শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদটপবঙ্গবন্ধু জাতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন 

বঙ্গবন্ধু জাতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সরকারে ছিলেন, কিন্তু জাতির পিতা হিসেবে এই সাড়ে তিন বছরে, জাতিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে যা যা দরকার সবগুলো তিনি সমাধা করে গেছেন। আর সেই সাথে আমাদের দিকনির্দেশনাও দিয়ে গেছেন।’
জাতির ভিত্তি রচনার জন্য দরকার একটা শাষণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু মাত্র নয় মাসের মাথায় একটা অপূর্ব শাষণতন্ত্র আমাদের দিয়ে গেছেন। অথচ পাকিস্তানের শাষণতন্ত্র তৈরি করতে লেগেছে নয় বছর, আর আমেরিকার শাষণতন্ত্র তৈরি করতে লেগেছে তেরো বছর। বঙ্গবন্ধুর কার্যকর নেতৃত্বের জন্যেই মাত্র দুই মাসের মাথায় আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সৈন্য ফিরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর কারণেই সাড়ে তিন বছরেই আমরা ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। প্রতিটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, প্রত্যকের সদস্যপদ এমনকি জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন করি। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতৃত্বের কারণে।
আজ (সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০২২) রাজধানীর বেইলি রোডস্থ  ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ প্রতিপাদ্যের উক্ত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য শেখ কবির হোসেন।
স্মরণসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরো বলেন, ‘পোয়েট অফ পলিটিক্স খ্যাত বঙ্গবন্ধু কেবল এ দেশের নয়- তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের নেতা, দেশে দেশে নিপীড়িত জনতার সংগ্রামী চেতনার এক জীবন্ত কিংবদন্তী। আর তাই, বঙ্গবন্ধুকে হারানোর বেদনা কেবল এ দেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে ধ্বনিত হয়, বিশ্বের নেতৃবৃন্দও শোকার্ত হন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ঘাতকদের দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার জন্য যা যা করার, আমি যতদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছি এই প্রচেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যাবো। বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের একটি ফাউন্ডেশন আছে- বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল তাদেরও বিচারের আওতায় আনার জন্য বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু ‘নন-এলাইন্ড ফরেন পলিসি’ গ্রহণ করেন। এটা যে আমাদের জন্যে কত মঙ্গলজনক, আমরা আজও তাঁর ফরেন পলিসি নিয়ে চলছি। বঙ্গবন্ধু সে সময়ে অনেক ধরনের চাপের মধ্যেও ‘নন-এলাইন্ড পলিসি’ অবলম্বন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছেন- পিস ইজ ইম্পারেটিভ ফর ডেভেলপমেন্ট।সে জন্য তিনি সবসময় শান্তির জয়গান গেয়েছেন। আমরা শান্তি চাই। শান্তি উন্নয়নের একটি বড় সহায়ক। আমরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধুর এই শান্তির প্রচেষ্টাকে জোর দিতে চাই। বিশ্বব্যাপী যে সংঘাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে আছে সেগুলো যাতে কমানো যায় সেজন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ করার সুযোগ আছে’ বলে উল্লেখ করেন ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাটি ও মানুষকে সবচেয়ে ভালবেসেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষকে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে কোন কিছুই দাবায়ে রাখতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সবক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, আর তার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছেন। এর ফলে আমরা বিশ্বে একটা বিশেষ অবস্থান অর্জন করেছি, একটা ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি। সম্প্রতি আমরা পদ্মা সেতুর মতো বিরাট সেতু নিজেদের পয়সায় তৈরি করেছি।
ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়ে দেশে অভাব অনটন দূর করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তখনই কিছু কুচক্রী মহল বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে হয়তো আমরা বহু বছর আগেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটা উন্নত, সমৃদ্ধশালী, স্থিতিশীল, অসাম্প্রদায়িক অর্থনীতি হবে- যেখানে অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য যেন নিশ্চিত হয়- এই প্রচেষ্টাই শেখ হাসিনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ এ অবস্থায় ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের কারণে দেশে বিদেশে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার শুরু করেছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে এসব অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলারও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, এমপি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল তার জন্য। বাঙালির প্রতি তার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। সেজন্যই হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন তিনি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা। সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের যেসব গুণের কথা উল্লেখ করেছেন শেখ মুজিবের মধ্যে সেসব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। শেখ মুজিব আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, প্রজাপ্রেমী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। সেই শুদ্ধ চিত্তের মানুষটিকেই কয়েকজন স্বার্থপর-ঘাতক সপরিবারে হত্যা করল- যা শুধু বাঙালির ইতিহাসেরই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও একটি কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড শুধু একটি হত্যাকাণ্ডই নয়, একটি স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক জাতিকে পরাধীন ও সাম্প্রদায়িক করার পাশবিক চক্রান্তও বটে। আমরা যদি মুজিব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রগুলো বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব- একটি স্বাধীন জাতিকে মূলত তারাই ধ্বংস করতে চায় যারা সাম্রাজ্যবাদের পূজারী বা সাম্রাজ্যবাদের মদদদাতা। সুতরাং যারা সাম্রাজ্যবাদী এবং যারা সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক তারাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারী হতে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নকারী পর্যন্ত সবাই অপরাধী, সবাই মুজিব হন্তারক।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও বঙ্গবন্ধু জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর স্বপ্ন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়তে বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নে জাতির পিতা যুগোপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েক বছরেই তাঁর নেতৃত্বে ও তাঁর প্রজ্ঞায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় বাংলাদেশ সদস্যপদ লাভ করে। পাশাপাশি প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে শুরু করে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ খান, এমপি এবং বিশিষ্ট লেখক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত একটি অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষাংশে বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী সকল শহিদের রুহের মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে দোয়া করা হয়।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ