বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে জন আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই :সিপিডি

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে জন আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই :সিপিডি

বাজেট বিশ্লেষণে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, স্বাস্থ্যখাতে সরকার বছরে জনপ্রতি ২ হাজার ২২৮ টাকা খরচ করবে। চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭০ টাকা বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ৪৪টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে কম ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের নিচে আছে আফ্রিকার গরীব দেশ জিবুতি, বেনিন এবং গাম্বিয়া। ধনীদের সারচার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা আবার কর দেওয়ার অযোগ্য মানুষের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেওয়া গরীব শোষণ ও ধনী তোষণ নীতির বহিঃপ্রকাশ।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির বর্তমান চ্যালেঞ্জকে বিবেচনা করা হয়নি। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে জন আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই।

শুক্রবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪, সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে সংগঠনটির পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। এই কঠিন সময়ে বাজেটে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন ও বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা যে চমক দেখানো হয়েছে তা উচ্চাভিলাষী, বাস্তবসম্মত নয়।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, গত দুই অর্থবছরের উন্নয়নের যে সূচক দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।আমরা যদি সরকারি বিনিয়োগের হার দেখি সেটা ৬ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির অংশ হিসেবে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ২০২৪ সালের জন্য ধরা হয়েছে। কিন্তু আসলে ২০২৩ সালে আমরা দেখেছি যেটা ধরা হয়েছিলো, সেটা কম হয়েছে এখন পর্যন্ত, এবং সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কিভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটি উচ্চাকাঙ্খা।

মুদ্রা খাত ও মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এই বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মিলছে না। এছাড়া ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বলা হয়েছে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে সেটা ৬ শতাংশ হবে। এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আমাদের কাছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মনে হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় আমদানি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে পারফরম্যান্স ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেখা গেছে তার থেকে আরও বেশি হবে বলে নতুন অর্থ বছরের বাজেটে বলা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সংস্কার সম্পৃক্ত বিভিন্ন সূচকে আমরা আইএমএফে’র বিভিন্ন শর্তের প্রতিফলন কমবেশি দেখতে পাই, যদিও এটি পর্যাপ্ত নয়। সরকার ধীরে ধীরে সে পথে হাঁটছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব সংস্কারে হাত দেওয়া হয়নি। সম্ভবত নির্বাচনের পরে কৃষি ও জ্বালানি খাতে মূল্য সমন্বয় করবে।

তিনি বলেন, বাজেট ডকুমেন্টে তিনটি যায়গায় আইএমএফ শব্দটি বলা হয়েছে। সেগুলো কিন্তু সরাসরি আইএমএফ’র সংস্কার নিয়ে নয়। বরং কোথায় আইএমএফ বাংলাদেশের প্রশংসং করেছে, আইএমএফ’র কোন উদ্বৃতি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের উপর- সেগুলো বলা হয়েছে। সংস্কার সম্পৃক্ত বিভিন্ন সূচকে আমরা আইএমএফ’র বিভিন্ন শর্তের প্রতিফলন কম বেশি দেখতে পাই, যদিও এটি পর্যাপ্ত না। এখনও সরকার আইএমএফ’র সংস্কার বা সামগ্রিক সংস্কারের জন্য যে প্রস্তুতি- মানসিক প্রস্তুতি পুরে নিয়ে সারতে পারেনি। এখনও সরকার হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংস্কারের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু এর বাস্তবতা অনুধাবন করছে। তবে যে সংস্কারগুলো পুরোপুরি করা দরকার এখনও সেদিকে ঢুকেনি। সম্ভবত নির্বাচন সামনে আছে বলেই এ জায়গাগুলোতে হাত দেয়নি, ফলে ভর্তুকি এখনও একই জায়গায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কৃষি ও জ্বালানিতে খাতে মূল্য সমন্বয় সম্ভবত আমরা নির্বাচনের পরে দেখতে পাবো। নির্বাচনের পরে হয়তো সরকার জোরালোভাবেই সংস্কার কার্যক্রমে হাত দেবে।

বাজেটে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের যেসব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাকে উচ্চবিলাসী ও বাস্তবসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেছে সিপিডি। নূন্যতম ২ হাজার টাকা কর করার বিষয়টিকে ‘অন্যায্য, বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিকও’ বলেছে বেসরকারি এই গবেষণা সংস্থা।

বৃহস্পতিবার ১ জুন বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার পঞ্চম বাজেট।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা বর্তমান বাজেটের চেয়ে ১২ দশমিক ৩/৪ শতাংশ বড়। এই বিশাল ব্যয় মেটাতে আয় ধরা আছে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৫ কোটি যা জিডিপির ৫.২%। বছর শেষে জিডিপির আকার হবে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.৫% আর মূল্যস্ফীতি ৬%।

বর্তমান মেয়াদে সরকারের পঞ্চম ও আগামী নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন মেয়াদের টানা ১৫তম বাজেট এটি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ