মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ: হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

আদালত প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায় দেওয়া তিন বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষরের পর শনিবার এটি প্রকাশ করেছে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট দফতর।

জামায়াতের আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন  জানান, আমরা শুনেছি, রায় প্রকাশিত হয়েছে। এখনো রায়ের কপি হাতে পাইনি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে স্থগিতাদেশের আবেদনসহ এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবো। আইন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আপিলের জন্য নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যেই এ আপিল করা হবে বলেও তিনি জানান।

একটি রিট (নম্বর: ৬৩০/ ২০০৯) আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের জারি করা রুলের চূড়ান্ত রায়ে গত ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

সে সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলেন, এ নিবন্ধন দেওয়া আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। একই সঙ্গে আদালত জামায়াতকে আপিল করারও অনুমোদন দিয়ে দেন।

তবে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন গত ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জারি করা হাইকোর্টের রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১) (বি) (২) ও ৯০ (সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। গত ১১ মার্চ জামায়াত ও ইসিকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।

গত ১১ এপ্রিল রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়ে ৯ কার্যদিবসে শেষ হয়। ওই দিন আদালতে হলফনামা আকারে ইসির জবাব দাখিল করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও বেলায়েত হোসেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসীন রশিদ ও তৌহিদুল ইসলাম।

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ১৮ এপ্রিল রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি শেষ করেন। আর গত ২৫ এপ্রিল শুনানি শেষ করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী মহসীন রশীদ। এর পর ২২ মে থেকে জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন ও অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। গত ১২ জুন শুনানি শেষ হলে যে কোনো দিন রায় দেবেন বলে জানিয়ে অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। সে সময় সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের কথা ছিল।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদনটি করেন। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে রিটে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরর্বতীতে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। ৬ সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনকারীরা বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেন। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মার্চ আবেদনটি বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১০ মার্চ সাংবিধানিক ও আইনের প্রশ্ন জড়িত থাকায় বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন দ্বৈত বেঞ্চ। ওই দিন প্রধান বিচারপতি তিন বিচারপতির সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন।

জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুইবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুইবার তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ