শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়থিম্পুতে বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত

থিম্পুতে বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত

ভুটানের থিম্পুতে বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজতর হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হায়দার আলী। এর আগে, গেল ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়।

ওই বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সংবাদকর্মীদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ‘ভুটান একটি ল্যান্ড লক কান্ট্রি। আমদানি-রফতানিতে তাদের নিজস্ব কোনো নদী বা সমুদ্রবন্দর নেই। সেক্ষেত্রে তারা ভারতের কাছ থেকেও একই ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি কাজ চালানোর একটি সুযোগ তারা পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে বাংলাদেশের স্থল ও নৌবন্দর ব্যবহার করে ভুটান বিভিন্ন দেশে পণ্য আমদানি ও রফতানি করতে পারবে। এমন বিধান রেখে দুই দেশের মধ্যে শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সইয়ের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও ট্রানজিট চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের কয়েকটি বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করছে ভারত।

বাণিজ্যমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ চুক্তির আওতায় ভুটান ট্রানজিট সুবিধা পেতে যাচ্ছে। যার ফলে দেশটি আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে৷ এমন কি তারা জল, স্থল, রেলপথ, বিমান পরিষেবাসহ সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগও পাবে। ট্রানজিট সুবিধার আওতায় তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য ভুটানের গাড়িগুলো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহার করে বিমান ও সমুদ্রবন্দরে যাবে। এরপর এসব পণ্য বিশ্বের নানা দেশে পাঠানো হবে। বাংলাদেশের ওই একই অবকাঠামো ব্যবহার করে আবার আমদানি করা পণ্য ভুটানে পরিবহন হবে।

এক্ষেত্রে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভুটান। এছাড়া আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ আছে। এসব বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে এমন সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ খসড়া প্রটোকলে যুক্ত রয়েছে।

যে পাঁচ রুট ব্যবহার করে বাণিজ্য করবে ভুটান গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য ভুটানকে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া ও প্রটোকল চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সেটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নেওয়া হয়।

খসড়া প্রটোকল অনুযায়ী সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বাছাইকৃত রুটগুলো হচ্ছে
১. (ভুটান থেকে পণ্য নিয়ে) সামসি গোমটুফুয়েন্টসলিং  গেলেপু- বুড়িমারি- রংপুর- বগুড়া- হাটিকুমরুল- ঢাকা- চট্টগ্রাম। ২. ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-রংপুর-বগুড়া-হাটিকুমরুল-ঢাকা-চট্টগ্রাম। ৩. গেলেপু-তামাবিল-সিলেট-ঢাকা৷ ৪. গেলেপু-সামদ্রুপ-জংখর-তামাবিল-সিলেট-সরাইল-ঢাকা-বেনাপোল এবং (৫) সামসিগোমটুফুয়েন্টসলিংগেলেপু-নাকুগাঁও নালিতাবাড়ী-ময়মনসিং-ঢাকা।

সড়কপথে এই পাঁচটি রুট ছাড়াও রেলপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির জন্য আরও দুটি রেলরুট যুক্ত করা হয়েছে খসড়া প্রটোকলে। এই রুটগুলো হচ্ছে

১. সামসি গোমটুফুয়েন্টসলিংগেলেপু-চিলাহাটি-সৈয়দপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার-ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-যশোর-নওয়াপাড়া-খুলনা-মোংলা।

২.চট্টগ্রাম-লাকসাম-কুমিল্লা-আখাউড়া-ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া-লালমনিরহাট-বুড়িমারি-সামসিগোমটু ফুয়েন্টসলিংগেলেপু।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযোগ রেখে এই রুটগুলো প্রটোকলে যুক্ত করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে ভুটান যাতে কলকাতার সমুদ্র ও বিমানবন্দর ব্যবহার করেও পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে প্রটোকলে সেই সুবিধাও রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন নম্বর রুটে ভুটানের গেলেপু থেকে সিলেটের তামাবিল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ঢাকা হয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় যেতে পারবে ভুটানের পণ্য। একই পথে আবার কলকাতা থেকেও আমদানিকৃত পণ্য ভুটানে পরিবহনের সুযোগ থাকছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশের কিছু অবকাঠামো ব্যবহার করছে। দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসেবে ভুটান সেই সুবিধা পেতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ