শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিউপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাঠে নেই আলোচিত কিংসপার্টির কোনো প্রার্থী। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ছায়াসঙ্গী হিসেবে ভোটে সরব ছিল কিংসপার্টি খ্যাত দলের প্রার্থীরা। এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতারা। অর্থাৎ এবারের উপজেলা ভোটে ‘স্বতন্ত্র কৌশলে’ লড়ছেন শুধু আওয়ামী লীগ নেতারা।

প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১১ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। তবে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া ছাড়া নয় উপজেলায় ভোটের আমেজ বিরাজ করছে।

প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ মে। এই ধাপে মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন ২৭ প্রার্থী। প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা।

মিরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৫ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান (ঘোড়া), জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন (কাপ পিরিচ), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফেরদৌস হোসেন আরিফ (আনারস), আওয়ামী লীগ নেতা উত্তম কুমার শর্মা (দোয়াত-কলম), আওয়ামী লীগ ঘরানার মোহাম্মদ মোস্তফা (মোটরসাইকেল)।

সীতাকুন্ডে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল আলম চৌধুরী রাজু (আনারস) এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু (দোয়াত-কলম)।

সন্দ্বীপে চেয়ারম্যান পদে ভোট লড়াইয়ে আছেন ৫ জন। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন মিশন (কাপ-পিরিচ), সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আনোয়ার হোসেন (আনারস), জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফোরকান উদ্দিন (দোয়াত-কলম), আমান উল্লাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ জুয়েল (হেলিকপ্টার), আওয়ামী লীগ ঘরানার এডভোকেট নাজিম জামশেদ (মোটর সাইকেল)।

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। তবে রাউজানে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ তিন প্রার্থী বিনা ভোটে নির্র্বাচিত হন। রাঙ্গুনিয়ায়ও চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। এতে আমেজহীন হয়ে পড়েছে উপজেলা নির্বাচন।

তবে চার উপজেলার মধ্যে ভোটের আমেজ রয়েছে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে। হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম (মোটরসাইকেল), উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরী (আনারস) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান (ঘোড়া)।

ফটিকছড়িতে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী (মোটরসাইকেল) ও উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরান (আনারস)।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনগুলোয় দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা নির্বাচনে কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। দলীয় নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও অন্য দলের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না।

দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে জানান আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এতে ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাসের মাথায় স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে ছায়াসঙ্গী হিসেবে মাঠে ছিলেন কিংসপার্টিখ্যাত দলের প্রার্থীরা। এছাড়াও ইসলামী দলের প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই।

তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে। এই ধাপে পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেন ৬০ জন প্রার্থী। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা।

পটিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম, পটিয়া উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক সৈয়দ নুরুল আবছার।

বোয়ালখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজা, পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম শফি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহেদুল হক, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সেলিম, এসএম নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আনোয়ারায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের ছাবের আহমদ চৌধুরী।

চন্দনাইশে চেয়ারম্যান পদে আছেন উপজেলা আ. লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ জুনু, যুগ্ম সম্পাদক আবু হেনা ফারুকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী। অন্য দুই প্রার্থী জসিম উদ্দীন আহমেদ ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রবাসী আহমদ হোসেন ফকির আওয়ামী লীগ ঘরানার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ