শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনভোর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেলে বাস চলাচল শুরু

ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেলে বাস চলাচল শুরু

সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ১২১টি ছোট-বড় গাড়ি ব্যবহার করেছে টানেল

ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেলে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় ১২১টি ছোট-বড় গাড়ি টানেল ব্যবহার করেছে। রোববার (২৯ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়। পতেঙ্গা প্রান্তে ভোর ছয়টার দিকে টোল দেন দুলাল সিকদার।

প্রথম যাত্রীবাহী বাস হিসেবে টোল দেয় বিডি বাস লাভার গ্রুপের একটি বাস। আনোয়ারা প্রান্তে ভোর ছয়টায় প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল দেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা। এরপর টোল দেন সাতকানিয়ার চালক শফিক আলম। টানেলে প্রবেশের জন্য উভয় প্রান্তে অপেক্ষায় ছিল প্রায় শতাধিক গাড়ি। তবে পতেঙ্গা প্রান্তের চেয়ে আনোয়ারা প্রান্তে গাড়ির চাপ বেশি বলে জানা গেছে।

টানেল খুলে দেওয়ার পর ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ১ ঘন্টায় ৭২টি গাড়ি চলাচল করে। আর এতে টোল আদায় হয় ১৯ হাজার ৫০ টাকা। পরের এক ঘণ্টায় ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ৪৯টি গাড়ি অতিক্রম করে। এতে টোল আসে ১১ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে প্রথম দুই ঘণ্টায় ১২১টি গাড়ি থেকে ৩০ হাজার ৫০০ টাকার টোল আদায় হয়েছে।

বেলায়েত হোসেন নামে এক টোল ম্যানেজার জানান, সকাল থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় টানেল। প্রথম এক ঘণ্টায় একটু বেশি যানবাহন ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে পারে।

এর আগে টানেল পারাপারের জন্য টোল নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেতু বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জিপ বা পিকআপের জন্য ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের জন্য টোল ২৫০ টাকা। বাসের ৩১ আসন বা এর কম হলে টোল ৩০০ টাকা, ৩২ আসন বা তার বেশি হলে ৪০০ টাকা এবং ৩-এক্সেল বাসের জন্য টোল ৫০০ টাকা। ট্রাক-৫ টন পর্যন্ত ৪০০ টাকা, ৮ টন পর্যন্ত ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের টোল ৬০০ টাকা। মালবাহী ৩ এক্সেল ট্রেলারের টোল ৮০০ টাকা, ৪ এক্সেল ট্রেলারে ১ হাজার টাকা এবং ৪ এক্সেলের বেশি প্রতি এক্সেলের জন্য ১ হাজারের সঙ্গে ২০০ টাকা যোগ করে টোল দিতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

টানেল প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ) আবুল কালাম আজাদ জানান, টোল আদায়ের জন্য ১২টি বুথ আছে। প্রথমদিন ১০টি চালু করা হয়েছে। এখানে তিনভাবে টোল দেয়ার সুযোগ আছে। তবে বর্তমানে ম্যানুয়ালি টোল আদায় করা হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

উল্লেখ্য, এ টানেলে প্রথম যাত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নিজ হাতে টোল দিয়ে টানেল পার হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ