আগামী বছরের (২০২৩ সালের) জানুয়ারি থেকে ই-নামজারি ব্যবস্থার মতো সারা দেশে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাতেও শতভাগ ডিজিটাল অর্থাৎ অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড ডিজিটাল সার্ভিস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। এরআগে ই-নামজারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। নামজারি সিস্টেমে আবেদন, ফি প্রদান এবং আবেদন মঞ্জুর শেষে প্রয়োজনীয় দলিলাদি, যেমন ডিসিআর ও খতিয়ান সংগ্রহ প্রক্রিয়া সবকিছুই এখন ডিজিটাল। এছাড়া আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে ই-নামজারি ব্যবস্থায় ম্যানুয়ালি/নগদ টাকায় কোনো ফি জমা নেয়া হবে না।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া কেবল দখল করে জমির মালিকানা এই যুগে অবিচার। অবৈধ ভূমি দখল সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’র খসড়া তৈরির কাজ করছে ভূমি মন্ত্রণালয় (দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ানসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র)।
তিনি বলেন, এই আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে পরীক্ষণের জন্য; এরপর আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠানো হবে। কেউ যতো বছরই জোর করে কোনো জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বেআইনি দখলদারের মালিকানা এই আইনে কখনোই তা স্বীকৃতি দেয়া হবে না।
আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
জরিপ কার্যক্রম যথাযথ না হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মামলা-মোকদ্দমা হয় উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, এজন্য বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ড্রোনসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিডিএস পাইলট হিসেবে পটুয়াখালী ও বরগুনায় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু পরীক্ষামূলক ফলাফল হাতে এসেছে, যা প্রায় ৯৯ শতাংশ নির্ভুল। এটা পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করে সারা দেশে একযোগে শিগগিরই বিডিএস শুরু করা হবে। বিডিএস শেষ হলে মামলা-মোকাদ্দামা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে বলে ভূমিমন্ত্রী মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে একযোগে বিডিএস উদ্বোধন করবেন বলে এই সময় মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
জাতীয় জীবনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজের গুরুত্ব ও এর কর্মপরিধির ব্যাপকতা বোঝাতে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় অনেক বড় মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের মানচিত্র যতো বড়, ভূমি মন্ত্রণালয় ততো বড়। এখানে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
যেহেতু সারাদেশ থেকে ভূমি অফিস সম্পর্কে অভিযোগ আসে, সেহেতু মন্ত্রী হিসেবে সারাদেশে সারপ্রাইজ ভিজিট করা অত্যন্ত জটিল উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, ভূমি প্রশাসনে সিস্টেম উন্নয়ন করে গুণগত পরিবর্তন আনাই সর্বোত্তম।
তিনি বলেন, আমি চিন্তা করলাম আরও গুণগত পরিবর্তন করতে হবে আমাদের; এখানে সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে এবং সিস্টেমকে যদি আমরা ডেভেলপ করে নিতে পারি, আমার কারো সাথে কারো কথা বলার প্রয়োজন নেই। সিস্টেম সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে এবং সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষ সেবা পেতে থাকবেন।