শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপ১০০ বছর পূর্ণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার

১০০ বছর পূর্ণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার

১০০ বছর পূর্ণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাতের ‘কারিগর’ হিসেবে তার কূখ্যাতি আছে বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে। বড় বড় সফলতা আর ‘অগণিত’ বিতর্কিত রেকর্ডসহ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছেন তিনি। এছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ আখ্যা দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।

জার্মানির এক ইহুদি পরিবারে ১৯২৩ সালের ২৭ মে জন্মগ্রহণ করেন কিসিঞ্জার। ঘটনা পরিক্রমায় তার পরিবার পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যায়। সেই শহরেই বেড়ে ওঠেন কিসিঞ্জার। মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে মার্কিন কূটনীতির সমার্থক হিসেবে বিবেচিত হওয়া কিসিঞ্জারের শতবর্ষ উপলক্ষে ছিল নানা আয়োজন।

শতবর্ষ পূর্ণ করার মুহূর্তটি কিসিঞ্জার উদ্‌যাপন করেন নিউইয়র্কের ইকোনমিক ক্লাবে। সেখানে জন্মদিনের কেকের ওপর জ্বালানো মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নেভান তিনি। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওইসব প্রতিবেদনে তার দীর্ঘ কর্মজীবনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। এ সময় তার কর্ম ঝুলিতে রয়েছে কমিউনিস্ট চীনে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি ভিয়েতনাম যুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর সোভিয়েত বিরোধী স্বৈরশাসকদের ক্ষমাহীনভাবে সমর্থনের মতো নানা পদক্ষেপ। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশলে বৈরিতা কমিয়েছিল, তার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বেইজিংয়ে যান কিসিঞ্জার। সেই সফরের পরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্ম্পক এক অন্য মাত্রা পায়, তৈরি হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরের মঞ্চ।

পূর্ব তিমুর-ইন্দোনেশিয়া থেকে শুরু করে তুরস্ক-সাইপ্রাস-গ্রীসের রাজনীতিতেও হেনরি কিসিঞ্জার রেখেছিলেন নানা নাটকীয় ও সংঘাতময় অবদান। এছাড়া সোভিয়েত ও কিউবা মিত্রদের মোকাবিলায় নানা গোপন মিশনে ছিল তার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়। মস্কোকে দমাতে কিসিঞ্জার সবচেয়ে জনবহুল আরব দেশ মিসরের সাথেও সম্পর্ক পরিবর্তন করেছিলেন।

কূটনীতিতে কিসিঞ্জার তার জীবনের একটা লম্বাসময় কাটিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। ১৯৭৩ সালে আরব রাষ্ট্রগুলোতে যুদ্ধ-সংঘাতের পরে যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ইসরাইলের ধারাবাহিক উত্থাণে কিসিঞ্জারের অবদান ইতিহাস স্বীকৃত।

কম্বোডিয়া ও লাওসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন, ১৭৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক নৃশংসতার বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখেন কিসিঞ্জার।

বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধ-সংঘাতের জন্য তাকে কোনো ধরণের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি, এ নিয়ে বহু মহলে ক্ষোভ রয়েছে। তবে তার দেশের পক্ষে যায় এমন অবদানের জন্য ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন দেশে, দুর্নামও তেমন জুটেছে বিদেশে। সবমিলিয়ে তার রয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল রাজনীতিক জীবন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ