দেশের রাজনীতি বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে, এটা সবাই বোঝে। আমি নিজে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সচেতন নাগরিক হিসেবে চলমান পরিস্থিতির খবর না রেখে উপায় নেই। বিশেষত যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশের জন্য পৃথিবীব্যাপী ভূরাজনীতির নতুন মেরুকরণ কী তাৎপর্য বহন করছে, তা নিয়ে কিছু গবেষণা করছি। তবে সেটা এ লেখার বিষয় নয়।
বাইরে থেকে ঘটনাপ্রবাহ দেখলে এবং তার বক্তব্য শুনলে অন্তত আপাতদৃষ্টে মনে হবে, তিনি কোনোরকম সংঘাত এড়িয়ে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণের মাধ্যমেই তার দলের লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছেন; সেটা সফল হবে কি না, তা ভিন্ন প্রশ্ন। তার গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও তা নিয়ে তো আমাদের মন্তব্য করার সুযোগ নেই; যা দৃশ্যমান তা নিয়েই শুধু তার রাজনীতিকে এ মুহূর্তে বিচার করতে পারি।
অবশ্য তিনি তার দলকে কতখানি সংযত রাখার ক্ষমতা রাখেন, তা আমার মতো রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ মানুষের জানার কথা নয়। নানা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের খবরও আমদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু আপাতদৃষ্টে তার মতো ঘোষিত একজন অহিংসতাবাদী মূল রাজনৈতিক নেতার অনুপস্থিতি চলমান রাজনীতির সংঘাত প্রশমনের সহায়ক হবে না বলেই মনে হওয়ার কথা।
চলমান রাজনীতির সমাধান অহিংস পথে হবে না সংঘাতের মাধ্যমে ফয়সালা হবে, তার ওপর নির্ভর করবে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ মূল্যস্ফীতির চাপ নির্দিষ্ট বা বাধা আয়ের মানুষের ওপর আরও কত দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতখানি ধরে রাখা যাবে এবং আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে আদৌ এগোতে পারব কি না।
এই বড় প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের আটকের ঘটনাকে হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে না–ও হতে পারে, কিন্তু এটা বড় কিছুর অনুঘটক হিসেবে কাজ করলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তাকে আবার তার অহিংস রাজনীতির ধারা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় ফিরে যেতে দেওয়াই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য হয়তো মঙ্গলকর হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা