বর্তমান সময়ে হৃদ্রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাটি কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যায়। অনেকেরই ধারণা যে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান। শুধুমাত্র লক্ষণ আলাদা হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক কি?
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামেও বলা হয়। হার্ট পাম্পের মাধ্যমে মানবদেহের সারা শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে থাকে রক্তনালীর দ্বারা। কোন কারণে রক্তনালী সংকুচিত হয়ে গেলে বা ব্লক হয়ে হার্টে রক্তপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে তখন হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণ
রক্তনালী সংকুচিত বা ব্লক হয়ে গেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাকে সাধারণত সবার যে ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলো হল,
১. বুকে ব্যথা: বা বুকে অস্বস্তি বা চেপে ধরার অনুভূতি। যা ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
২. শ্বাসকষ্ট: মাঝারি শারীরিক পরিশ্রমের পরে শ্বাস নিতে অসুবিধা অনুভব করা।
৩. ঘাড় এবং চোয়ালে ব্যথা। এ ছাড়া হাতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, অসাড়তা এবং দুর্বলতা।
৪. চরম ক্লান্তি
৫. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বা ধীর
৬. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
লিঙ্গভেদে হার্ট অ্যাটাক
বয়স্কদের মধ্যে বেশীরভাগ মৃত্যুর কারণ হল হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক। তবে পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি এবং লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে।
পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
পুরুষদের মধ্যে স্থূলতা ও ধূমপান বেশি হওয়ার কারণে হৃদরোগ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি বলছে মার্কিন গবেষণা। কারণ স্থূলতা ও ধূমপানের কারণে রক্তনালী সংকীর্ণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
১. বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের বুকের মাঝখানে অস্বস্তি হয় যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, অথবা চলে যায় এবং ফিরে আসে। এটি অস্বস্তিকর ব্যথার মতো অনুভব হয়ে থাকে।
২. এক বা উভয় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
৩. বুকে ব্যথাসহ বা ছাড়া শ্বাসকষ্ট।
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ
হৃদরোগে আক্রান্ত মহিলাদের পুরুষদের তুলনায় ভিন্ন উপসর্গ থাকতে পারে এবং পরবর্তী জীবনে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা প্রবল থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার কারণে নারীরা হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হয়ে থাকেন
১. পুরুষদের মতো, মহিলাদেরও সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হল বুকে ব্যথা বা অস্বস্তিকর চাপ।
২. এক বা উভয় বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেটে ব্যথা।
৩. বুকের অস্বস্তিসহ বা ছাড়া শ্বাসকষ্ট।
৪. বমি বমি ভাব/বমি হওয়া,
৫. হালকা মাথা ব্যথা করা
৬. বুক ধড়ফড় করা
৭. ঘুমের ব্যাঘাত
৮. চরম ক্লান্তি
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
১. নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেমন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয় করা।
২. ধূমপান ও অ্যালকোহল পান ত্যাগ করা উচিত। এতে করে ৫০ শতাংশ করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
৩. নিয়মিত শারীরিক চর্চা বা ব্যায়াম করা। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৪. সুস্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। বেশি করে ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ, চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবারে পাওয়া স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলা উচিত।
৬. লবণ ও চিনির কম পরিমাণ খাওয়া।
৭. মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা থেকে দূরে থাকা। সর্বদা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করা।
সূত্র: দ্যা হার্ট ফাউন্ডেশন