বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
প্রচ্ছদটপএক জীবন্ত কিংবদন্তী সাইফুল আলম মাসুদ

এক জীবন্ত কিংবদন্তী সাইফুল আলম মাসুদ

“এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন”- মানুষ মরণশীল। কিন্তু মহৎ কিছু কর্ম সেই মরণশীল মানুষকে নশ্বর পৃথিবীতে অমরত্ব দেয়। কর্মেই মানুষ বেঁচে থাকে বলে মানবকুলের প্রতিটি মানবের বাসনায় লুকিয়ে থাকা একটি কাঙ্খিত স্বপ্ন হল কবির সেই প্রবাদবাক্যটির আদলে নিজের ছোট্ট জীবনটাকে গড়ে তোলা। কিন্তু ক’জনইবা পারেন এমন কাঙ্খিত জীবন গড়তে? কখনো ক্ষুদ্রাকার সাধ্য সাধের বিশালতাকে যেমন গ্রাস করে, তেমনি কখনো আবার সাধ্যের বিশালত্বেও স্বপ্ন সাধের অপমৃত্যু ঘটে মনের সংকীর্ণতার কারনে। তথাপিও, কিছু মানুষ কদাচিৎ ব্যতিক্রম, যাদের সাধ ও সাধ্যের অপূর্ব সংমিশ্রণে হাজারো অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটে। যখন স্বার্থপর পৃথিবীর আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলো কেবল নিজেদের-ই নিয়েই ব্যস্ত থাকে, ঠিক তখন-ই পরোপকারী হাতেম তাঈ কিংবা দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের আদলে গড়া এই সব মহান মানুষগুলোর অাবির্ভাব ঘটে, যাদের জন্ম আর কর্ম-ই যেন কেবলি পরের তরে। তাঁদের সাধ-স্বপ্ন এবং সাধ্যটাও যেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এমন মহান মানুষদের-ই একজন দেশসেরা শিল্প প্রতিষ্ঠান এস.আলম গ্রুফের কর্ণধার শিল্পপতি সাইফুল আলম মাসুদ। যে নামটির সাথে জড়িয়ে আছে লক্ষ মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি এবং ভালবাসা। জড়িয়ে আছে হাজারো অসহায় পরিবারে স্বপ্নের বীজ বুনে দেওয়ার একটি অতিমানবীয় গল্প।

S alamআসুন জেনে নেওয়া যাক সেই অতিমানবীয় গল্পের রচয়িতা জনাব সাইফুল আলম মাসুদের জন্ম, উত্থানের প্রারম্ভিকতা, সফলতা এবং কিছু পরোপকারী কাজের অনন্য দৃষ্টান্ত।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতঃ

জনাব সাইফুল আলম মাসুদের জন্ম ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তাঁর পিতা জনাব মরহুম মোজাহের আনোয়ার এবং মাতা চেমন আরা বেগম। একসময়ের প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর মামা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের বর্তমান মাননীয় ভূমিমন্ত্রী জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তাঁর আপন মামাতো ভাই।

শিক্ষাঃ জনাব সাইফুল আলম মাসুদ ১৯৮৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

মাতৃভক্ত সাইফুল আলম মাসুদঃ

তাঁকে চিনেন এমন অনেকের কাছে শুনেছি, মহান এই লোকটি অসম্ভব রকমের মা ভক্ত। লোকমুখে শোনা, তাঁর এই উত্থানের পেছনে সততা, পরিশ্রম এবং মহৎ চিন্তাচেতনার পাশাপাশি অন্যতম কারন তাঁর মহীয়সী মায়ের অাশির্বাদ। শুনেছি, এই সময়েও তিনি প্রতিদিনকার মত যেকোন নতুন কাজ মায়ের আশির্বাদ নিয়েই তবে শুরু করেন। তাঁর মহীয়সী মাও যথেষ্ট পরহেজগার এবং পরোপকারী বলে জেনেছি। এমনও জেনেছি, তাঁর মায়ের কাছে কেউ চাকরী বা সাহায্যের জন্য সুপারিশের বাহনা ধরলে তিনি সাথে সাথেই তা ছেলের কাছে নির্দেশনাকারে বলে দেন। কেবল মায়ের অনুরোধেই কতশত লোককে যে তিনি চাকরী দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন তার কোন হিসেব নেই। কথিত আছে, তিনি তাঁর মহীয়সী মায়ের প্রতিটি আদেশ নিষেধ এখনোও অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। আল্লাহ তাঁর মহীয়সী মা’কে সুস্থতার সহিত দীর্ঘজীবী করুক।

ব্যবসায়ীক হিসেবে আত্মপ্রকাশেই সফলতার স্রোতঃ

কথিত আছে, মাতৃভক্ত এই মহান মানুষটি তাঁর রত্নগর্ভা মায়ের আশির্বাদ নিয়ে আজ থেকে প্রায় তিন যুগ আগে ১৯৮৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে অন্যান্য শিক্ষিত যুবকদের মত চাকরীর পেছনে না ঘুরে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়িক জোন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ট্রেডিং বিজনেস তথা পণ্য বেচাকেনার মাধ্যমে তাঁর লালিত স্বপ্নের শুভ সূচনা করেছিলেন।
মায়ের আশির্বাদকে আলাদীনের চেরাগ বানিয়ে যে উড়ন্ত সূচনা করেছিলেন তা থেকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এছাড়াও তিনি বিদেশ থেকে তেল, চিনি, গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন।

শিল্পোদ্যোক্তা হিসেব আবির্ভাব এবং সফলতাঃ

১৯৯৫ সালে তাঁর মামা প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি মরহুম আখতারুজ্জাম চৌধুরীর প্রেরণা ও সহযোগিতা নিয়ে এস.আলম ষ্টীল লিঃ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্ত হন শিল্প ব্যবসার সাথে। কর্ণফুলী নদীর তীরে যেখানে প্রথম গড়ে তুলেছিলেন শিল্প প্রতিষ্ঠান সেই অখ্যাত মইজ্জারটেক এখন বিখ্যাত কেবল এস.আলম গ্রুপের বিবিধ শিল্পকারখানার কারনে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মইজ্জারটেক সহ দেশের বিভিন্নস্থানে তিনি যেসমস্ত শিল্পকারখানা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সফল শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার কাতারে নাম লেখান সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- এস.আলম সিমেন্ট লিঃ, এস.আলম সয়াসীড এক্সট্রাকশন প্ল্যান্ট লিঃ, এস.আলম ভেজিটেবল অয়েল লিঃ, এস.আলম সুপার এডিবল অয়েল লিঃ, এস.আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ, এস.আলম ট্যাংক টার্মিনাল লিঃ, এস.আলম কোল্ড রোল্ড ষ্টীল লিঃ, গ্যালকো ষ্টীলস(বিডি) লিঃ, এস.আলম প্রাকৃতিক গ্যাস কোং লিঃ, শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস কোং লিঃ, এস.আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ, এস.আলম পাওয়ার জেনারেশন লিঃ, এস.আলম লাক্সারী চেয়ার কোচ সার্ভিস লিঃ, এস.আলম ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মিলস লিঃ, এস.আলম প্রপার্টিজ লিঃ, হাসান আবাসন (প্রাঃ) লিঃ, ওসান রিসোর্ট লিঃ, প্রাসাদ প্যারাডাইস লিঃ, এস.আলম হ্যাচারী লিঃ, ফতেহবাদ ফার্ম লিঃ, এস.আলম ব্রাদার্স লিঃ, এস.আলম ট্রেডিং কোং প্রাঃ লিঃ, এস.আলম এন্ড কোম্পানী লিঃ, সোনালী কার্গো লজিস্টিক প্রাঃ লিঃ, সোনালী ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিঃ, এস আলম হ্যাচারী লিঃ ইত্যাদি। এত অল্পসময়ে এত সংখ্যক শিল্পকারখানা তৈরী করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার সৌভাগ্য খুব কম মানুষের জীবনে ঘটেছে। তাইতো তিনি আজ দেশসেরা শিল্প উদ্যোক্তা।

পরিবহন সেক্টরে অবদান এবং সাফল্যঃ

ট্রেডিং ব্যবসায় সফলতার পর জনাব সাইফুল আলম মাসুদ এস.আলম বাস সার্ভিসের মাধ্যমে পরিবহন সেক্টরের সাথে সংযুক্ত হন। তাঁর মালিকানাধীন এই বাস সার্ভিসটি দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে। গুণগত মানের সার্ভিস এবং পর্যাপ্ততার পরিমানে অল্পসময়ের মধ্যে এস.আলম সার্ভিস সমগ্র দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাস এবং সন্তুষ্টির প্রতীক হয়ে উঠে। এত বিপুল সংখ্যক বাস নিয়ে একসাথে সমগ্র দেশে পরিবহন সেক্টরের ব্যবসা শুরু করার নজির খুব কমই পাওয়া যায়। সেই সাথে সমগ্র দেশে সেবার মান এবং প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ততা ঠিক রাখাও ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় সেবার মান অক্ষুন্ন রেখে অদ্যাবধি এই পরিবহনটি দেশের পরিবহন সেক্টরে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকিং সেক্টরে অবদানঃ

শিল্প ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বেসরকারী বানিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করলে সেখানেও সফলতার পরশপাথরের ছোঁয়া পান। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ক্রমান্বয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক লিঃ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ প্রতিষ্ঠা করে দেশের অর্থনৈতিক অবকাটামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত আরো কিছু বানিজ্যিক ব্যাংকের বৃহৎ এবং আংশিক মালিকানা কিনে নেন। যেগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিঃ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ, এবি ব্যাংক লিঃ এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ অন্যতম। এছাড়াও তিনি নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স লিঃ, রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিঃ সহ অসংখ্য বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এসব ব্যাংক এবং অার্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুতি করণে প্রশংসনীয় অবদান রেখে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত সম্মান এবং গৌরবের। লোকমুখে শোনা যায়, এই বিরল সম্মান অর্জনের পেছনে রয়েছে তাঁর সততা, কর্মের প্রতি ভালবাসা এবং নিষ্ঠা।

বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বৈদ্যুতিকখাতের একটি সম্ভাবনাময়ী নিদর্শনঃ

বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারার পশ্চিম বড়ঘোনায় নির্মাণাধীন এস.আলম পাওয়া প্ল্যান্ট। নিজস্ব অর্থায়নে কেনা ৬’শ একর জায়গা জুড়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না সেবকো এইচটিজি’র সঙ্গে যৌথভাবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শিল্প প্রতিষ্ঠান এস.আলম গ্রুপ। কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭০ শতাংশের মালিকানা এস.আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জনাব সাইফুল আলম মাসুদের। ৩০ শতাংশের মালিক চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, জার্মান ও আমেরিকান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। জাহাজ থেকে কয়লা নামানোর জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে তৈরি করা হবে বেসরকারি বন্দরের মতো একটি জেটি। প্রকল্প চলাকালীন এখানে কাজ করবে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে কাজ করবে প্রায় ৬শ’ জন। এই প্রকল্পের একটি অন্যতম অাশার দিক হল, বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে এটি এমন এক প্রকল্প যেখানে বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়নি। ফলে ব্যাংকিং খাতে বা অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সামান্যতমও আশংকা নেই। বরং; এটি দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে ধারনা করা যায়।
সর্বোপরি এই প্রকল্প নিয়ে জনাব সাইফুল আলম মাসুদের একটি মন্তব্য উল্লেখ না করলে তাঁর দেশপ্রেম এবং উদারতার সঠিক পরিমানটিকে অবজ্ঞা করা হবে বলে আমি মনে করি। যেমন, তিনি বলেছিলেন, “আমি সরকারের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাব, এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের সবটাই যেন চট্টগ্রামে বিতরণ করা হয়।’’

কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে অবদানঃ

আমি ব্যক্তিগতভাবে যে বিশেষ গুণটির জন্য প্রথিতযশা এই গুণীজনকে মন থেকে শ্রদ্ধা করি, তার অন্যতম কারন হল দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে তাঁর অতিমানবীয় ভূমিকা। বেশির ভাগ স্বাবলম্বী মানুষ যেখানে আত্মকেন্দ্রিক সেখানে মহান এই মানুষটি নিজ এলাকার হাজারো শিক্ষিত এবং যেকোন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ লোকদের যোগ্যতা অনুযায়ী বেঁচে থাকার অবলম্বন তৈরী করে দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণে এক যুগান্তকারী মানবীয় নজির স্থাপন করেছেন। কেবল শিক্ষিত ও অভিজ্ঞদেরকেই অবলম্বন তৈরী করে দিয়েছেন তা নয়, নিজ এলাকার অসংখ্য অনভিজ্ঞ এবং অশিক্ষিত লোকদেরকেও চাকরীর সুযোগ দিয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যা দেশের ইতিহাসে বিরল। কর্মসংস্থান সংকটের এই দেশে নিজ উদ্যোগে ঢাকডোল পিটিয়ে বিনা পয়সায় নিজ এলাকার লোকদের অনবরত চাকরী দিয়ে যাচ্ছেন এমন মানবিক লোকের সন্ধান দেশতো দূরের কথা গোটা বিশ্বে দ্বিতীয় আরেকজন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। খেয়াল করলেই দেখা যায়, তাঁর গড়া প্রতিটি ব্যাংকে নিজ এলাকা চট্টগ্রামের প্রায় ৯৫% লোক চাকরী করেন। তাইতো তিনি তাঁর নিজ এলাকার মানুষের কাছে বিশ্বাস, ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব। আমি যতদুর জানি, পটিয়ায় জন্মগ্রহণকারী কোন শিক্ষিত যুবককে পড়ালেখা শেষ করে চাকরীর জন্য চিন্তা করতে হয়না, চাকরীর পেছনে ছুটতে হয়না। শুধুমাত্র এই মহান মানুষটির কারনে চট্টগ্রামের শিক্ষিত ছেলেমেয়দের কাছে চাকরী এখন সোনার হরিণ নয়, এ যেন হাতের মুঠোয় চলে আসা লালিত স্বপ্নের বাস্তবতা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিক কত সংখ্যক মানুষ কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে তার সঠিক হিসাব আমার কাছে না থাকলেও সংখ্যাটা যে পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে তা অনায়াসে বলা যায়।

ধর্মীয় এবং সামাজিক ক্ষেত্রে অবদানঃ

মহান এই মানুষটি যে সেক্টরেই হাত দিয়েছেন, সেই সেক্টরেই সফলতা পেয়েছেন। খুবই অল্পসময়ে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এই মানুষটি কখনোই নিজেকে আত্মকেন্দ্রিতায় আবদ্ধ করে রাখেননি। তিনি হয়তো হৃদয়াঙ্গম করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ধন দিয়ে মনের পরীক্ষা করেন। তাই হয়তো তিনি তাঁর অর্জিত সার্বিক সক্ষমতা দিয়ে মানুষের কল্যাণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। এরি অংশ হিসেবে তিনি দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিকখাতে অবদানের পাশাপাশি ধর্মীয় এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বিবিধ মহৎ কর্মের মাধ্যমে নশ্বর এই পৃথিবীতে নিজেকে অমর করে রাখার সেই অতিমানবীয় গল্পের নায়ক হিসেবে প্রায়-ই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। তিনি অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং এসবে পর্যাপ্ত অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। অসংখ্য শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান করে দিয়ে সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি ও সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিকে মজবুত করণেও রেখেছেন যুগান্তকারী ভূমিকা। নিজ এলাকা পটিয়ার অগনিত ব্যক্তি এবং পরিবারের বিবিধ মৌলিক সমস্যা নিরসনে তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরী এবং প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত অার্থিক সহযোগিতা করে সেই সব মানুষের কাছে হয়েছেন স্বপ্ন পূরণের এক মহানায়ক। কথিত অাছে, তাঁর কাছ থেকে কেউ কখনো খালি হাতে ফিরেননি। তাইতো তিনি তাঁর নিজ এলাকা পটিয়ার প্রতিটি মানুষ এবং পরিবারের কাছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রতীক। শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর এলাকার অসংখ্য নারীদেরকেও তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মের সুযোগ করে দিয়ে তাদেরকেও দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর করে দেশের অর্থনৈকিত উন্নয়নে অবদান রাখতে সহযোগিতা করেছেন।

ধর্মীয় পূণ্য কাজের একটি বিরল দৃষ্টান্তঃ
তিনি যে একজন উঁচুমানের ধর্মপরায়ণ এবং পূণ্যের পুঁজারী সে ব্যাপারে একটি বাস্তব উদাহরন হল, তাঁর নিজ এলাকার দুইশজন গরীব মুসলমানকে নিজের টাকায় পবিত্র হজ্বব্রত পালন করিয়েছেন। অনেক সামর্থবান মানুষ যেখানে ৪/৫ লক্ষ টাকা খরচের ভয়ে ফরজ হজ্ব পালনের সাহস করেননা, সেখানে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে একসাথে দুইশজন গরীব মুসলমানকে হজ্ব করার সুযোগ দিয়ে পূণ্যের যে অনন্য কীর্তি স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মানুষ দ্বিতীয়টি খোঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আমি নিশ্চিত, এমনটি পাওয়া যাবেনা।

আমার দেখা মাসুদ স্যার এবং মূল্যায়ণঃ

সে অনেক অাগের কথা, ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল। ছাত্রজীবনের এই সময়টুকুতে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের অস্থায়ী বাসিন্দা ছিলাম। থাকতাম ঐ এলাকার পুরাতন পাক বিল্ডিং এর টপ ফ্লোরের একটি কক্ষে। যেখান থেকে আছাদগঞ্জে অবস্থিত এস.অালম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুরত্ব ছিল মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা। সেই অফিসে চাকরী করতেন আব্দুল মাবুদ ভাই। তিনিও পটিয়ার লোক। রাজনীতির একই মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম বলে তার সাথে সম্পর্কটা বেশ ভালই ছিল। তাই মাঝেমধ্যে এস.আলম ভবনে যাওয়া হত। সেই ভবনের চতুর্থ কিংবা পঞ্চমতলায় ছিল নামাজের জন্য নির্ধারিত এক বিশাল কক্ষ। সেখানেই মাসুদ স্যার তাঁর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নামাজ পড়তেন। একদিন মাবুদ ভাইয়ের সাথে আছরের নামাজ পড়তে গিয়ে সেখানেই প্রথম দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল মহান এই মানুষটিকে। আমি বরাবরই সফল এবং মহৎ মানুষদের ভালবাসি বলে নিজের মধ্যে একটা প্রচন্ড কৌতুহলও ছিল ওনাকে দেখার। সুঠাম দেহের অধিকারী। দেখতেও বেশ অাকর্ষনীয়। কপালে কালো দাগটা দেখেই বুঝেছিলাম পাক্কা নামাজি এবং পরহেজগার। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে যেমনটি দিয়েছেন, তিনিও সেই দানের শোকরিয়া আদায় করতে ভুলেননা যেন! শিল্পপতিদের মধ্যে এমন আল্লাহ ওয়ালা লোক খুব কমই দেখেছি। শুধুমাত্র তাঁকে দেখার জন্য কতবার যে, পাশের মসজিদে নামাজ না পড়ে এস.আলম ভবনের সেই কক্ষে নামাজ পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। কতবার বুকে সাহস সঞ্চয় করে এস.আলম ভবনে গিয়েছিলাম একটি চাকরী চাইব বলে! কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও নিজে পটিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ার সংকোচবোধের কারনে কখনোই তাঁর সামনে গিয়ে কথা বলতে পারিনি, চাকরীও চাইতে পারিনি। পটিয়ার লোক হলে ব্যাংকিং সেক্টরে এতদিনে হয়তো আমার নামের শেষে এভিপি পদবী লেখা থাকত! যা-ই হউক, ২০০৫ সালের শেষের দিকে খাতুনগঞ্জ থেকে স্থায়ীভাবে চলে আসার পর এই মহান লোকটিকে আর কখনোই দেখার সুযোগ হয়নি।

তবে দীর্ঘ পাঁচবছর পর ২০১০ সালে আবারো একবার সুযোগ হয়েছিল তাঁকে কাছ থেকে দেখার। কিন্তু নিয়তি বিমূখ ছিল বলে তা আর হয়নি। সেবার গিয়েছিলাম আমাদের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ জনাব আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি’র রেফারেন্সে উখিয়ার কোর্টবাজারে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে চাকরীর জন্য। সাথে আমার শ্বশুর এবং হোটেল মিশুকের মালিক জনাব বদিউজ্জামান সাহেবও ছিলেন। আমাদের দু’জনকে ওয়াইটিং রুমে রেখে আমার সিভি নিয়ে জামান সাহেব নিজেই ওনার কক্ষে ঢুকেছিলেন। বের হয়ে বলেছিলেন, চাকরী পাক্কা। ওনাকে না দেখেই ওখান থেকে প্রস্থান। বিশ্বাস এবং আশায় থাকলেও পরে কোন এক অজ্ঞাত কারনে সেই চাকরীটা আর হয়নি! কিন্তু, এই মহান মানুষটির প্রতি ভাললাগা, ভালবাসা এবং শ্রদ্ধার এতটুকুও কমেনি। বরং; সময়ের ব্যবধানে তাঁর মহৎ কর্ম আর অতিমানবীয় কিছু গুণাবলীর কারনে তা বৃদ্ধি-ই পেয়েছে বৈকি।

যবনিকা ও আমার প্রত্যাশাঃ

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রাখা এই মহান মানুষটির অগনিত মহৎ কর্মের পরিধি সম্পর্কে কোন লেখা-ই মূলতঃ তাঁর যথার্থতা ফুটিয়ে তুলতে সম্ভবপর নয়। যখন কোন মানুষের মহৎ কর্মগুলো উপমার সীমাপরিসীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন শ্রদ্ধাভরা অনুভবই কেবল হতে পারে সেই মানুষটির মহৎ কর্মগুলোর যথার্থ স্বীকৃতি। তাই আমার এ লেখার অনিচ্ছাকৃত যবনিকা মানে তাঁর অফুরন্ত মহৎ কর্মগুলোর অবদানের কাহিনী তুলে ধরার শেষ নয়, তা সম্ভবও নয়। তবুও শেষ করব আগামীর কোন সুযোগের প্রত্যাশায়। আমি আশাবাদী, আগামীতে কেউ না কেউ আরো সুন্দরভাবে তাঁর মহৎ কর্মগুলোকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে তু্লে ধরবেন। যাতে এই মানুষটিকে অনুকরণ ও অনুসরন করে বর্তমান এবং আগামীর কোন সামর্থবান মানুষ এই সমাজ এবং এই দেশের জন্য কিছু করতে পারেন।

দুর্লভ চাকরীর বাজারে একটি চাকরী যেখানে সোনার হরিণ, সেখানে এই মানুষটি হাজারো বেকারদের চাকরী দিয়েছেন কোন বিনিময় ছাড়া। এই যুগের মানুষগুলো যেখানে আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমগ্ন, সেখানে তিনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য করে যাচ্ছেন অকাতরে। তিনি যেমন নিজ এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণে বিনিময়হীন অবদান রেখে যাচ্ছেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা বা জেলায় যদি একজন করে মানুষ জন্ম নিতেন তাহলে প্রিয় বাংলাদেশে বেকারত্বের অভিশাপ বলে কিছু থাকতনা। তবেই পাল্টে যেত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশের সার্বিক চিত্র। আর আমরা পেতাম স্বনির্ভর এক সোনার বাংলাদেশ। তাই প্রত্যাশা, বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় জন্ম হউক একজন সাইফুল আলম মাসুদের।

আমি এই মহান মানুষটির সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।মৃত্যুর পর যেন নামাজে ঘষে যাওয়া কপালের কালো দাগটি নুরের ঝলকানিতে প্রজ্বলিত হয়।

লেখকঃ মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ব্যাংকার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ