শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বাংলাওয়াশ

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বাংলাওয়াশ

ইংল্যান্ড দল বর্তমানে ওয়ানডে এবং টি–টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এই দলটি যেন ক্রিকেটের ধারাটাই পাল্টে দিয়েছে। দলটি এখন টেস্ট ক্রিকেটও খেলে ওয়ানডে স্টাইলে। সেখানে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটতো তাদের নখদর্পণে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ঝড়তোলা সব ক্রিকেটার দলটিতে। তাইতো এই দলটির বিপক্ষে বাংলাদেশের ফল কেমন হতে পারে সেটা এক রকম অনুমেয়ই ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের সাথে একটি শব্দ জুড়ে আছে। তা হচ্ছে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। তবে ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দলের টি–টোয়েন্টি সিরিজটি এতটাই অনিশ্চয়তার হবে তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি কোন দলই। বাংলাদেশতো নয়ই। তাই বলা চলে ক্রিকেটের চরিত্রটাই এমন।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরাও হার মানে বাংলাদেশের কাছে। শুধু হারই মানেনা, একেবারে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জায় ডুবে। অনেকেই আবার ক্রিকেটের পুরনো শব্দ হোয়াইট ওয়াশকে বাংলাওয়াশ হিসেবে মানে। পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো দেখা হওয়া দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করার অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব গড়ল সাকিবের দল। অসাধারণ এক সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। টি–টোয়েন্টি সিরিজে দ্বিতীয় কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হোয়াইট ওয়াশ করল বাংলাদেশ। আগের হোয়াইট ওয়াশ করা দলটি ছিল জিম্বাবুয়ে। সেটি ২০২০ সালে ঘরের মাঠে। তবে এবারের ইংলিশদের হোয়াইট ওয়াশের সাথে সেই হোয়াইট ওয়াশের কোন তুলনা হয় না। এই সিরিজ অবিস্মরণীয়, অতুলনীয়, ইতিহাস গড়া। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করেছিল টাইগাররা। ঢাকায় গিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়। সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেল প্রথম দেখাতেই।

তাও এক ম্যাচ হাতে রেখে। গতকালের তৃতীয় ম্যাচটি ছিল কেবল ইতিহাস গড়ার। আর সে ম্যাচটিও জিতে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা। প্রথম দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করে জেতা বাংলাদেশ দল গতকাল জিতেছে প্রথমে ব্যাট করে। এ যেন একেবারে সোনায় সোহাগা। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ১৬ রানের জয়ে নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলল বাংলাদেশ। শেষ ভাল যার সব ভালো তার প্রবাদের মতো লিটনের রানে ফেরা, মোস্তাফিজের উইকেট শিকারে মাথা, তাসকিনের ক্ষুরধার বোলিং আর সাকিবের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সব মিলিয়ে এ যেন জয়ের অসাধারণ এক রসায়ন তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। যে রসায়নের প্রতিক্রিয়ায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো প্রতাপশালী ইংল্যান্ড।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বেশ ভালোই সূচনা করে বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাশ এবং রনি তালুকদার। ৭.৩ ওভারে ৫৫ রান করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। এই সিরিজে প্রথমবার পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। যদিও সে ৬ ওভারে রান আসে ৪৬। এর মধ্য অবশ্য জীবনও পেয়ে যান রনি। আর্চারের বাউন্সারে শর্ট থার্ডম্যানে সহজ এক ক্যাচ ছাড়েন রেহান আহমেদ। তবে ১৭ রানে জীবন পেয়ে সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি রনি। বিদায় নেন ২২ বলে ২৪ রান করে। এরপর লিটন দাশের সাথে নাজমুল হোসেন শান্ত যোগ দিলে আগ্রাসী হয়ে উঠে বাংলাদেশের ব্যাটিং করতে থাকেন।

শুরুর জড়তা ঝেড়ে ফেলে জ্বলে ওঠেন লিটন। ৭ ওভার শেষে লিটনের রান ছিল ২৫ বলে ২৫। এরপরই তিনি খেলতে থাকেন নান্দনিক সব শট। ৪১ বলে পা রাখেন হাফ সেঞ্চুরিতে। টি–টোয়েন্টিতে এটি লিটনের নবম হাফ সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর জীবন পান লিটন। ডিপ মিডউইকেটে এবার ক্যাচ ছাড়েন বেন ডাকেট। এবারেও দুর্ভাগা বোলার আর্চার। লিটন এবং শান্ত যখন ব্যাটিং করছিল তখন মনে হচ্ছিল দুইশর কাছাকাছি চলে যাবে বাংলাদেশের স্কোর। কিন্তু শেষ ৫ ওভারে প্রত্যাশা মত রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ৯ থেকে ১৫, এই ৬ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৮৫ রান। জর্ডানের করা ১৭ তম ওভারের শেষ বলে লিটন ফিরেন। ততক্ষণে তার নামের পাশে জমা পড়েছে ৭৩ রান। ৫৭ বলের ইনিংসে ১০টি চার এবং একটি ছক্কার মার ছিল। আগের দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা শান্ত এবারে ৩ রানের জন্য অর্ধশতক তুলে নিতে পারেনি। ৩৬ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত।

মেরেছেন একটি চার এবং দুটি ছক্কা। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে মাত্র ২৭ রান। যেখানে সাকিব এবং শান্তর জুটিতে ১৮ বলে আসে কেবল ১৯ রান। ৬ বলে ৪ রান করেন সাকিব। আর তাতেই বাংলাদেশকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ১৫৮ রান নিয়ে।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড এক পর্যায়ে জিতে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। ক্যারিয়ারের প্রথম টি–টোয়েন্টি খেলতে নামা তানভীর ইসলাম প্রথম বলেই চার হজম করে। তবে তৃতীয় বলেই প্রতিশোধ নিয়ে নেয়। স্টাম্পিং এর শিকার করে ফিল সল্টকে ফেরান তানভীর। এরপর দুই ব্যাটিং দানব ডেভিড মালান এবং জস বাটলারের ব্যাটে একেবারে সাবলিলভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। মনে হচ্ছিল ম্যাচ যেন তাদের হাতের মুঠোয়। ১৩ ওভারে ইংলিশদের রান যখন ১০০ তখন মোস্তাফিজকে আক্রমণে আনেন সাকিব। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

মোস্তাফিজুর রহমানের শততম টি–টোয়েন্টি উইকেটটি আসে দলের দারুণ প্রয়োজনের সময়। এই পেসারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে লিটন দাশের হাতে ক্যাচ দেন। থামে ডেভিড মালানের ৪৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। কে জানতো এর পরপরই থেমে যায় ইংলিশদের পথ চলাও। পরের বলেই মিরাজের সেই জাদুকরি মুহূর্ত। অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে রান আউট হলেন বাটলার। ৩১ বলে ৪০ রান করে ফিরেন ইংলিশ দলপতি। একটু আগেও চুপসে যাওয়া গ্যালারি আবার গর্জে উঠে। মালান ও বাটলারকে পরপর দুই বলে হারিয়ে নুইয়ে পড়া ইংল্যান্ড আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ১৭ তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসেন তাসকিন। এবারো জোড়া আঘাত।

দ্বিতীয় বলে তাসকিনকে পুল করতে গিয়ে সীমানার কাছে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন মঈন আলি। ওভারের শেষ বলে ডাকেটের স্টম্প উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ১৮ বলে ৩৬ রান দরকার তখন ইংলিশদের। মোস্তাফিজের করা ১৮ তম ওভার থেকে ৫ রানের বেশি নিতে পারেননি স্যাম কারেন এবং ক্রিস ওকস। ১৯ তম ওভারে বল করতে এসে সাকিব প্রথম বলেই ফেরালেন ক্রিস ওকসকে। সে ওভারে সাকিব দিলেন ৪ রান। তুলে নিলেন একটি উইকেট। শেষ ওভারে ইংলিশদের দরকার তখন ২৭ রান। হাসান মাহমুদের করা শেষ ওভারের পরপর দুই বলে দুটি চার মেরে দেন ক্রিস ওকস। চার বলে দরকার ১৯ রান। এবার হাসান মাহমুদের বুদ্বিদীপ্ত বোলিং এর সামনে বোকা বনে গেলেন ইংলিশ ব্যাটাররা। পরের দুই বল থেকে মাত্র দুটি রান আসে। তাও বাই থেকে। শেষ দুই বলে আর কোন রান নিতে পারেনি জর্দান এবং ওকস। তাতেই ইংলিশরা থামে ১৪২ রানে। সাথে সাথে বাংলাদেশ শিবির মেতে উঠে ইংলিশদের হোয়াইট ওয়াশ করার আনন্দে। ২৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে তাসকিনই টাইগারদের সেরা বোলার। ম্যাচ সেরা হয়েছেন লিটন দাশ। আর সিরিজ সেরা নাজমুল হোসেন শান্ত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ