শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপচুয়েটে স্বপ্ন ডানা মেলারঅপেক্ষায় সরকারের ড্রিম প্রজেক্টশেখ কামাল আইটি বিজনেসইনকিউবেটর

চুয়েটে স্বপ্ন ডানা মেলারঅপেক্ষায় সরকারের ড্রিম প্রজেক্টশেখ কামাল আইটি বিজনেসইনকিউবেটর

মানবসভ্যতার ইতিহাসে ১৭৬৩-১৭৭৫ সময়কালেজেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলেকারখানার মেশিনের ব্যবহার ও যান্ত্রিক শক্তি দ্বারামানুষের ‘কায়িক শক্তির প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়েপ্রথম শিল্পবিল্পবের সূচনা হয়েছিল। ১৮৭০-১৯১৪সময়কালে বিজ্ঞানী মাইকেল ফারাডে, বেঞ্জামিনফ্র্যাংকলিং, আলেসান্দ্রো ভোল্টাদের হাত ধরে বিদ্যুৎশক্তি আবিষ্কার হওয়ায় উৎপাদন কাজে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয়শিল্পবিপ্লব। ১৯৬৯ সন থেকে পরবর্তী সময়কালেকম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল আবিষ্কারেরমাধ্যমে যোগাযোগের অভূতপূর্ব বিপ্লবের সময়টাছিলো তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের। তৃতীয় শিল্পবিপ্লবেরপ্রায় অর্ধশতাব্দী পরে শুরু হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জাগরণ। ক্লাউস সোয়াব ওয়ার্ল্ডইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী২০১৬ সনে তাঁর ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোল্যুশননামক বইয়ে সর্বপ্রথম চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কথাটিব্যবহার করেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেইচতুর্থ শিল্পবিপ্লব এখন একটি বাস্তবতা। চতুর্থশিল্পবিপ্লব ঘটছে মূলত ইন্টারনেটের সঙ্গে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা যোগের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের যুগে আপনিপৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থান করেওইনোভেটিভ কোনো আইডিয়া/স্টার্টআপের মাধ্যমেগোটা দুনিয়াকে নিজের প্রতিভার কথা জানান দিতেপারেন। সাথে রয়েছে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারেরহাতছানি। মুহূর্তেই হয়ে উঠতে পারেন একজন সফলউদ্যোক্তা।

বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল ও ইন্টারনেট ছাড়াএকটা মুহূর্তও আমরা কল্পনা করতে পারি না।বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর দুঃসময়ে জুম, স্ট্রিমইয়ার্ড, ওয়েবিনার, গুগল ক্লাসরুম, ওয়ার্ক ফ্রমহোম, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি প্রভৃতি শব্দগুলো চতুর্থশিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকেই যেন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েযাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎকর্ষতা বাড়াতেপ্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন দেশ-বিদেশেরফ্রিল্যান্সার প্রযুক্তিবিজ্ঞানীরা। নানা প্রযুক্তি সেবা/পণ্য, উদ্যোগ বা স্টার্টআপের মাধ্যমে দিনদিন তারাআমাদের জীবনযাত্রাকে অনন্য মাত্রায় নিয়েযাচ্ছেন। বাংলাদেশেও আইটি ফ্রিল্যান্সারদেরসংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে। দক্ষতার দিকথেকেও বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেসন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে। দেশেরঅর্থনীতিতে সুপরিকল্পিত ও শক্তিশালী অবদানরাখার জন্য এই সেক্টরের দক্ষ এবং সম্ভাবনাময়তরুণ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায়এনে সংগঠিত করা ছিল সময়ের দাবি। তৎপ্রেক্ষিতেদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনীকার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে সম্মৃদ্ধ করার মাধ্যমেডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অধিকতর ভূমিকারাখার নিমিত্তে আইসিটি বিভাগের অধীনবাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানেদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামপ্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) নির্মিতহচ্ছে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫ একরজায়গাজুড়ে নির্মিত প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষহয়ে এখন উদ্বোধনের প্রহর গুণছে। এটি সফলভাবেবাস্তবায়ন হলে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নতুনদিগন্তের উন্মোচন হবে। পাশাপাশি ডিজিটালবাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এটি নতুন মাইলফলকহিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বলা হয়ে থাকে যে, ইনকিউবেটরে ১ ডলার বিনিয়োগ করলে ৩০ ডলারআয় করা যায়। সেই হিসেবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবেরবৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতেপ্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে চুয়েটের এই শেখ কামালআইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প।

ইনকিউবেটরের ইতিহাস:

১৯৫৯ সনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাটাভিয়াইন্ডাস্ট্রিয়াল সেন্টারের মাধ্যমে ইনকিউবেটর সংক্রান্তউদ্যোগ সর্বপ্রথম সফলভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশেসরকারি পর্যায়ে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশহাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২০১২ সনের দিকেইনকিউবেটর কার্যক্রমের ধারণা শুরু হয়। সেইসময়ে তারা কয়েকদফা ইনকিউবেটর স্থাপনেরউদ্যোগ নিয়েছিল। বেসরকারি উদ্যোগে বিজনেসইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেটশন (BIIC) লিমিটেডসংগঠনটিও ইনকিউবেটর নিয়ে কাজ করে। ২০১৬সনের দিকে এসে মূলত ডিজিটাল উদ্যোক্তাদেরনিয়ে ইনকিউবেটর ধারণাটি হাইটেক পার্ক এবংমোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের হাত ধরে আরওপরিচিতি পেতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০হাজার আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর রয়েছে।আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাশনাল বিজনেসইনকিউবেশন অ্যাসোসিয়েশনের ২০০৫ সনেরতথ্যমতে, কেবল উত্তর আমেরিকায় বিজনেসইনকিউবেটরের মাধ্যমে প্রায় ১০ মিলিয়ন লোকেরকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশচীনে ৭০০ এর অধিক এবং ভারতে ৭০ এর অধিকইনকিউবেটর রয়েছে। চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতেইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইনকিউবেটরস্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রচুর বৈদেশিকমুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতেগড়ে উঠেছে নতুন-নতুন সফল উদ্যোক্তা।

ইনকিউবেটরের ধারণা:

ইনকিউবেটর মানে আমরা সাধারণত বুঝি হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র। কিন্তু এইইনকিউবেটরে না আছে ডিম, না ফুটবে বাচ্চা।বিজনেস ইনকিউবেটর মূলত এমন একটিলাভজনক অথবা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান/সংস্থাকেবোঝায়, যা সম্ভাবনাময় ও নতুন কিংবা প্রারম্ভিকদশার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা কোম্পানিগুলিকে ওব্যক্তিগত ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন ধরনেরসমর্থন ও সম্পদে প্রবেশাধিকার সেবা প্রদান করেতাদের ব্যবসার বিকাশ সাধনে সহায়তা করে।অর্থাৎ কোনো ব্যবসা, উদ্যোগ বা সেবাকে নিবিড়পরিচর্যার মাধ্যমে একটি সফল ও বাজার উপযোগীপণ্য/সেবায় রূপদানের এই ব্যাপারটিকে ব্যবসায়অংকুরোদগম বা বিজনেস ইনকিউবেশন বলে।

কী ধরনের সেবা মিলবে ইনকিউবেটরে:

আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর মূলত একটিইন্টিগ্রেটেড প্রতিষ্ঠান। যেখানে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদেরসকল ধরনের সেবা ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।এখানে একই ছাদের নীচে সমস্ত প্রয়োজনীয়অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি ওআনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করে কোনো প্রযুক্তিসেবা/পণ্য, স্টার্টআপ, নতুন উদ্যোগ ও আইডিয়াকেপূর্ণাঙ্গ একটা প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসে রূপ দিতেসহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞপরামর্শ প্রদান, সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্ট, কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্টার্টআপ পরিকল্পনা ওব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, সম্ভাব্যবিনিয়োগকারীদের গমনাগমনসহ উদ্যোক্তাদেরআবাসিক সংস্থান, অফিস সরঞ্জাম ও প্রশাসনিকসহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। এরূপ প্রতিষ্ঠানের মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন বাগবেষণালব্ধ ফলাফলকে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসেরূপান্তর ঘটানোর লক্ষ্যে প্রারম্ভিক সহায়তা প্রদানকরা। মূলত এর মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তাদেরসহযোগিতা প্রদান করা হয়। এটি এক ধরনেরউদ্যোক্তাদের সমর্থন-প্রদায়ক (Entrepreneurial Support) প্রতিষ্ঠান।

শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর:

ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য সফলভাবে অর্জনেরজন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং তথ্যপ্রযুক্তিখাতে দেশীয় সক্ষমতা যুগোপযোগী করা ও উদ্যোক্তাতৈরির প্রয়োজনীয়তা ছিলো অপরিহার্য।বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেগবেষণা উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য একটিকার্যকরী ব্যবস্থা। এই গুরুত্ব বিবেচনা করে, আইসিটি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ হাইটেকপার্ক কর্তৃপক্ষ ডিসেম্বর, ২০১২ থেকে ডিসেম্বর, ২০১৪ পর্যন্ত আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনেরজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিকভাবে চুয়েটেইনকিউবেটর স্থাপনের আইসিটি বিভাগ প্রস্তাব করে২০১২ সনে। আইসিটি ডিভিশন থেকে প্রস্তাবপাওয়ার পর চুয়েট প্রশাসন প্রস্তাবটি গ্রহণ করে এবংচুয়েট ক্যাম্পাসে প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ৪.৭ একরজমি বরাদ্দ করে। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরপ্রেক্ষাপটে এটি ছিল একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগ।প্রাথমিকভাবে, এটি চুয়েট আইটি বিজনেসইনকিউবেশন সেন্টার নামে নামকরণ করাহয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় উদ্যোগটি ২০১৫সনের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আইসিটিবিভাগের বাজেট মনিটরিং কমিটির সুপারিশেরভিত্তিতে প্রায় ২ বছর পরে জাতীয় অর্থনৈতিকপরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর ২৬তমসভায় ২০১৭ সনের ৬ জুন একনেক চেয়ারম্যান ওমাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পেরঅনুমোদন দেন। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ককর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সনের জুলাই থেকে২০১৯ সনের জুনের মধ্যে চুয়েট আইটি বিজনেসইনকিউবেটর স্থাপন নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নেরসিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুরুর দিকে এ প্রকল্পের ব্যয়ধরা হয়েছিল ৮২.০২ কোটি টাকা। পরবর্তী ধাপেসেই ব্যয় ৯৪.২৫ কোটি থেকে ১১৭.৭ কোটি টাকায়উন্নীত হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ১২৫কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারিরকারণে দীর্ঘদিন যাবত নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায়সর্বশেষ ২০২২ সনের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নকরার জন্য নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেওআগামী মার্চ, ২০২২ সন নাগাদ প্রকল্পের কাজসম্পন্ন করে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করাহচ্ছে

যা থাকছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে:

শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পেরআওতায় ৫ একর জমির উপর ৫০ হাজার বর্গফুটআয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশনভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্টএকটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন তৈরি হচ্ছে।ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে থাকছে- স্টার্টআপজোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, এক্সিবিশনসেন্টার, ই-লাইব্রেরি জোন, ডাটা সেন্টার, রিসার্চল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি।এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্ণার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন প্রভৃতিথাকবে। অন্যদিকে মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিতঅডিটোরিয়াম এবং ৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্নপৃথক ৪টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষথাকছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুটআয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুইটি (১টি নারী, ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিতহচ্ছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে।এছাড়া একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটিঅপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশনও সোলার প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে।

কারা কাজ করার সুযোগ পাবেন:

তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ যেমন- CSE, ETE, EEE, ICT/IICT-তে পড়াশোনা করাগ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন যে কোনোউদ্যমী উদ্যোক্তা এই ইনকিউবেটরে কাজ করারসুযোগ পাবেন। এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েযে কেউ তাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসাকার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। ইনকিউবেটরেরঅবকাঠামো ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহারকরে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যেমন কাজ করার সুযোগমিলবে তেমনি নিবন্ধিত উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজকরার সুযোগ পাবেন। উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে ওউদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য ইনকিউবেটরেদেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান, সফল উদ্যোগের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসরবরাহ, উদ্যোক্তাদের থাকার জন্য ডরমিটরিসহসবধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

কীভাবে একজন উদ্যোক্তা ইনকিউবেটরেকাজ করবেন:

ধরুন শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরেরআপনি একজন উদ্যোক্তা। আপনি দীর্ঘদিনগবেষণার মাধ্যমে একটি ব্যতিক্রমী ও ইনোভেটিভআইডিয়া নিয়ে কাজ করে প্রাথমিকভাবে সফলতাপেলেন। ইনকিউবেটর কর্তৃপক্ষও যাচাই-বাছাই করেআপনার সেই উদ্যোগের ব্যাপারে ইতিবাচক। তাদেরতত্ত্বাবধানে সেই আইডিয়া/স্টার্টআপটি আপনিআরও বহুদূর এগিয়ে নিতে চান। তখন আপনারসেই উদ্যোগ/স্টার্টআপকে বাণিজ্যিক রূপ দিতেসবধরনের সহায়তা দিতে একযোগে কাজ করবেনইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টরা। এভাবে বাজারে আপনারউদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখলে আপনি হয়েউঠবেন একজন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারের ড্রিম প্রজেক্ট:

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাপরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম, এনডিসিগত ১৩ নভেম্বর, ২০২০ খ্রি. শেখ কামাল আইটিবিজনেস ইনকিউবেটরের নির্মাণকাজ পরিদর্শনেএসে প্রকল্পটিকে বর্তমান সরকারের একটি “ড্রিমপ্রজেক্ট” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেজানিয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রকল্পেরতদারকি, বাজেট কিংবা অন্যান্য সবরকমেরসহযোগিতার ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাব নেই।সরকার যে কোনোভাবেই দেশের প্রথম এইউদ্যোগের সফলতা দেখতে চাইছে। তাই প্রকল্পটিকেঘিরে সরকার, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ চুয়েট পরিবারের সকলের প্রত্যাশারপারদ অনেক উঁচুতে। এছাড়া নগরীর চান্দগাঁওএলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ডইনকিউবেশন সেন্টার, আগ্রাবাদের সিংগাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ওআইটি পার্ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানেরআইটি পার্ক প্রভৃতির মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রামকে ঘিরেএকটি আইটি বিজনেস হাব গড়ে তোলার জন্যসরকারের পক্ষ থেকেও নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করাহয়েছে।

গবেষণা প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাবেইনকিউবেটর:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিকনেতৃত্বে ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটাউদীয়মান নাম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেরদ্রুত পরিবর্তন ও তার সুফল ইতোমধ্যে আমরাদেখতে পাচ্ছি। বিগ ডাটা ও মেশিন লার্নিং বর্তমানবাস্তবতায় প্রযুক্তির নতুন ডাইমেনশন। চতুর্থশিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্টিফিশিয়ালইন্টেলিজেন্স (AI), ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT), ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবটিক্স, থ্রিডি প্রিন্টিং, ব্লকচেইন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তারবিহীন প্রযুক্তিপ্রভৃতি আমাদের সক্ষমতাকে আরও এগিয়ে নিতেসহায়তা করবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব উন্নতপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। চুয়েটের শেখ কামালআইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এসব প্রযুক্তিরসমন্বয় ঘটিয়ে দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে একটিবিপ্লব তৈরি করবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেনইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টরা।

সৃজনশীল তরুণদের সম্ভাবনার দ্বার খুলেদিবে:

বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানসৃষ্টি করে বিশ্বে তাক লাগিয়েছে চীন ও ভারত। সেপথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। চুয়েটের আইটি বিজনেসইনকিউবেটর সৃষ্টিশীল তরুণদের জন্য খুলে দিতেপারে অপার সম্ভাবনার দ্বার। এই ইনকিউবেটরেরমাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মের আতœকর্মসংস্থানসৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতছানিদিচ্ছে। আমাদের দেশের তরুণরা এখনও শুধুইচাকরির পেছনে ছুঁটছে। নানা প্রতিকূলতার কারণেদেশের তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস দেখাতেপারছে না। কিন্তু আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরেরমাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার পথসহজ করে দিবে। এই ইনকিউবেশন সেন্টারে বসেসৃজনশীল আইডিয়া কাজে লাগিয়ে যে কেউ তৈরিকরতে পারবেন স্টার্টআপ বা প্রোডাক্টিভ সার্ভিস। যাবাজারজাত করার দায়িত্ব নেবেন ইনকিউবেটরসংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজন শুধু কিছু ইউনিক, ইনোভেটিভএবং মার্কেটে ভ্যালু আছে এমন আইডিয়া নিয়েহাজির হওয়া। সেইসাথে থাকতে হবে প্রযুক্তি জ্ঞান, কাজের প্রতি একাগ্রতা ও সৃজনশীলতা। তাহলেআপনিও হয়ে উঠতে পারেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবেরএকজন দক্ষ কারিগর ও সফল উদ্যোক্তা।

লেখকমুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন

সর্বশেষ