সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়আমি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশি নেইনি : সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ

আমার বাবা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন ১৯৬৭ সাল থেকে

আমি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশি নেইনি : সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের এমপি সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহিতা আছে। ব্যবসা ও রাজনীতি কেউ মিলিয়ে ফেলবেন না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি, পারিবারিকভাবে আমরা ব্যবসায়ী। বেশ কিছু কথা আসছে, হলফনামায় তথ্য লুকানোর কথা। ট্যাক্স রিটার্ন অনুযায়ী হলফনামা দিতে হয়, আমরাও সেভাবেই দিয়েছি।

নিজের ব্যবসার সঙ্গে রাজনীতিকে না মেশানোর অনুরোধ করে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, আমি ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কাম ব্যবসায়ী নই। পারিবারিক সূত্রেও আমি ব্যবসায়ী। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সন্তান এবং দীর্ঘদিন ধরে আমি ব্যবসা করে আসছি। আমি আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার শুরু করেছি আমেরিকায় লেখাপড়া করার শেষ পর্যায়ে।

মন্ত্রী থাকার সময় কোনো দুর্নীতি করেছেন কি না সে বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান বর্তমান ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাবেদ। একইসঙ্গে এক টাকারও দুর্নীতির প্রমাণ পেলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্রিটেনে ‘হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ’ আছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

মন্ত্রী হিসেবে সরকারি গাড়ি–বাড়ি ব্যবহার করি নাই। সেগুলো সব দান করে দিয়েছি। যেহেতু আমার লোন আছে, চাইলেই আমরা বিদেশ থেকে সব করতে পারি না। কিছু না করেও দুর্নামের ভাগীদার হয়েছি। ব্লুমবার্গ বাধ্য হয়েছে আমাদের সকল ব্যবসার বিস্তারিত তুলে ধরতে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া হলেও ৫০ বছরের ওপরে আমরা বড় ব্যবসায়ী, এটা বারবার প্রমাণিত। যে লোন আছে বিদেশের ব্যাংকে, সেটা কেউ দেখলো না। বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত হওয়া উচিত। ইউকে–আমেরিকার বাইরেও অনেক দেশে ব্যবসা আছে। যেখানে বেচাকেনার সুযোগ পাই সেখানেই বিক্রি করি কিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় কোনো চুরি করিনি। আমি দলকেও বিব্রত করতে চাই না, সরকারকেও বিব্রত করতে চাই না। আমি খুশি হবো, আমি মন্ত্রী থাকার সময় কোনো দুর্নীতি করেছি কি না এই বিষয়ে যদি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়। কারণ মন্ত্রী হিসেবে আমার দেশ ও জাতির কাছে জবাবদিহিতা আছে। আমাকে অবশ্যই আমার এই বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। একজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, একজন সাংবাদিক ও সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন প্রতিনিধি দিয়ে যদি কমিটি করা হয় তাহলে আমি খুশি হবো। আমি মন্ত্রী থাকার সময় কী করেছি, এটা পরিষ্কার করা হোক। এটা আমার জন্য খুব কমফোর্টের ব্যাপার হবে। এই কমিটি যদি আমার বিরুদ্ধে এক টাকার দুর্নীতি পায়, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আমার পদ থেকে রিজাইন দেব। আমি খুবই পরিষ্কার মানুষ। খুবই সিনসিয়ারলি সততার সঙ্গে কাজ করি।

তিনি আরো বলেন, গত কিছুদিন ধরে আমাকে নিয়ে বেশ কিছু নিউজ হয়েছে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে। অনেকের প্রশ্ন যখন এই নিউজগুলো এলো, তখন আমি কেন নীরব ছিলাম? আসলে আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের বাইরে থাকার সময় আমাকে নিয়ে নিউজগুলো এসেছে। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশে এসে আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করবো। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম, দায়িত্বে ছিলাম। মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহিতা আছে।

সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, নিউজগুলোতে আমার হলফনামা নিয়ে কথা এসেছে। আমি হলফনামায় কেন তথ্য গোপন করেছি? আমি জানি না বার বার কেন এই কথা আসছে। আমি আগেও বারবার পরিষ্কার করেছি, আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। নির্বাচনের সময়ে যে হলফনামা দিতে হয়, সেটি ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে মিল রেখে হলফনামা করতে হয়। নির্বাচন হিসেবে আমি সর্বশেষ চতুর্থবার নির্বাচন করেছি। বিগত দিনে আমি যেভাবে আমার হলফনামাগুলো দিয়েছিলাম, এবারও সেভাবে দিয়েছি। ওই হলফনামায় কোথাও উল্লেখ নেই বিদেশের সম্পত্তি উল্লেখ করার জন্য। যেহেতু বিদেশের সম্পত্তি উল্লেখ করার জন্য কোনো কলাম নেই এবং বিগত নির্বাচনেও আমি এই বিষয়ে কোনো তথ্য দেইনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমি আমার বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সেভাবে পুরোটা মিক্স করিনি। কারণ বাংলাদেশে আমার আলাদা ট্যাক্স রিটার্ন আছে, ইউকেতে আলাদা ট্যাক্স রিটার্ন আছে। ওই ট্যাক্স রিটার্নগুলো আমি মিক্স করিনি। আমি মনে করেছি, যেহেতু এটি হলফনামার কলামে নেই, আমি শুধু শুধু বাড়তি কথা কেন বলতে যাবো? সে কারণে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছাড়াই আমি এটা করেছি। এখানে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই।

তিনি আরো বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় আমি যে কাজগুলো করেছি, সেগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। আমার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকতো আমি কখনোই এগুলো করতাম না। আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে জাতি এবং দেশকে দেওয়ার জন্য, নেওয়ার জন্য নয়। আমরা যদি কিছু না করে যেতে পারি, তাহলে আমরা মনে করি বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত নেই। আমাদের কাছে সাধারণভাবেই মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই হিসেবেই আমি আমার কাজগুলো মোটামুটি করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় পড়াশুনা করেছি আশির দশকে। আমার পড়াশুনা যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই, বিদেশে আমাদের যে পারিবারিক ব্যবসা ছিল, সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি আন্তর্জাতিক ব্যবসা করার জন্য। যেহেতু আমার বাবা ইংল্যান্ডের সঙ্গে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন ১৯৬৭ এ সাল থেকে। ওই সূত্র থেকে আমাদের বিদেশে ব্যবসা শুরু। ছোট বেলা থেকেই আমাদের লন্ডন-আমেরিকায় বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। ওই সূত্র থেকে আমাদের কাজ। আমাদের ট্রেডিং ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, সুপার মার্কেট, রিয়েল এস্টেট এমন অনেক ব্যবসা ছিল। সেখান থেকে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। আমি বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশি নেইনি। বাংলাদেশ থেকে যদি কোনো টাকা নিতাম অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিতাম। যদি অনুমতি না নিয়ে বিদেশে টাকা নিতাম, তাহলে আমার অপরাধবোধ হতো। আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার ১৯৯১ সালের আগে ওখানে শুরু করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার ৩০ বছরের উপরে। প্রায় ৩৫ বছর হবে। আর আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ১১-১২ বছর। আমার ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ার এর থেকে অনেক বেশি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ