শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদটপমানবতার সেবায় আমরা যা করি তা আসে হৃদয় থেকে : ফখরুল ইসলাম...

মানবতার সেবায় আমরা যা করি তা আসে হৃদয় থেকে : ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ

পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে অনেক জ্ঞানীগুণী সমাজসেবক ও মহৎপ্রাণ মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। মহাত্মা জ্বীন হেনরী ডুনান্ট সেই সব শ্রেষ্ঠ মানব সন্তানের একজন। রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা জ্বীন হেনরী ডুনান্টের জন্ম হয়েছিল ১৮২৮ সালের ৮ই মে। ১৯১০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর হতে সারা বিশ্বে ৮মে তাঁর জন্মদিনকে সম্মান দেখিয়ে ‘বিশ্ব রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক, মানব হিতৈষী ও শ্রেষ্ঠ মানব। সেই জন্যই তিনি পেয়েছিলেন শান্তিতে প্রথম নোবেল পুরস্কার। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আজ কোটি কোটি মানব সন্তান বিপন্ন মানবতার সেবায় নিয়োজিত। তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষকে এক পতাকাতলে একই কর্মসূচীতে একত্রিত করেছিলেন। সাম্য মৈত্রির বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন মানব সন্তানদের। সেই সংগঠনের নাম রেড ক্রিসেন্ট।resize

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ১৫টি বিদ্যালয় নিয়ে জুনিয়র রেড ক্রস কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ১৯৭৮ সনে যুব রেড ক্রস শাখা গঠন করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষায়তন বহিভূত যুব রেড ক্রস দল গঠন করা হয়। যা বর্তমানে যুব রেড ক্রিসেন্ট নামে অভিহিত। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়সহ বাংলাদেশে যুব রেড ক্রিসেন্ট আওতাভূক্ত ১,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১,৫০,০০০ আগামীতে এর আরো প্রসার ঘটবে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসন্টে সোসাইটি: ব্রিটিশ ভারতের ভারতীয় রেড ক্রস সোসাইটি এ্যাক্ট, ১৯২০ এর অধীনে রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ফলে পাকিস্তানের ভৌগলিক এলাকায় পূর্বের আইনের সামান্য রদবদল করে পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটির অধীনে পূর্ব পাকিস্তান রেড ক্রস ব্রাঞ্চ হিসেবে গঠিত হয়।

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান রেড ক্রস সোসাইটির পূর্ব পাকিস্তান ব্রাঞ্চ বাংলাদেশের জাতীয় সোসাইটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকারের নিকট স্বীকৃতি লাভের জন্য আবেদন করে। ৪ জানুয়ারী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকারের এক আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি গঠিত হয়। এর পর ৩১ মার্চ ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ (রেড ক্রস সোসাইটি আদেশ, ১৯৭৩ (পিও-২৬) জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি স্বীকৃত লাভ করে এবং রেড ক্রস সোসাইটি এ্যাক্ট, ১৯২০ বাতিল বলে গন্য করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের তেহরান সম্মেলনে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। ০৪ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রপতি আদেশের সংশোধনী বলে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করা হয়। সেই সাথে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট প্রতিকের ব্যবহার শুরু হয়।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রশাসনিক জেলায় ৬৪টি ও ৪টি সিটি করপোরেশনে ৪টি সর্বমোট ৬৮টি ইউনিট রয়েছে যার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সারাদেশব্যাপী নানাবিধ জনসেবা ও কল্যাণ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। মানবতার কল্যণে বাংলাদেশে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বাভাবিক সময়ে ও প্রতিটি দুর্যোগে ৬৮টি ইউনিট এর স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বিপন্ন মানবতার কল্যাণে গণ মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত।

যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতদের সেবা ও নিহতদের সৎকার করার উদ্দেশ্যে রেডক্রসের জন্ম হলেও এর সেবা ও কর্ম-পরিধি বর্তমানে ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সেবার মনোভাব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রেড ক্রিসেন্ট বন্যা, নদী ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস, অগ্নিকান্ড, প্রচন্ড শীত প্রভৃতি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য সামগ্রী, ঔষধপত্র, বস্ত্র, অস্থায়ী আশ্রয় সামগ্রী প্রদান এবং উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এমনকি বিধ্বস্ত এলাকার গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯৮ সালে সংঘটিত শতাব্দীর প্রলয়ংকারী বন্যায় সোসাইটি ত্রাণ কার্যক্রম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের জন্য দেশের দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি জেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী অসহায় গণমানুষের বিপদাপন্নতা লাঘবে সোসাইটি ১৯৯৭ সাল হতে ‘সমাজ ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচী’র মাধ্যমে গণ মানুষের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯১ সালে সংঘটিত প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে সোসাইটির উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম সারা বিশ্বে সেবার অনন্য মডেল হিসাবে আস্থা অর্জন করেছে। সোসাইটির স্বাস্থ্য সেবার কর্মসূচীর অধীনে এ দেশের গণ মানুষের সেবায় ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৫টি স্বয়ংসম্পূর্ণ অত্যাধুনিক হাসপাতালসহ ৫টি মাতৃসদন হাসপাতাল, ৬১টি গ্রামীণ মাতৃসদন কেন্দ্র, ৩টি আউটডোর ক্লিনিক, ২টি চক্ষু ক্লিনিক, ৬টি রক্ত কেন্দ্র, ১টি নার্সিং স্কুল, ৩টি ধাত্রী বিদ্যা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এইচ আইভি/এইডস ও এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর সক্রিয় ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা, জরুরী মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে থ্যালাসেমিয়া রিসার্চ সেন্টার, ডেন্টালসহ আর্তমানবতার সেবায় চিকিৎসার অন্যান্য দিক।

সাতটি মূলনীতি নিয়ে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কাজ করে। মূলনীতি গুলো হল মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলক সেবা, একতা, সার্বজনীনতা। স্কুল কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রী বা যুব শ্রেণীর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সোসাইটির যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সোসাইটির অধিকাংশ কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রশিক্ষিত যুব স্বেচ্ছাসেবকগণই প্রতিটি দুর্যোগে গণমানুষের সেবায় আস্তরিক ও নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে। বাংলাদেশে যুব রেড ক্রিসেন্ট এর ইতিহাস বেশি দিনের পুরানো নয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জুনিয়র রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ১৩টি বিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে জুনিয়র রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমে অন্তভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে কলেজ র্পযায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রথম অবস্থায় ২০টি কলেজকে যুব রেড ক্রিসেন্টর আওতায় আনা হয় পরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালে নামের জটিলতা পরিহার করার উদ্দেশ্যে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে নামের সামঞ্জস্য রাখার লক্ষে রেড ক্রিসেন্ট এর যুব সংগঠনের নাম রাখা হয় যুব রেড ক্রিসেন্ট। জুনিয়র ও যুব রেড ক্রিসেন্ট একত্রিত বিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের সকল সদস্যদের সমন্বয়ে এই নাম রাখা হয়। যুব রেড ক্রিসেন্ট এর লক্ষ, উদ্দেশ্য, মূলমন্ত্র আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। “কাজের মাধ্যমে শিক্ষা” এটাই মূলতঃ যুব রেড ক্রিসেন্ট এর লক্ষ। যুব রেড ক্রিসেন্ট এর মূল মন্ত্র বা গড়ঃঃড় হল ও ঝবৎাব বা সেবাব্রতী। ১৯৭৫ সালে বেলগ্রেডে রেড ক্রস সন্মেলনে সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যুব রেড ক্রস/ যুব রেড ক্রিসেন্ট এর লক্ষ নির্ধারণ করা হয় ৪টি সেগুলো হল জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষা, সেবা ও সংহতি, আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব, সমঝোতা ও শান্তির অন্বেষনে শিক্ষা এবং রেড ক্রস/রেড ক্রিসেন্ট মূলনীতি ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বিস্তার।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকানতিক প্রচেষ্টায় মহামন্য রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১০ সালে সরকার যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমকে সহশিক্ষা হিসেবে ঘোষণ করেন। ফলে সারা দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুব কার্যক্রম চালূ রয়েছে এবং এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩,৫০,০০০ জন। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যুব রেড ক্রিসেন্ট নিম্মলিখিত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ যেমন রেড ক্রস/ক্রিসেন্ট মৌলিক প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ, উদ্ধার ও সাড়া প্রদান, নেতৃত্ব উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পুরনো বই, কাপড় সংগ্রহ ও বিতরণ, ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালনা, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিডিআরসিএসের সমন্বয় ও সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যুবদের; বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিডিআরসিএসের ব্রাঞ্চগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে; একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়ে থাকে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, বিশ^বিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ কাঠামো ও নির্দেশিকা মেনে যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এমন এক বান্তবতায় আজ যুবকদের সুযোগ রয়েছে শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষার অংশ হিসেবে মানূষের পাশে দাঁড়ানোর। অসহায় ও দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারছে কয়জন। ক্লাসের অবসরে হয়ত আড্ডা দিয়ে অতিরিক্ত সময়টুকু নষ্ট করে ফেলি কিন্তু একটু সচেতন হলে আমরা পারি অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাড়াতে। আমাদের সহযোগিতার কারণে হয়ত কিছু অসহায় মানুষ তার পথ চলার রাস্তা খুঁজে পাবে। একই সাথে নিজের আতœাতৃপ্তি বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এর মাধ্যেমে নিজেকে যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে ভবিষ্যতের জন্য।

ডিজিটার বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে আজকের যুব সমাজ। যুবকদের মাঝে রয়েছে তারণ্যের উদ্দিপনা, সেটিকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে গড়তে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটার বাংলাদেশ। সেটির অন্যতম মাধ্যম হতে পারে রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন। যুবক শ্রেণী ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ রয়েছে যুব রেড ক্রিসেন্ট এর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার। শুধু যুবক বা ছাত্র-ছাত্রী নয় যে কেউ পারে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে তার জন্য রেড ক্রিসেন্টের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। মানবসেবাই বড় ধর্ম তাই আসুন মানবের কল্যানে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে রেড ক্রিসেন্ট এর পতাকা তলে ঐক্য বদ্ধ হয়। সকলের পদযাত্রা হোক মানবতার কল্যাণে, সত্য, সুন্দর ও মানবতার জয়গানে। মানবতার সেবায় রেড ক্রিসেন্ট এগিয়ে চলছে “ সর্বত্র সবার জন্য”।

বিশ্বব্যাপী সবকিছুই ঠিকঠাক মত চলছিল হঠাৎ করে ২০২০ সালে মহামারি করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত বিস্তার হতে লাগল। বাংলাদেশেও এই মহামারীর প্রভাব শুরু হল। চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর; বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় ৮ই মার্চ, ২০২০ সালে এবং প্রথম মৃত্যুটি ঘটে ১৮ই মার্চ, ২০২০ সালে। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অংকের মধ্যে ছিল যা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চতে পৌঁছেছিল। ২ জুলাই তারিখে সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। সকলে যখন ভয়ে ঘরবন্দি রেড ক্রিসেন্টের যুব সদস্যরা মানবতার কল্যাণে নানা কাজ শুরু করেছে। তখন বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়ে মানব সেবা করতে লাগলাম যাতে করে মানুষ বেচে থাকার অবলম্বন পায়। আমাদের যুব সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন। সাধারণ মানুষের জীবন বাচাঁতে আমাদের যুব সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাছে পৌছে দিয়েছে কখনো ঔষধ, কখনো খাবার, কখনো অক্সিজেন আবার কখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। যখন রোগীদের পাশে স্বজনরাও ছিল না তখন আমরা কাজ করেছি আইসিইউ এর মত অতি বিপদজনক স্থানে মানুষের সেবায়। মানবতার সেবায় আমরা যা করি তা আসে #হৃদয় থেকে করেছি। সব একেরারে হৃদয় গহিন থেকে এসেছে মানুষের জন্য। আমরা স্থির থাকতে পারি নাই মানুষের হাহাকার দেখে, এটাই হয়ত মানবতা।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুব সদস্যদের মাঝে মানবতার কল্যাণে কাজ করার আগ্রহ আরো যেন বেডে গেল কয়েকগুণ। তার মেধা ও যোগ্য নের্তৃত্বে যুব সদস্যরা আরো বেশী মানবসেবী হয়ে উঠেছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে দূর্যোগ বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। একই সাথে বেড়ে গেছে মানব সৃষ্ট বিভিন্ন দূর্যোগ। এই বিবেচনায় থেকে দূর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে এবং যুবদের মাঝে দূর্যোগ ঝুঁকির প্রভাব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ট্টেজারার জনাব এম এ ছালাম ও চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম এর নের্তৃত্বে “যুব নেতৃত্বের প্রসার, সবুজ বিশ্বের অঙ্গীকার” শ্লোগানকে সামনে রেখে ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে। যাতে করে আরো কিছু দক্ষ ও প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক গড়ে উঠে এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন দুর্যোগ সমূহ মোকাবিলায় দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলার অন্যতম পাথেয় যুব ক্যাম্প। বর্তমান বিশ্বের পরিবেশগত কারণে এবং মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগে মানবিক সাহায্যের অন্যতম নিদর্শন হল রেডক্রস রেডক্রিসেন্ট আন্দোলন। যে কোন দুর্যোগে মানুষের এখন প্রধান আস্থা হচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট। আর যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের যুব সদস্যদের ত্যাগ ও সেবার মনোভাবের কারণে এ সংগঠনটির কার্যক্রম দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অধিক গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসিত হচ্ছে। তাদের কর্মকান্ড সারা বিশ্বে আস্থার একটি মূর্তপ্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবেই এগিয়ে চলছে মানবতার সেবা । আসলেই – মানবতার সেবায় আমরা যা করি তা আসে #হৃদয় থেকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ