বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনদু’মাসের ব্যবধানে দু’টি বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় ফ্লাইট সঙ্কট ও চড়া দামে...

দু’মাসের ব্যবধানে দু’টি বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় ফ্লাইট সঙ্কট ও চড়া দামে ওমরাহ টিকিট

চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কুয়েতভিত্তিক এয়ালাইন্স জাজিরা এয়ারওয়েজ। আগামী ৮ মার্চের পর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে ওমান এয়ারের। অথচ এ দু’টি বিমান চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি ওমরা যাত্রী পরিবহন করত। মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে দু’টি বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ওমরা যাত্রীদের উপর।

এদিকে, এতদিন চট্টগ্রাম থেকে যারা রমজানে ওমরা হজ পালন করতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে এসে তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্লাইট সঙ্কট ও চড়া দামে ওমরাহ টিকিট। যারা চট্টগ্রাম থেকে স্বাচ্ছন্দে যাচ্ছেন, তাদের ঘাড়ে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। আবার প্রস্তুতি নেওয়া অনেকেই চট্টগ্রাম থেকে টিকেট না পেয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ঢাকা হয়ে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রামের ওমরাহ যাত্রীরা। ওমরা সেবা প্রদানকারী এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে। খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে এতদিন পাঁচটি এয়ারলাইন্স ওমরা যাত্রী পরিবহন করত। সরকারি বিমান সংস্থা ছাড়াও বাকি চারটি বিদেশি বিমান এ সেবা প্রদান করে থাকে। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমান সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকলেও তা ছিল অনিয়মিত ও নির্দিষ্ট। কিন্তু দুটি বিদেশি বিমান সংস্থা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বাকি দুটি বিমান সংস্থা এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও যাত্রী পরিবহন পর্যাপ্ত নয়। ওমরার এ মৌসুমে ফ্লাইটের এমন সংকটে দুর্ভোগ-দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

হজ্জ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে এ সময় প্রচুর মানুষ ওমরাহ করতে যান। গত বছর থেকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই হজে না গিয়ে ওমরা করতে যাচ্ছেন। যার কারণে এ বছর ওমরা যাত্রী তুলনামূলক অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। যখন যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল, তখন পাঁচটি বিমান সংস্থা ওমরা যাত্রী পরিবহন করতো। অথচ এ বছর মাত্র তিনটি বিমান যাত্রী পরিবহন করবে। যাত্রীর তুলনায় ফ্লাইটও কম। এটি বড়ই দুশ্চিন্তার বিষয়। এত যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাছাড়া টিকেটের মূল্যেও এর প্রভাব পড়বে।’

 দুটি বিমান বন্ধ এবং যাত্রীর তুলনায় ফ্লাইট সংকটের কারণে প্রভাব পড়েছে ওমরা যাত্রীদের ওপর। নানা অজুহাতে টিকেটের মূল্যও ইচ্ছেমতো বাড়ানোর অভিযোগ ওঠেছে। অনেকটাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ওমরার টিকেট কাটতে হচ্ছে যাত্রীদের। যা ঢাকার তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে যারা যাতায়াত করবেন, তাদের অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।

ওমরা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, একসময় জাজিরা এয়ারলাইন্স মাত্র ৬৪ হাজার টাকায় ওমরাহ যাত্রীদের টিকেট (ফেয়ার) পাওয়া যেত। অন্য এয়ালাইন্সগুলোতেও দাম আশপাশে থাকতো। কিন্তু দুটি এয়ালাইন্স বন্ধ হওয়ার কারণে টিকেটের চাহিদা বেড়েছে অন্য এয়ারলাইন্সগুলোতে। এ সুযোগে অন্য এয়ারলাইন্সগুলো টিকেট মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। যারমধ্যে বাদ নেই রাষ্ট্রীয় বিমানও। বর্তমানে টিকেট কিনতে হচ্ছে লাখ টাকার বেশি খরচে।

 চট্টগ্রাম থেকে ওমরা যাত্রীদের নির্বিঘ্নে সৌদি আরবে গমন-প্রত্যাগমন নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নিয়মিতকরণের পাশাপাশি এ মৌসুমে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার দাবি করেছেন হাব-আটাবের নেতৃবৃন্দ। ফ্লাইটের সংখ্যা নিয়মিত করা গেলে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হবে বলে মত হজ যাত্রী সংস্থাগুলোর।

এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্স অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, এতদিন আশায় ছিলাম, ওমরা যাত্রী পরিবহনে পাঁচটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে নতুন করে সৌদি এয়ারলাইন্সও যুক্ত হবে। কিন্তু দুটি এয়ালাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে, সৌদি এয়ালাইন্সও সময়মতো আসছে না। এর প্রভাব টিকেট ও যাত্রীদের যাতায়াতে পড়বে। এখন সরকারি বিমানের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কিছুই নেই।

হজযাত্রী কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এইচএম মুজিবুল হক শাকুর বলেন, এ সংকট দূর করতে বাংলাদেশ বিমান নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি যদি অতিরিক্ত ফ্লাইট দেয়, তাহলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। আশা করি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ