চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ১৪টি ব্যাংক রেকর্ড মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর এই পরিস্থিতি দেশের আর্থিক খাতের অস্থিরতার আরও একটি ইঙ্গিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতির ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ ঘটনা। এর আগে, ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির ঘটনা ঘটেছিল। আর চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ১৫টি ব্যাংক ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছিলো।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল, পদ্মা ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, বেঙ্গল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংক মূলধন ঘাটতির তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও এ তালিকায় বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও হাবিব ব্যাংক।
সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। আর বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, জনতার ৩ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং রুপালী ব্যাংক ২ হাজার ১২১ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, বেঙ্গল ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংক ৯৫ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংক ৬০৭ কোটি টাকার ঘাটতির মুখে পড়েছে।
এছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা এবং হাবিব ব্যাংকের ঘাটতি ৩৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি রেশিও বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক (ওয়েটেড) অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) জুনের ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
একটি ব্যাংক কতটা ভালোভাবে সকল নিয়মনীতি ও শর্তপূরণ করছে তা নির্ধারণের একটি সূচক হল সিআরএআর। এটি রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটের সঙ্গে মূলধনের তুলনা করে পর্যবেক্ষকদের ব্যাংকের ব্যর্থতার ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়তা করে। এটি আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও দক্ষতা প্রচারে ব্যবহৃত হয়।