মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়কলাবাগানে ৭০ বছরের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

কলাবাগানে ৭০ বছরের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী রাজধানীর কলাবাগান এলাকার ১৪.০০৪৬ একর জমি অবমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আরও ২.৮৬৫৪ একর জমির মধ্যে যেসব জমি বর্তমানে ব্যক্তির দখলে আছে সেসবও অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। কলাবাগানে অধিগ্রহণকৃত / অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশিত কিন্তু ব্যক্তির নামে রেকর্ডকৃত কিংবা দখলে থাকা প্রায় ১৬ একর জমি পূর্বতন মালিকের অনুকূলে শীঘ্রই অবমুক্ত করা হবে।4BCEA5F1-6CC3-4F6F-9B3C-8F8800340AA6

আজ ধানমন্ডি মৌজার অধিগ্রহণকৃত জমির জটিলতা নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভূমিমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ভূমিমন্ত্রী এসময় বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার বা স্বার্থ সংরক্ষণ করা এই সরকারের অঙ্গীকার। জনস্বার্থ বিবেচনায় ইতোপূর্বে খাসমহাল সংক্রান্ত জটিলতা যা দীর্ঘদিন যাবত অনিষ্পন্ন ছিল তা আজ নিষ্পন্ন করা হয়েছে।
অবমুক্ত প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করা হয় এবং টাউট ও দালালরা যেন কোনও ধরণের হয়রানি না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
আইনি জটিলতা থাকায় এসব জমির মালিকগণ কিংবা তাদের ওয়ারিশগণ ৭০ বছর যাবত জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না। এই কারণে তারা তাদের ভূ-সম্পদের আনুষ্ঠানিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে ফলপ্রসু ব্যবহারও করতে পারছিলেন না। অবমুক্তের ফলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮-৪৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন নির্মাণকল্পে গণপূর্ত বিভাগ (তৎকালীন সিএন্ডবি) এর অনুকূলে রাজধানীর ধানমন্ডিসহ ৮টি মৌজায় মোট ৪৭২.৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ৮ই জানুয়ারি ১৯৫৩ সালে গেজেট প্রকাশনার মাধ্যমে অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয় এবং জমির দখল হস্তান্তরিত হয়।
কিন্তু প্রত্যাশী সংস্থা ধানমন্ডি মৌজার সিএস ৬৭ নম্বর দাগের অধিগ্রহণকৃত ১৬.৮৭ একর জমির মধ্যে ১৬.০৬ একর জমিতে কোনও সময়ে দখলে যায়নি। দীর্ঘদিন যাবত জমির পূর্ব মালিকগণ ওয়ারিশ বা অন্যান্যসূত্রে এই জমিতে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ভোগ দখলে আছেন। ১৯৬৮ সনে সরকার ভূমি মালিকদের উচ্ছেদ নোটিশ করলে ভূমি মালিকগণ সরকারের উচ্ছেদ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় লাভ করেন।
উল্লেখ্য, ১৪.০০৪৬ একর জমি সিএস, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে ব্যক্তির নামে এবং ২.৮৬৫৪ এর জমি সিটি জরিপে গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হয়। তবে এই জমির মধ্যে কিছু অংশ ব্যক্তির দখলে এবং কিছু অংশ গণপূর্ত বিভাগের দখলে আছে। এই জন্য বিগত ৭০ বছর যাবত জমির মালিকগণ এই জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না।
জমির মালিকগণ এই জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য ২০১৮ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হয়। উক্ত বিষয়টির জটিলতা নিরসনে মন্ত্রিপরিষদ ভূমি মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সাথে আলোচনাক্রমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১লা মার্চ ২০২১ তারিখে ভূমি সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় উক্ত জটিলতা নিরসনে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

আজ অনুষ্ঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় কমিটির প্রতিবেদনসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সংস্থার মতামত পর্যালোচনা করে ভূমিমন্ত্রী ব্যক্তির নামে রেকর্ডকৃত ও দখলে থাকা উপর্যুক্ত ১৪.০০৪৬ একর জমি পূর্বতন মালিকের অনুকূলে অবমুক্ত করা সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।

এছাড়া সিটি জরিপে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডকৃত ২.৮৬৫৪ একর জমির মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের দখলে থাকা অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট জমি অবমুক্ত করার নির্দেশও দেন ভূমিমন্ত্রী।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (অধিগ্রহণ) মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শওকত হোসেন, ঢাকার জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম সহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এবং গণপূর্ত বিভাগের আওতাভুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ