শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনআখতারুজ্জামান বাবু সমস্ত রক্তচক্ষুর মধ্যেও কখনো ক্ষমতার সাথে আপস করেননি : তথ্যমন্ত্রী

আখতারুজ্জামান বাবু সমস্ত রক্তচক্ষুর মধ্যেও কখনো ক্ষমতার সাথে আপস করেননি : তথ্যমন্ত্রী

আমার বাবা একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করেননি : ভূমিমন্ত্রী

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সমস্ত রক্তচক্ষুর মধ্যেও কখনো ক্ষমতার সাথে আপস করেননি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেছেন, তাঁর জীবনাদর্শ থেকে আওয়ামী লীগের এই প্রজন্মের নেতাকর্মীদের শিক্ষা নিতে হবে। রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্রত, রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়া, বিত্ত বৈভব ও খ্যাতি অর্জনের সোপান হওয়া উচিত নয়। যে আদর্শ বিশ্বাস করে সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতিবিদকে সাহসী হতে হয়। যে রাজনীতিবিদ সাহসী নন, তিনি আপস করেন। সেই রাজনীতিবিদ আপস করে হয়তো অনেক পদবি পান, কিন্তু পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যান এবং আপসকামী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। এ রকম বহু রাজনীতিবিদ আমাদের দেশে ছিলেন, এখনো আছেন।  শনিবার বিকালে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, প্রাক্তন সংসদ সদস্য প্রয়াত জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, আমি আখতারুজ্জামান বাবু ভাইকে কাছ থেকে দেখেছি। কেউ তার কাছে গেছে, কাউকে না বলতে শুনিনি। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ ছিলেন, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী ছিলেন এবং একজন বড় দানশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পঁচাত্তরের পরে যদি আখতারুজ্জামান বাবু ভাই মন্ত্রী হতে চাইতেন জিয়াউর রহমানের সময় মন্ত্রী হতে পারতেন। জিয়াউর রহমানের বিদায়ের পর এরশাদ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় তখনো মন্ত্রী হবার জন্য তাকে কয়েক দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে বেঈমানি করেননি। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারাগারে গেছেন। ঝুঁকি নিয়ে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আখতারুজ্জামান বাবুর সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমার বাবা একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। তিনি মরেও কর্মগুণে আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। তিনি আপনাদের মাঝে বেঁচে আছেন–এটাই বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য। তাঁর জীবনের প্রতিটি কর্ম আজও চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছে সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ করার। যেখানেই গিয়েছি, আমার বাবার কথা বললেই মানুষের একটা আলাদা সম্মান আমি দেখেছি এবং পেয়েছি। আমি মনে করি আমার এবং আমার পরিবারের সবচেয়ে বড় পাওনা আর কিছু থাকতে পারে না। আমার বাবা ব্যক্তি জীবনে সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার জন্য তিনি রাজনীতি করেননি। তাঁর কর্মে তিনি মহীয়ান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুকে প্রেরণাদায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারী ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। তাঁর মতো ত্যাগী নেতাদের আদর্শ তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের অনুসরনের আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, প্রয়াত জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভাই শুধু ব্যবসা করলে দেশের এক নম্বর ধনী হতেন। কিন্তু রাজনীতিকে তিনি মানি মেকিং মেশিন করেননি। আজ অনেকে রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্য মনে করেন। জনগণকে তিনি ভালোবাসতেন বলেই তাঁর প্রতি জনগণের ভালোবাসা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আজকে বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, এ সময় প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মতো বুক চেতিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে থাকতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রয়াত এই নেতা আওয়ামী লীগের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি সবসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন, নেতাকর্মীদের সাহস যুগিয়েছেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অনেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের লোভে পড়েছিলেন। তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দল ছেড়ে যাননি। বরং নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিয়ে দলের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি বেঁচে থাকলে তার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের অনেক সংকট থেকে মুক্তি দিত। দেশব্যাপী বিএনপি–জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, নৈরাজ্যের এই দুঃসময়ে বাবুর মতো নেতাদের আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজপথে নেতাকর্মীদের সক্রিয় থাকা এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি পাড়া–মহল্লায় জনগণের পাশে থাকারও আহ্বান জানান তিনি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মো. গালিব সাদলী, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম আবুল কালাম, আবু সুফিয়ান, শাহাজাদা মহিউদ্দিন, আইয়ুব আলী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম চিশতী, দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, এড. জহির উদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন মনসুর, সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা শফর আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, দক্ষিণ জেলার আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. মির্জা কছির উদ্দিন, শ্রম সম্পাদক খোরশেদ আলম, উত্তর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ পালিত প্রমুখ।

আখতারুজ্জামান বাবুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে তাঁর গ্রামের বাড়ি আনোয়ারার হাইলধরে আওয়ামী লীগসহ নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ