন চাওয়ার পথ খোলা আছে। যে কোন সময় তারা জামিন চাইতে পারেন।’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ