সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপশতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি : স্থানীয়...

শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ০৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ওয়াসার গন্ধবপুর প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক এবং হিমালয় কোষের ডাউনস্ট্রিমে থাকায় পানির খুব একটা সমস্যা নেই। তবে আমরা এখনো পরিপূর্ণভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারছি না। গ্রাম থেকে শহরে আমাদের অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা দরকার। ৬০ ভাগ মানুষ ঢাকায় বসবাস করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ঢাকাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একইভাবে পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্বে ৯৮ শতাংশ মানুষ পানির আওতায় এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কতটা সক্ষম। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ, শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয় সারাবিশ্বেই এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জিওলজিক্যালভাবেও আমাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যা বিশ্বের অনেক দেশেরই নেই। আমরা রুরাল এরিয়ার সব মানুষের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য কাজ করছি। ’

তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি কাজে লাগাতে পারছি না। কারণ সেখানে অসংখ্য বর্জ্য রয়েছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ব্যবহার উপযুক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা সিটিতে অসংখ্য প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং সামনে আরও প্রকল্প আসছে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে পানির স্বল্পতা রয়েছে। কারণ সেখানে লবণাক্ত পানিসহ অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে সেখানে পানির স্বল্পতা দেখা যায়। সেজন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য সারাদেশে ‘ন্যাশনাল ওয়াটার গ্রিড লাইন’ তৈরির জন্য চেস্টা করছি, এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের আরও একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের রুপান্তরের জন্য কাজ করছি। আমরা কিন্তু শুধু ট্রেডিশনাল এগ্রিকালচারের ওপর নির্ভর করতে পারি না। কৃষিতে প্রযুক্তি আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। আমাদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য শুধু কৃষিখাতই যথেষ্ট নয়। আমাদের ব্যাপক শিল্পায়নের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের অনেক ইন্ড্রাষ্ট্রি ইতোমধ্যে ভালো অবস্থানে আছে, এছাড়াও একশ ইকোমনমিক জোন তৈরির কাজ হচ্ছে। যেখানে অসংখ্য শিল্পায়ন গড়ে তোলা হবে। সেক্ষেত্রে পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই আমরা ভাবছি শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পানি কিভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।

তিনি আরও বলেন, অনেক জায়গায় আমি একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হই যে, পানির দাম অনেক বেশি। আমাদের বুঝতে হবে বাস্তবিক অবস্থা। আমাদের অবস্থা কি? আমরা শহরে যারা আছি, তারা গ্রামের তুলনায় অনেক ভালো আছি। এখানে কিছু বিষয় রয়েছে। একটি হলো ওয়াটার প্রোডাকশন কস্ট। পানির প্রোডাকশনে লাগছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। সেখানে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ টাকায়। তাহলে বাকি ১০ টাকা কে দিচ্ছে। সরকার এই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে, যা আসে আয়কর থেকে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে ঢাকা ওয়াসা একটি রোল মডেল। এটা আমরা বলছি না, বলছে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক। ঢাকা ওয়াসা সারাবিশ্বে বৃহৎ পানি সরবরাহকারী সংস্থা। ঢাকা ওয়াসা ২ কোটি মানুষকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। আমাদের ভালো ইঞ্জিনিয়ার, ভালো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ লোকবল রয়েছে। সেজন্যই আমরা আজ এই অবস্থানে আছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা) বর্তমানে ৪০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত ঢাকা মহানগরী এলাকায় প্রায় ১৫ মিলিয়ন জনসাধারণকে সুপেয় পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর উত্তর পশ্চিমাংশ ও তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহের মূল উৎস গভীর নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলিত ভূ-গর্ভস্থ পানি। কিন্তু প্রতি বছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে গভীর নলকূপগুলোর পানি উত্তোলন ক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নয়। ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪/৭ নগরবাসীর জন্য প্রেসারাইজড পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবং ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ উৎস হতে পানি ব্যবহারের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব জায়গায় মেঘনা নদী থেকে পানি উত্তোলন ও সরবরাহের ব্যবস্থা রেখে ১ম ফেইজে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

মেঘনা নদীর বিশনন্দী এলাকায় নির্মাণাধীন ইনটেক থেকে পানি উত্তোলন করে ১ম ফেইজে ১৬০০ মি.মি. ব্যাসের দু’টি পাইপের মাধ্যমে ঢাকা সিলেট রোডের গোলকান্দাইল হয়ে রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে ওয়াসার নিজস্ব শোধনাগারে (Raw Water) আনা হবে। পানি শোধনাগারের পরিশোধিত পানি শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী ক্রস করে মাদানী অ্যাভিনিউ হয়ে ঢাকার বারিধারায় আনা হবে এবং ঢাকা শহরের উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, মিরপুরসহ অন্যান্য এলাকায় বিদ্যমান/নির্মাণাধীন DMA গুলোতে ফিডার লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ