প্রাথমিক চিকিৎসার অর্থ একজন অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির সর্বপ্রথম যে সহায়তার প্রয়োজন হয়। আর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টাই প্রাথমিক চিকিৎসার লক্ষ্য। সম্ভব হলে অবস্থার উন্নয়ন, নিদেনপক্ষে গুরুতর অবনতি রোধ করা। প্রাথমিক চিকিৎসা সবসময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হতে হবে, এমনটা জরুরি নয়। বরং হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানোর সময়টুকুতে করণীয় নির্ধারণ এবং আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার সঙ্গে সেটি সামাল দেওয়াটাই প্রাথমিক চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত। এভাবে জরুরি মুহূর্তে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে যেকোনো সাধারণ মানুষ আরেকজনের প্রাণ বাঁচাতে পারে। তবে জীবন বাঁচাতে গিয়ে উল্টো যাতে ক্ষতি না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকা জরুরি। এজন্য প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারীর সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রয়োজন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক চিকিৎসায় ফার্স্ট এইড বক্সের কিছু উপকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও জরুরি। দেশে ফার্স্ট এইড বক্স পরিচিত হলেও প্রশিক্ষণ বা জরুরি মুহূর্তে করণীয় বিষয়গুলো খুব একটা পরিচিত নয়। তবে আগ্রহী ব্যক্তিদের এবং বিশেষ দিন সামনে রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়োজন ও তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আগ্রহী শিক্ষার্থী ও যুবাদের নিয়ে এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় বলে জানালেন রেড ক্রিসেন্ট যুব চট্টগ্রামের নির্বাহী সদস্য ইস্তাকুল। প্রশিক্ষণে প্রাথমিক চিকিৎসার মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, উপযুক্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণে প্রাথমিক চিকিৎসার পদক্ষেপটি অধিক কার্যকর হতে পারে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক চিকিৎসার পরিধি বিস্তর। রান্নাঘরের আগুনের আঁচে হাত পুড়ে ফোসকা পড়া বা ছুরিতে হাত কেটে যাওয়া থেকে অনেক বড় সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবি, বন্যা থেকে সুনামি, যেকোনো সংকটপূর্ণ মুহূর্তে, যেকোনো অসুস্থতায় প্রথম ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপই প্রাথমিক চিকিৎসার অন্তর্গত।
ফার্স্ট এইড বক্স : ফার্স্ট এইড বক্সকে প্রাথমিক চিকিৎসার মূল অনুসঙ্গ ধরা হয়। বাড়িতে একটি ফার্স্ট এইড বক্স থাকলে তা কাজে লাগবেই। এমনকি ভ্রমণ করার সময়ও একটি ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখা যায়। এতে অনেক কিছুই থাকতে পারে। যেমন গজ, ব্যান্ডেজ, সিজার, ডেটল, স্যাভলনের মতো অ্যান্টিসেপ্টিক, কিছু জরুরি ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, ডায়াবেটিক রোগীর জন্য চিনি ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে প্রাথমিকভাবে ছোটখাটো দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সম্ভব, যাতে একজন মানুষ কোনোভাবে আহত বা হঠাৎ করে অসুস্থ হলে তাকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায়। কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। যেমন ব্লাডপ্রেশার মাপার মেশিন, ডায়াবেটিস রোগীর সুগার চেক করার জন্য গ্লুকোমিটার। এসব সরঞ্জামের সাহায্যে প্রাথমিকভাবে অবস্থা সামাল দিয়ে কিছু সময় পাওয়া যায়, যাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনার প্রকারভেদ নানারকম হলেও বর্তমানে সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু সবচেয়ে প্রাণঘাতী হলো সড়ক দুর্ঘটনা। অথচ আঘাতের এক ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আজ বিশ্ব প্রাথমিক চিকিৎসা দিবস । বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় শনিবার দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতেই বিশ্বব্যাপী একযোগে এ দিবসটি পালন করা হয়।
