শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনপতেংগা সমুদ্র সৈকতের নাইট গার্ড গড়ে তুলেন ইয়াবার সাম্রাজ্য

পতেংগা সমুদ্র সৈকতের নাইট গার্ড গড়ে তুলেন ইয়াবার সাম্রাজ্য

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় গভীর সমুদ্রে ও সৈকতে অভিযান চালিয়ে আনুমানিক এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ ৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত ১ টি স্পিড বোট ও ১ টি লাইফ বোট জব্দ করেছে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম।

 “বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি বড় চালান নিয়ে স্পিডবোট যোগে সাগর পথে পতেঙ্গা সী-বীচের দিকে আসছে। উক্ত চালানটি চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানাধীন পতেঙ্গা সী-বীচ মেইন পয়েন্ট ঘাটের কিছুটা অদূরে সাগরে ১টি লাইফ বোটে অবস্থানকৃত বোটের লোকজনদের নিকট মাদকদ্রব্য চালানের কিছু অংশ বুঝিয়ে দিবে। পরবর্তীতে স্পিডবোট ও লাইফ বোটটি পতেঙ্গা সী-বীচ মেইন পয়েন্ট ঘাট হয়ে অন্যত্র যাবে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখ ০৬২০ ঘটিকায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল পতেঙ্গা সী-বীচ মেইন পয়েন্ট ঘাটে পৌঁছামাত্র র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে নোঙ্গর করা অবস্থা হতে ০১টি লাইফ বোট ও ০১টি স্পিডবোট যোগে কয়েকজন লোক পালানোর চেষ্টাকালে স্পীড বোটের ভিতরে থাকা ০২জন ও লাইফ বোটের ভিতরে থাকা ০৩জন সহ মোট ০৫জনকে এবং তাদের বহনকৃত স্পিডবোট ও লাইফ বোটটিকে আটক করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো ১। মোঃ নিজাম উদ্দিন (৩০), পিতা-মোঃ ছালেহ আহাম্মদ, সাং-দক্ষিণ পতেঙ্গা, থানা-পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম মহানগর, ০২। মোঃ আব্দুল মালেক (৫২), পিতা-মৃতঃ আব্দুল মোতালেব, সাং-খুদ্রগহিরা, থানা-আনোয়ারা, জেলা-চট্টগ্রাম, ০৩। মোঃ হাসান মিয়া (২১), পিতা-আব্দুল মালেক, সাং-খুদ্রগহিরা, থানা-আনোয়ারা, জেলা-চট্টগ্রাম, ০৪। মোঃ ওমর ফারুক (৪০), পিতা-মৃত ওবায়দুল হক, সাং-দক্ষিণ পতেঙ্গা, পোষ্ট-বিমানবন্দর, থানা-পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম মহানগর এবং ০৫। মোঃ ইমরান হোসেন (২০), পিতা-মোঃ নুর নবী, সাং-গহিরা, থানা-আনোয়ারা, জেলা-চট্টগ্রাম।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের দেখানো ও নিজ হাতে বের করে দেয়ামতে দুটি ট্র্যাভেল ব্যাগের ভিতর হতে ইট সাদৃশ স্কচটেপ, কাগজ ও রাবার দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় মোট ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।

 গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা পরষ্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবত টেকনাফের সীমান্ত এলাকা মায়ানমার হতে সাগর পথে মাদক জাতীয় দ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করে আসছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা এলাকায় বিভিন্ন কাজের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত মাদক পরিবহনের মত জগন্য কাজ করে আসছে। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা।

 জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায় যে, নাইট গার্ড ব্যক্তির নাম আব্দুল মালেক। সে স্পিডবোট ও পতেংগা সমুদ্র সৈকত এর নাইট গার্ড। বাড়ি আনোয়ারার গহিরা এবং তিনি এই এলাকার ইয়াবা সম্রাট। আট বছরের অধিক সময় ধরে নাইটগার্ডের কাজ করছে এবং দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ মাদকের কাজের সাথে জড়িত।তার সঠিক সংকেতের উপর ভিত্তি করেই স্পীড বোর্ড ইয়াবা নিয়ে সমুদ্র সৈকতে আসে এবং সে মাদকদ্রব্যের চালান গ্রহণ করে তা বিক্র‍য় করে। নিজাম উদ্দিন মূলত স্পীড বোর্ডের ড্রাইভার। সে দীর্ঘদিন যাবত স্পিড বোর্ডের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছিল। ইদানিং গার্মেন্টসে বা অন্যত্র চাকরি নেয় এবং ছুটির দিনে অবৈধ মাদক আনার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। পায়ে জন্মগত ত্রুটি ব্যক্তিটি মালেকের ছেলে মোঃ হাসান মিয়া। সে বেশিরভাগ সময় টেকনাফ এ থাকে। ইয়াবার চালান আনার জন্য টেকনাফ থেকে সে সবকিছু গুছিয়ে দেয়। মূলত এই কাজে প্রতিবন্ধী বিধায় তাকে কেউ সন্দেহ করে না। কালো শার্ট পরিহিত ছেলেটির নাম মোঃ ইমরান হোসেন। চার বছর ধরে স্পিডবোর্ডের হেলপার হিসেবে চাকরি করে। মাঝে মাঝে মাদকের চালান আনার কাজে সে সহযোগিতা করে। মোঃ ওমর ফারুক @প্যাকেজ ফারুক স্পিডবোট এর মালিক, তার অনেকগুলো বোট থাকলেও সে একটি মাত্র বোট দিয়ে শুধুমাত্র মাদক চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করে। উল্লেখিত বিষয়গুলো জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, এভাবেই তারা পরস্পরের যোগসাজশে মাদকের তথা ইয়াবার বড় চালানগুলো টেকনাফ থেকে সাগরপথে মহেশখালী-কুতুবদিয়া হয়ে চট্টগ্রামের পতেংগা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসে।

 গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ