শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়এনআরবিসি ব্যাংকে পারভেজ তমাল রক্ষক হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর হয়ে ওঠেন ভক্ষক

এনআরবিসি ব্যাংকে পারভেজ তমাল রক্ষক হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর হয়ে ওঠেন ভক্ষক

ক্ষমতার অপব্যবহারের চক্র থেকে বের হতেই পারছে না প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় বছর পাঁচেক আগে ব্যাংকটিতে হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অনিয়মের সহযোগী হওয়ায় ওই সময় অপসারণ করা হয়েছিল ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীকে। আমূল পরিবর্তন আসে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানসহ নীতিনির্ধারণী সব পদে। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলীকে সরিয়ে ব্যাংকটি রক্ষার দায়িত্ব নেন পারভেজ তমাল।parves tamal

দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই রক্ষকই হয়ে ওঠেন ভক্ষক। প্রভাব খাটিয়ে নিজের কাছের লোকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ; আলাদা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংকের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ; পরিবারের সদস্য, স্বজন, অনুগতদের বিও হিসাবের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, অর্থ পাচারসহ অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে পারভেজ তমালের অনিয়মের তথ্য। কিছু অভিযোগ তদন্ত করছে দুদকও। অনিয়মে বেসামাল ব্যাংকটিকে বাঁচাতে তমালের নেতৃত্বাধীন এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিতে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও অজানা কারণে তা এখনো নথিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে, জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এনআরবিসি ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণের পর পারভেজ তমাল প্রথমে হাত দেন ব্যাংকটির জনবল নিয়োগে। এ জন্য এনআরবিসি ব্যাংকের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নিজেই একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন, যার নাম দেন এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট। জানা গেছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ হাজার ৭১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকে।

পাশাপাশি লান্তা সার্ভিসেস ও টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও এটিএম, বিআরটিএ, এসআরও বুথসহ ইন্টেরিয়র ও সরঞ্জামাদি সরবরাহে ব্যাংকের অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়গুলো এখন তদন্তাধীন। এসব অনিয়ম দুদকের প্রধান কার্যালয় খতিয়ে দেখছে। এনআরবিসি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিলায়েবল বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে পারভেজ তমালের।

অভিযোগ আছে, কাগজ-কলমে প্রতিষ্ঠানটি শফিকুল আলম নামের এক ব্যক্তির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলেও এটি মূলত পারভেজ তমালের একটি বেনামী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন খাত থেকে পারভেজ তমালের অবৈধ অর্থ রিলায়েবল বিল্ডার্সে বেনামে বিনিয়োগ করা হয়।

চেয়ারম্যানের স্বার্থ থাকায় নামমাত্র জামানতে রিলায়েবল বিল্ডার্সকে এনআরবিসি ব্যাংকের হাতিরপুল শাখা ৩৩৭ কোটি টাকা ঋণও দেয়। এই ঋণের বিপরীতে যে বন্ধকি রাখা হয়েছে, তার মূল্য মাত্র ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ঋণটি বর্তমানে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়মিত রয়েছে।

পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে ওঠা সর্বশেষ অভিযোগ শেয়ার কেলেঙ্কারি। বিএসইসি ও দুদকের তথ্য বলছে, পারভেজ তমাল ও তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার কারসাজি হয়েছে। কারসাজিতে জড়িত প্রশ্নবিদ্ধ হিসাবধারীরা হলেন তমাল পারভেজ, তমালের বাবা সৈয়দ শাহজাহান, তমালের স্ত্রী আসমা রশীদ, আসমার বাবা আব্দুর রশীদ, তমালের ভাই সৈয়দ সাব্বির আহমেদ, তমালের পিএস আসিফ ইকবাল, আসিফের স্ত্রী ও এনআরবিসি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার জুনিয়র কর্মকর্তা তাকিয়া ইসলাম নিশি, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম। লেনদেনের ক্ষেত্রে চেক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও এই বিনিয়োগকারীরা কৌশলে নগদ অর্থ উত্তোলন করেছেন, যা পুঁজিবাজার আইনের লঙ্ঘন।  এভাবে তুলে নেওয়া অর্থ পাচার হয়েছে কি না, তা তদন্ত করছে দুদকসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগের অপরাধে ইতিমধ্যে ব্যাংকটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা শোধ করেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল  বলেন, ‘এসব তো অনেক পুরোনো ইস্যু। এগুলো নিয়ে হঠাৎ নাড়াচাড়া কেন? এগুলো নিয়ে বলার কিছু নেই।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে ২০২২ ও ২০২৩ সালের তদন্ত ও এ-সংক্রান্ত চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব তাঁর জানা নেই।
এনআরবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়মের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংক খাতের সমস্যাটা শুধু ব্যাংক থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন ও নীতিমালা দিয়ে অনিয়ম বন্ধ দুরূহ।  (আজকের পত্রিকা)

আরও পড়ুন

সর্বশেষ