ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। পদ না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে বেতন বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, পরিচালক (উন্নয়ন) ও পরিচালক (কারিগর)—এই দুটি পদ ওয়াসার অর্গানোগ্রামে না থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির এমডি প্রভাব খাটিয়ে দুজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। আর চার বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের বেতন বাবদ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮০ টাকা দেওয়া হয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ হওয়ায় এই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়মের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কর্মকর্তা দাখিল করেছেন। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। সব ঠিক থাকলে মামলার সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, যে দুজনকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেম ও পরিচালক (কারিগর) এ কে এম সহিদ উদ্দিন। ঢাকা ওয়াসার ২৫২ তম সভায় এই দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় নিয়োগের পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছেন, তাঁরা হলেন অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. মাহমুদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী এ কে এম হামিদ, ডিএনসিসির কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ডিএসসিসির কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক এবং ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান।
দুদক সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, এমডিসহ সাতজন সদস্য এবং চাকরি গ্রহণকারী দুজন মিলিয়ে মোট ১০ জনকে মামলায় আসামি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক সূত্রমতে, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর একাধিকবার সময় বাড়িয়ে ওই পদে আছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বারবার নিয়োগবিধি অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ওয়াসার এমডিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সংস্থাটির পদ্মা-জশলদিয়া প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, দাশেরকান্দি পয়োশোধনাগার প্রকল্পে ১ হাজার কোটি টাকা, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই অনুসন্ধান করছেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তাকসিম এ খান একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি দুর্নীতি করিনি। এক টাকাও হারাম খাইনি।