দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক ‘লোপাট’ ও অর্থপাচারের প্রতিবাদে সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ কর্মসূচি পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে গেছে। এতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের কাছে এ ঘটনা ঘটে। মঞ্চের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, মঞ্চের কর্মীরা জিরো পয়েন্টের কাছে বসানো ব্যারিকেডের ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। পুলিশের মারধরে সংগঠনের ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এডিসি বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল ছুড়ে মারে এবং পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। পুলিশের কতজন আহত হয়েছে তা পরে জানানো হবে। পুলিশের লাঠিপেটায় বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড হওয়ার পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জিরো পয়েন্টের সামনে আহত জোনায়েদ সাকিকে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্র মঞ্চের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশ কিভাবে লাঠিচার্জ করেছে তা আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেছেন। কেনো উস্কানি ছাড়া যেভাবে পুলিশ আমাদের বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে, তারা লাঠিচার্জ করেছে… এই হামলা ও লাঠিচার্জে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকিকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। এই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই, আমরা প্রতিবাদ জানাই।
আহত জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপরে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আপনারা সব দেখেছেন। আমি পুলিশকে নিরস্ত্র করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার ওপর লাঠিচার্জ করেছে। আমাদের কর্মীদের ওপর তারা বেপরোয়া লাঠিচার্জ করেছে, অনেকে জখম হয়েছে। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, ব্যাংক ‘লোপাট’ ও অর্থপাচারের প্রতিবাদে সমচিবালয়ে অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে সমাবেশ শেষ করে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হয়। মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘দ্রবমূল্যের দাম বাড়ছে কেনো, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে, কমাতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
মিছিলের অগ্রভাগে মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। তোপখানা রোড দিয়ে মিছিলটি জিরোপয়েন্টের কাছে এলে সচিবালয়ের সড়কের মুখে পুলিশের ব্যারিকেডের কাছে নেতাকর্মীরা এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কর্মীরা ব্যারিকেড ঠেলাঠেলি করে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ হুইসেল বাজানো এবং লাঠি দিয়ে কর্মীদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারতে থাকে। পরে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে এসে এলোপাতাড়িভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। এসময় কর্মীদের রক্ষায় জোনায়েদ সাকি এগিয়ে এলে পুলিশ তাকেও মারধর করে।
পরে সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, হামলা-আক্রমণ করে অতীতে যেমন কোনো স্বৈরাচার শেষ রক্ষা করতে পারেনি, বর্তমান ফ্যাসিবাদী ভোটবিহীন এই সরকারও হামলা-আক্রমণ করে গণতন্ত্র মঞ্চকে আক্রমণ করে শেষ রক্ষা করতে পারবে না। অনেক নেতা-কর্মীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জোনায়েদ সাকিকে আমরা এখন হাসপাতালে নিয়ে যাবো।