শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) উদ্বোধন করেছেন। ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী আইওসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি ৬টি প্রস্তাব রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সকল দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমরা আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তৈরি করেছি। এরই ধারাবাহিকতায়, আমি এই ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স-এ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ৬টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই:

প্রথম: ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমুদ্র কূটনীতি (Maritime Diplomacy)’ জোরালো করতে হবে।

দ্বিতীয়: এই অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তদ্সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

তৃতীয়: একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

চতুর্থ: ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরী পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে।

পঞ্চম: ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চর্চা এবং জনবান্ধব উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক-নারীসম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

ষষ্ঠ: উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মরিশাসের মহামান্য রাষ্ট্রপতি পৃথ্বীরাজসিং রুপান জি. সি. এস. কে., মালদ্বীপের মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি ফয়সাল নাসিম, মন্ত্রী পরিষদের মাননীয় সদস্যবর্গ, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত সুধীমন্ডলী। আস্সালামু আলাইকুম এবং শুভ সন্ধ্যা।

আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে স্বাগত জানাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।

ঢাকায় এই সম্মেলনের ৬ষ্ঠ সংস্করণ আয়োজনে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য আমি ভারত সরকার এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সম্মেলন অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি। আমি অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে আমার পরিবারের শহিদ সদস্যদের।

সম্মানিত সুধী,

বর্তমানে, সাগর-মহাসাগরসমূহের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য বিগত ১৫ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী দেশসমূহের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা এখনও অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

সুধিবৃন্দ,

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আফ্রিকার অঞ্চলসমূহে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এ অঞ্চলটি নানাবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বদা সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং এ সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য “Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974” প্রণয়ন করেন। উল্লেখ্য, এই আইনটি “সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২” ঘোষণার আট বছর আগে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন বিশ্বসম্প্রদায়ের এ বিষয়ে সীমিত ধারণা ছিল।

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ,

এবারের এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- “টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারিত্ব এবং সমৃদ্ধি (Peace, Partnership and Prosperity for a Resilient Future)” অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং যথাযথ হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিতকরণে অংশীদারিত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ মহামারি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যার প্রেক্ষাপটে আজকের এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি এবং সার সঙ্কটের ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশীদারিত্ব এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দিতে হবে।

কোভিড-পরবর্তী সময় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে “International Year of Dialogue as a Guarantee of Peace, 2023” শীর্ষক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি যা বাংলাদেশের মূল পররাষ্ট্রনীতি-রেজ্যুলেশনের ১৪তম অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে। সেখানে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, নিরক্ষরতা এবং বেকারত্বের নিরসনে কাজ করার গুরুত্ব অনুধাবন করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যগুলি অর্জনের জন্য গঠনমূলক সহযোগিতা, সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেতনায় “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও প্রতি বৈরিতা নয়”- এই প্রতিপাদ্যের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ভারত মহাসাগর অঞ্চলের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রচেষ্টায়ও জাতির পিতার উপর্যুক্ত উক্তিটি একইভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উদ্ধৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে যৌথ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অর্থপূর্ণ সহযোগিতা, সংলাপ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ায় আমাদের কার্যকর ‘অংশীদারিত্ব’ প্রয়োজন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, “মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অত্যন্ত জরুরী এবং তা সমগ্র বিশ্বের নর-নারীর গভীর আকাঙ্খারই প্রতিফলন ঘটাবে”। ঐ ভাষণে তিনি ভারত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উপরে বিশেষভাবে জোর দেন।

বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও-কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে “Culture of Peace (শান্তির সংস্কৃতি)” সংক্রান্ত ঘোষণা এবং কর্মসূচি রেজ্যুলেশন আকারে উত্থাপন করি যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, জাতিসংঘ ২০০০ সালকে “International Year of Culture of Peace” হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০১-২০১০ সালকে “Culture of Peace and the Decade of Non-violence” হিসেবে ঘোষণা করে।

শান্তির বার্তাকে সর্বাত্মকভাবে সুসংহত করতে “Culture of Peace” প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে বাংলাদেশ মনে করে। একারণেই বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।

নানা প্রতিকূলতা সত্তেও, আমরা ১.১ মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছি, যার ফলে এ অঞ্চলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এখন আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন কামনা করি।

একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সমুদ্র বিষয়ক অনেক আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে Indian Ocean Rim Association এবং Council of the International Seabed Authority-এর সভাপতি।

সম্মানিত উপস্থিতি,

গত এক দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের চরম দারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় গত এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলার হয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (খউঈ) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মানদণ্ড পূরণ করেছে।

আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখি যেখানে শক্তিশালী ভৌত অবকাঠামো আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সহায়ক হবে। গত বছর আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন করেছি। সম্প্রতি আমরা রাজধানীতে প্রথম মেট্রো রেল উদ্বোধন করেছি। আমরা চট্টগ্রামে ৩.২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শেষ করব। নদীর তলদেশ দিয়ে এ ধরনের স্থাপনা, দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই হবে সর্বপ্রথম।

আমাদের স্বপ্ন হল ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞান-ভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ নির্মাণ করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য কৌশল হিসেবে আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করার উপর গুরুত্বারোপ করছি।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত মহাসাগর শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সকল দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমরা আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তৈরি করেছি। এরই ধারাবাহিকতায়, আমি এই ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স-এ ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য ৬টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই:

প্রথম: ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহকে তাদের উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “সমুদ্র কূটনীতি (Maritime Diplomacy)” জোরালো করতে হবে।

দ্বিতীয়: এই অঞ্চলের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তদ্সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

তৃতীয়: একটি স্থিতিশীল এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সমীহের ভিত্তিতে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

চতুর্থ: ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরী পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়া, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে নৌ ও বিমান চলাচল নিশ্চিত করা হবে।

পঞ্চম: ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চর্চা এবং জনবান্ধব উন্নয়নের প্রসার করতে হবে। একটি শান্তিপূর্ণ, সমতাভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অর্ধেক-নারীসম্প্রদায়কে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

ষষ্ঠ: উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রসার করা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে এবং তার বাইরেও সমতাভিত্তিক টেকসই উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

সকলকে ধন্যবাদ। আমি এ সম্মেলনের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।

খোদা হাফেজ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ