রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......খুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ যৌনকর্মীর সংখ্যা

খুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ যৌনকর্মীর সংখ্যা

খুলনায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ যৌনকর্মীর সংখ্যা। মহানগরীর ৮০টি আবাসিক হোটেলে নির্বিঘ্নে যৌনচার চলছে। এছাড়া নিরালা, সোনাডাঙ্গা, বয়রা ও খালিশপুর এলাকায় বিউটি পার্লার ও একাধিক ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। এ ক্ষেত্রে পেশাদার ও অপেশাদার মিলিয়ে যৌনকর্মীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক। অসামাজিক এ পাপাচার দেহ ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের মাসিক মাসোহারা চুক্তির ভিত্তিতে নিরাপদেই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব দেহ ব্যবসার সাথে পুলিশের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার ঘটনাও ঘটেছে। অনিরাপদ এসব যৌনচার সামাজিকভাবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, দারিদ্রতা ও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে খুলনাঞ্চলের নারীরা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে হরহামেশা। এক্ষেত্রে নারীরা অর্থের বিনিময়ে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ বিলিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করছে না। খুলনা মহানগরীতে দেহ বিক্রির মত ঘৃন্যতম পেশায় যুক্ত হয়েছে দশ হাজারেরও বেশি নারী। যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দূর্জয় নারী সংঘের সর্বশেষ ২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী নগরীতে পেশাদার যৌনকর্মী রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ জন। যা গত ৮ বছরে আরো প্রায় ২ হাজার জন বেড়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সর্বশেষ ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে অপেশাদার যৌনকর্মী রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ জন। যা গত ৭ বছরে আরো ১ হাজার বেড়েছে। এছাড়া রয়েছে ভ্রাম্যমান যৌনকর্মী। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করে তারা চলে যায়। যৌনকর্মীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ষ্টেপ ফর হিউম্যান অ্যাসেষ্ট ডেভলপমেন্ট (শার্ড)’র তথ্য অনুযায়ী নগরীর ৮০টি আবাসিক হোটেলে দেহ ব্যবসা হচ্ছে। তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০জন যৌনকর্মীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে। শার্ড’র সূত্রানুযায়ী, শহর সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলা এবং বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের অভাবী মেয়েরা যৌনকাজে লিপ্ত হচ্ছে। তারা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় শহরে আসছে এবং কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এসব যৌনকর্মীদের অধিকাংশই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। সামাজিক কারণে তারা চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না। এছাড়া নগরীর অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা ক্লিনিকগুলোতে কর্তব্যরত নার্সরা, ম্যানেজার, কম্পাউন্ডার, ওয়ার্ডবয়দের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। এরই এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন চাহিদা পুরণে দেহ বিলিয়ে দিয়ে থাকে।

গোয়েন্দা সংস্থার সুত্র মতে, নগরীর নিরালা, সোনাডাঙ্গা, বয়রা ও খালিশপুর এলাকায় একাধিক ভাড়া বাড়িতে গড়ে উঠেছে মিনি পতিতালয়। এসব অবৈধ কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতায় এর কোন ফল হয় না। এক শ্রেণীর অসাধু পুলিশের সহযোগীতায় নগরীর বেশকিছু ভাড়া বাড়িতে বিভিন্ন স্থান থেকে যৌনকর্মীদের সংগ্রহ করে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে কয়েকজন সুচতুর মহিলা দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে নগরীর ডালমিল মোড় এলাকায়, নিরালা এলাকায় দু’টি বাড়ি, ইকবাল নগর স্কুলের পাশে একটি বাড়ি, টুটপাড়া এলাকায় মাদকাসক্ত এক মহিলার নেতৃত্বে একটি বাড়ি, সোনাডাঙ্গা থানার পাশে একটি বাড়ি ও খালিশপুর হাউজিং এ একটি বাড়িতে স্বামী পরিত্যাক্তা এক মহিলার নেতৃত্বে দেহ ব্যবসা চলছে।

গত ২৮-এপ্রিল সন্ধ্যায় খুলনা সদর থানার এস আই আকবর হোসেন অভিযান চালিয়ে নগরীর পিচকার প্যালেস মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল আজমল হোসেন ইন্টারন্যাশনাল থেকে আপত্তিকর অবস্থায় এএসআই রিয়াজ ও কনেস্টেবল ফাহিমা বেগম ওরফে আফরিনকে হাতে নাতে আটক করেন। রিয়াজ নড়াইলে কর্মরত আর ফাহিমা বেগম ওরফে আফরিন কেএমপির বয়রাস্থ পুলিশ লাইনের রিজার্ভ পুলিশ সদস্য। ফাহিমা নগরীর জোড়াগেট এলাকায় পুলিশ কোয়ার্টারে মহিলা ডরমেটরীতে থাকেন। খুলনা সদর থানার ওসি শাহাবুদ্দিন আজাদ প্রথমে তারা বিবাহিত বলে জানালেও, পরদিন থানায়ই ৫ লাখ টাকা দেন মোহরানায় তাদের বিয়ে দেয়া হয়। গত ৫ জুলাই সোনাডাঙ্গাস্থ হোটেল মিলেনিয়ামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ যুবক ও এক যুবতীকে আপত্তিকর অবস্থায় গ্রেফতার করে। এছাড়া নগরীর অলিতে-গলিতে গড়ে উঠা বিউটি পার্লারেও নিরবে-নিভৃতে চলছে দেহ ব্যবসা।

গোয়েন্দা পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, নিউমার্কেটে প্রায় অর্ধশতাধিক কলগার্ল বিচরণ করে। বিভিন্ন পদ্ধিতিতে তারা এখানে আগতদের আকৃষ্ট করে। এক শ্রেণীর দালাল তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়। নগরীর বয়রা এলাকার দুই জন মেয়ে নিউমার্কেট থেকে ক্রেতাদের সাথে কলগার্লদের কন্ট্রাক করে দেয়। নগরীর বৈকালি ঝুড়ির ভিটা, মুজগুনি স্টেডিয়ামের পাশে, ফুলবাড়িগেট ও বয়রা এলাকার একটি হোষ্টেলে বিরুদ্ধে যৌনকাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গোয়েন্দা পুলিশের সুত্রটি আরো জানায়- নগরীর হোটেল বসুন্ধারা, হোটেল আমিনা, হোটেল সোহাগ মিলন, হোটেল শাহীন, হোটেল কদর, হোটেল সুফি, খুলনা হোটেল, হোটেল আরাম, বৈশাখী হোটেল, সুন্দরবন হোটেল, হোটেল পার্ক, হোটেল আরাফাত, হোটেল ক্যাসল সালাম, বরিশাল হোটেল, হোটেল মুন, হোটেল প্যারাডাইস, সাতক্ষীরা হোটেল, হোটেল সানলাইট, হোটেল সানডে, হোটেল গোল্ডেন কিং, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল মালেক গার্ডেন, হোটেল জেলিকো, হোটেল এনিটা, হোটেল ওয়েষ্টান ইন, হোটেল মিলেনিয়ামসহ নগরীর ৮০টি হোটেলেই দেহ ব্যবসা হচ্ছে। এর মধ্যে হোটেল মিলেনিয়াম কর্তৃপক্ষ আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য বাড়তি সংযোজন রখেছে। নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে রাতের চেয়ে দিনের বেলা দেহ ব্যবসা হয় বেশি বলে সুত্রটি জানায়।

আবাসিক হোটেলগুলো থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে দেহ ব্যবসায় সহায়তা করছে সংশ্লিষ্ট থানার দুর্নীতি পরায়ন কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা। মাসিক মাসোহারার চাহিদাপূরণে মাঝে মধ্যে চালানো হয় দু’একটি নিঃসফল অভিযান।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারি কমিশনার (ডিবি) এটিএম মোশরাররফ হোসেন জানান, পুলিশের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশ অপরাধ নিরমূলে কাজ করছে। রমজান মাসের পবিত্রতা সুরক্ষায় হোটেলগুলোতে প্রয়োজনে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। পুলিশের মাসোহারা’র গ্রহনের বিষয়ে সুনিদিষ্ট প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ