মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদইসলাম ও জীবনগাউছে মুখতার হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন আল কুতুবী (রহ.) জীবনের...

গাউছে মুখতার হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন আল কুতুবী (রহ.) জীবনের গল্প ও কারামত

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর দ্বীপে দ্বীনের মশাল জালিয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপকে বিশ্ব বাজারে আলোকিত করে শুয়ে আছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ, সম্রাট  আউলিয়া, মুসলেহে আজম, গাউছে মুখতার, হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন, আল কুতুবী (রহ.)। যিনি একাধারে শত বছরের হায়াতে জিন্দেগীতে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। রাষ্ট্র, সমাজ নগর, বন্দর, দেশ ও জাতির কল্যাণে যিনি সব সময় আল্লাহর রহমত কামনায় ব্যাস্ত থাকতেন। দেশের জন্য করে যাওয়া অসংখ্য ভবিষ্যত বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়। যিনি মানুষের অন্তরের ব্যাথা লুকায়িত বেদনা সম্পর্কে জানতেন এবং অবলীলায় বলে দিতেন কার কি সমস্যা এবং কিভাবে সমাধান হবে, সে দিক নির্দেশনাও অলৌকিক শক্তি দিয়ে সমাধান করে দিতেন। মানুষের চেহারা, ধন দৌলত খ্যাতি, যশ যার কাছে ছিল নগন্য বিষয়। ধনী, গরিব, আমির, রাজা প্রজা সবাই যাঁর কাছে সমান মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। সেই রকম আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ বর্তমান সময়ে খুজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার।IMG_20230214_201603

হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন আল কুতুবী (রহ.) এর অসংখ্য অগুণিত কারামত পথহারা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে। তাঁর ভবিষ্যত বাণীগুলো কেমন করে যে সঠিকভাবে এক এক করে আমরা আমাদের জীবদ্দশায় দৃশ্যমান ও হুবহু মিলে যেতে দেখছি, সেটাই মহাআশ্চার্যের বিষয়। আমাদের নিজ কানে শুনা কথা, তিনি বলতে শুনেছি, কুতুবদিয়ার পশ্চিমে চর জেগে উঠবে, বার বার বলতেন, এখন সেই দ্বীপ দৃশ্যমান (কুতুবদিয়ার পশ্চিমে নতুন দ্বীপ)। তিনি বলতেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের চারপাশে জোনাকির মত লাইট জলবে। অর্থাৎ চারিদিকে জাহজের লাইট জ্বলবে। স্পষ্ট করে বলেছেন গভীর সমুদ্র বন্দর হবে, আজকে তা দৃশ্যমান। বঙ্গোপসাগেরর তলদেশ খনিজ সম্পদে ভরপুর। তেল, গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ বঙ্গোপসাগরে আছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ ছিলোনা, তখন দরবার শরীফে আমরা বাবা চট্টগ্রাম শহর থেকে আমাদের পরিত্যাক্ত দুটো ধানের মেশিনকে জেনারেটরে রুপান্তর করে কুতবদিয়া দরবার শরিফে প্রথম জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এর আলো জ্বালিয়েছিলেন। আর তখন তিনি বলেছেন, কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। সরকারিভাবে আজ সেটাও দৃশ্যমান। বাংলাদেশ এশিয়ার হেড কোয়াটার হবে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, সেটাও দৃশ্যমান। যতবার ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কথা বলতেন, ততবারই উনার কথামত দেখতাম দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হতে। আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, আমার কিছু বান্দা এমন থাকবে যাঁদের হাত আমার হাত হয়ে যাবে, যাদের চক্ষু আমার চোখ হয়ে যাবে, যাদের জবান আমার জবান হয়ে যাবে, তখন তারা যা বলবে, তা আমার কথা হয়ে যায়, যা দেখে আমার চোখ দিয়ে দেখে। সুতরাং তখন তাদের ও আমার মাঝে কোন ফারাক থাকে না। আর সেই রকম একজন আধ্মাত্মিক মহাপুরুষ আল্লাহর প্রকৃত অলি হচ্ছেন সম্রাট আউলিয়া, গাউছে মুখতার হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন আল কুতুবী বাবাজান কেবলা (রহ.)। তিনি ১৯৮৯ অথবা ৯০ সালে আমার মনে নেই, তখন রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় আসীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। একদিন কুতব শরীফ দরবার গেলেন, তখন বাবাজান কেবলা ইহজগতে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব দরবার শরীফে সরাসরি তার বেগম সাহেবাকে নিয়ে দরবার শরীফে প্রবেশ করছিলেন। মুল ফটক দিয়ে ঢুকতেই বাবাজান কেবলা বলে উঠলেন কে আসছে, সাথে মহিলা কেন। তখন উনার খাদেমগন বললেন, বাবাজান উনি মহামান্য রাষ্টপতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং সাথে উনার বেগম সাহেবা, ফাষ্টলেডি রউশন এরশাদ। তখন বাবাজান কেবলা রেগে গেলেন এবং বললেন ওই মহিলাকে আন্দরবাড়ি পাঠানো হোক। তখন রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেব ইশারা করলেন তার বেগম সাহেবাকে। আর উনি স্ব সম্মানে আন্দর বাড়ি দিকে গেলেন। এইদিকে বাবাজান কেবলার সাথে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাহেবের সাথে সালাম কালামের পর বাবাজান কেবলার কুশল বিনিময়ের সময় এরশাদ সাহেব বাবাজান কেবলা (রহ) কে জিজ্ঞেস করলেন, বাবাজান আপনার কিছু প্রয়োজন হলে বলুন, আমি দিব। তখন বাবাজান কেবলা রেগে গেলেন এবং বললেন আমার কোন কিছুর প্রয়োজন নাই, আমি আল্লাহর অলি, আমি কাহারো মোহতাজ নই। একমাত্র আল্লাহর মোহতাজ। তোমার কিছু লাগলে বলো। বাবাজান কেবলার হুজরা খানার পিছনে একটি জানালা ছিলো জানালার অপর প্রান্তে ফাস্ট লেডি রওশন এরশাদ মেডাম দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি তখন কথাপকোত্থন শুনছিলেন। তিনি সেখান থেকেই বাবাজান কেবলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাবাজান আমাদের জানের নিরাপত্তা দিন। বাবাজান কেবলা বললেন, দিলাম তোমাদের জানের নিরাপত্তা দিলাম। আজ থেকে তোমরা আমার সন্তান। সে কথার পর দরবার শরীফ হতে এরশাদ সাহেব বিদায় নিলেন। পরবর্তীতে আমরা, আপনারা নই সারা বিশ্ব দেখলো একজন স্বৈরশাসক কিভাবে বেঁচে গেলেন? পৃথিবীর ইতিহাসে কোন স্বৈরশাসক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারানোর পর বেঁচে ছিলো কিনা জানিনা? তবে রাষ্ট্রপতি এরশাদ শুধু বেঁচে ছিলেন তা নয়, তিনি স্বসম্মানে সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ছিলেন এবং সে অবস্থানে থেকে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নাহলিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন)। বাবাজান কেবলা হযরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল মালেক মহীউদ্দীন আল কুতুবী (রঃ) সংস্পর্শে যারাই গিয়েছেন কেউ কখনো খালি হাতে ফিরে আসেননি। সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী দুজন একদিন এক সাথে কুতুব শরীফ দরবারে বাবাজান কেবলা (রহ) এর সংস্পর্শে গেলেন। তখন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সাহেব ছিলেন সম্ভবত এমপি। বাবাজান কেবলার সামনে বসা অবস্থায় হঠাৎ বাবাজান কেবলা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাহেবকে বললেন, এই আনিস তুমি বল, আমার নাতিন জামাই মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী চাঁটগার নেতা। তখন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাহেব একটু দ্বিধা দ্বন্ধে পড়ে গেলেন। কারণ তিনি তখন চট্টগ্রারে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। উনি কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এই মুহূর্তে বাবাজান কেবলা উনাকে ধমকের সুরে বললেন, বল তুমি আমার নাতিন জামাই চাঁটগার নেতা। অগত্যা তিনি বললেন, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী চাঁটগার নেতা। আর তখন সাথে সাথে বাবাজান কেবলা আবার মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী সাহেবকে বললেন তুমি বল, আমার আনিস প্লেনে চড়ে দেশে দেশে ঘুরবে, সেই মন্ত্রী এভাবে চৌধুরী সাহেব বাবাজানের শিখানো বুলি বললেন। তারপর বিদায়ের কয়েকদিন পর রাষ্ট্রপতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ দুজনকে ডেকে নিয়ে গেলেন, আর তখন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী হলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, পরবর্তীতে মেয়রও হয়েছিলেন। আল্লাহর অলিরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় মানুষের তকদির পরিবর্তন করতে পারেন। আল্লাহর এই মহান অলির পবিত্র বার্ষিক সালানা ওরশ মোবারক আগামী ১৭, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারী মহাসমারোহে কুতব শরীফ দরবার, কুতুবদিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে।

লেখক: আলহাজ্ব এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর,
এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি), আটাব
মহাসচিব, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি
সভাপতি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম মহানগর

আরও পড়ুন

সর্বশেষ