শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ ভাগ মানুষ টিকা পাবে : প্রধানমন্ত্রী

ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ ভাগ মানুষ টিকা পাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা হিসেবে বিনামূল্যে টিকা প্রদানের বিষয়টি আমার সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। এ লক্ষ্যে করোনার টিকা আবিষ্কার ও ব্যবহারের অনুমতি প্রাপ্তির পূর্ব হতেই আমরা টিকা সংগ্রহ ও টিকা প্রদানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষকে পর্যাপ্ত টিকা প্রদানের লক্ষ্যে ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেশে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাছাড়া ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা একথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ও সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার দেশের সকল মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড ভ্যাক্সিনেশন প্লান (এনডিবিপি) প্রস্তুত করেছে যা কোভ্যাক্স কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে দেশের ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে জনসাধারণের জন্য টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ২৫ বছর তদুর্ধ জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ টিকা প্রদান করা হচ্ছে।

বর্তমান টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য মাত্রা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সকল শিক্ষার্থীকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে বয়স সীমা ১৮ বছর পর্যন্ত কমানো হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেয়া, ১২ বছর ও তদুর্ধ সকল ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত সুবর্ণ কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ পূর্ব টিকা প্রদান করা। সারাদেশের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান করা। গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় টিকা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত এ সকল কার্যক্রমের ফলে এ পর্যন্ত (১২ সেপ্টেম্বর) ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক ক্রয় চুক্তি এবং উপহার হিসেবে মোট ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ ডোজ পাওয়া গেছে।

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ৩ কোটি এবং চীনের সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনালের সাথে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে । তাছাড়া কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৩ কোটি সিনোফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক টিকা কেনার চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, প্রতিমাসে যাতে এক কোটির বেশি টাকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিনোফার্ম হতে প্রদত্ত সিডিউল অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই কোটি হিসেবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।

চলমান টিকা কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে সকল বিভাগীয় সদর, জেলা সদর, উপজেলা সদরে অবস্থিত ৬৭৩ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। আশাকরি পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া যায় তাহলে ওই কমিটিতে আর সংক্রমণ হয় না। হার্ড ইমিউনিটি তৈরির জন্য প্রতি ১০০ জনের মধ্যে কতজনকে টিকা দিতে হবে তা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন হাম এর ক্ষেত্রে প্রতি ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকে টিকা প্রদান করা হলে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠে।

কিন্তু কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়নি, এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে ১৮ বছরের উপরের সকল বাংলাদেশী নাগরিককে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে টিকার সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। টিকার মজুদ ও সবশেষ অবস্থা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, মহামারী করোনা প্রতিরোধের কল্পে এ পর্যন্ত (১২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ২ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জনকে প্রথম ডোজ এবং ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মজুদ ভ্যাকসিনের পরিমাণ হচ্ছে ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৯ ডোজ।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই অতিমারি এখনো চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি সকলের সহযোগিতায় চলমান এই ভাইরাসটিকে সফলভাবে মোকাবেলা করা সক্ষম হব। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এজন্য টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সবাইকে নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ