গত বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই চিঠিতে প্রস্তাব দেয় তামাক কোম্পানির পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হোক। জবাবে শিল্প মন্ত্রণালয় বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দেয়। তারা করোনা মহামারীতে তামাক শিল্পের সাথে জড়িতরা ‘কোথায় যাবে, কী খাবে’ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এই খাতে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের পুনর্বাসন কৌশল নির্ধারণের জন্য সময় চায়। ফলাফল, সবকিছু সেখানেই থেমে আছে। কিন্তু ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেটি বাস্তবায়নে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে আমরা সেই পথে খানিকটা হলেও এগিয়ে থাকতাম। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অগ্রগতি হতো। কিন্তু আমরা তা থেকে বঞ্চিত হলাম। এমন নানাভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যা, মূল লক্ষ্য অর্জনে আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে। তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যার অর্থনৈতিক মূল্য ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা, বা জিডিপির ১.৪ শতাংশ। এই সকল বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা জরুরী। বাংলাদেশ তাতে একমত বলেই ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণীত হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে সংশোধিত হয়। কিন্তু গত ৬ বছরে এই আইনের সংশোধন আবারও জরুরী হয়েছে। আইনের ফাঁক দিয়ে তামাক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পথ ধরেছে, যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের পথ বন্ধুর হয়েছে। সে কারণে নতুন সংশোধিত আইনে, পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়স্থলে তামাক দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, খুচরা বিক্রি বন্ধ করা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কতার উপর জোর দেওয়া এবং সি-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলো সামনে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের আন্তরিকতার শেষ নেই। কিন্তু কোথায় কীভাবে যেন, সবকিছু বোধ করি একটু ধীর লয়ে চলছে। তাতে তামাক কোম্পানিগুলো নতুন পথ খোঁজার সময় পাচ্ছে, আমরাও লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়ছি। আমরা জানি, আইন সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকে। এ বিষয়গুলো একদিনে যেমন শেষ করা সম্ভব নয়, তেমনই আবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও দেখা জরুরী। একজন কর্মকর্তা একটি অধিদপ্তরে এসে যখন কোন একটি বিষয় নিয়ে অনেকটা পথ এগিয়েছেন, তখন তিনি অন্য অধিদপ্তরে বদলি হলে প্রক্রিয়াটি আবারও পিছিয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়। সিদ্ধান্ত নিতে পারার পদাধিকার ভিত্তিতে এবং কার্যকারিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পর্যায়গুলোতে কর্মকর্তাদের আসীন থাকলে এ ধরণের কাজ গতি পাবে বলে বিশ্বাস করি।
লেখক: সংসদ সদস্য ( সিরাজগঞ্জ -২) ও রাজনীতিবিদ