শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনরক্ত দিয়ে করি নতুন জীবনদান  -এই স্লোগানে সন্ধানী চমেক এর বিশ্ব রক্তদাতা...

রক্ত দিয়ে করি নতুন জীবনদান  -এই স্লোগানে সন্ধানী চমেক এর বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদযাপন

অজানা অচেনা মানুষের জীবন বাঁচাতে নীরবে-নিভৃতে নিজেদের রক্ত দান করে যে সকল স্বেচ্ছা রক্তদাতারা মহৎ কাজ করছেন  তাদের প্রতি সম্মান রেখে এবং সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে ই প্রতিবছর ১৪ ই জুন পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস । আর এই রক্তদানে ৪০ বছর ধরে নিরলসভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিট । সন্ধানী চমেক ইউনিটের জন্মলগ্ন থেকেই সন্ধানীয়ানরা অরাজনৈতিক, অলাভজনক এবং মানবতাবাদী এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করে যাচ্ছে ।2395FFE7-4572-4007-92F4-16950F237B1F
গতকাল ১৪ ই জুন ,বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উপলক্ষে সন্ধানী চমেক এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছিল তন্মধ্যে সমাজের মানুষের মাঝে রক্তদানে গণসচেতনতামূলক  একটি উন্মুক্ত রক্তদান এবং উদ্বুদ্ধকরণ প্রোগ্রামের আয়োজন হয়েছিল যার আওতায় শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঘুরে  ঘুরে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করেছে এবং কয়েক ইউনিট রক্ত সংগ্রহও করেছে সন্ধানীয়ানরা । অংশগ্রহণে ছিল আরাফাত , ফাহিম, ইভা , কেয়া , তাহের, জিম সহ আরো অনেকে।
 এছাড়া পোস্টার তৈরি এবং “প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা”  বিষয়ক গল্প লেখা দুইটি অনলাইন ভিত্তিক প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছিল । এছাড়া এই দিন থেকে রক্তদাতাদের পরবর্তীতে রক্তদানে আরো উৎসাহিত করার জন্য অভিবাদন পত্রদানের কর্মসূচী শুরু করা হয়েছে।
আমাদের বেশির ভাগের মনে রক্ত দানের ক্ষেত্রে কাজ করে এক ধরনের মানসিক ভয় আর চাপ। ১৯৪৮- ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অকুতোভয় বীরের মত রক্ত ঝরানো জাতির কাছে “মোটা সুঁই” এর এ অযৌক্তিক ভয় মোটেও কাম্য নয় । এই বীরের জাতির প্রত্যেকে হয়ে উঠি রক্ত যোদ্ধা , সকলকে উৎসাহিত করি রক্তদানে ।
২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা যায়, আমাদের বছরে রক্ত লাগে প্রায় ৪ লাখ ব্যাগ৷ ২০১৯ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ব্যাগে৷ এই এক দশকেরও কম সময়ে দেখা যাচ্ছে রক্তের চাহিদা বেড়েছে ৩ গুনের বেশি৷
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে বছরে ১৪ থেকে ১৫ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ১১ থেকে ১২ লাখ ব্যাগ। ঘাটতি থাকে তিন লাখ ব্যাগের বেশি। আর এই কোভিড মহামারীতে এই ঘাটতি বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি । নিজ আদলেই মানবতার স্বার্থে এই করোনাকালীন মহাদুর্যোগেও তার স্বীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সন্ধানী।❝রক্ত দিন,জীবন বাঁচান❞এই প্রত্যয় নিয়ে শুরু হওয়া বাংলাদেশের সেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী এই মহামারিতেও তার কাজ থেকে পিছপা হয়নি ।
ক্যান্সার,থ্যালাসেমিয়া, , ডায়ালাইসিস সহ আরো অন্যান্য জটিল রোগীরা যাদের রক্ত প্রয়োজন নির্দিষ্ট সময় পর তাদের বাঁচাতে পারেন আপনি। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের ডেলিভারির সময়ে , দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি কিংবা অপারেশনের টেবিলে থাকা অসুস্থ ব্যক্তির হতে পারে রক্তের প্রয়োজন ।
রক্তদানে যেসকল বিষয় খুব জরুরী
১. বয়স ১৮ এর উপরে এবং ৪৭ কেজি ওজনের প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী
২. গত ৪ মাসে রক্তদান করেননি এমন ব্যক্তি
৩. এজমা , ক্যান্সার , ডায়বেটিস , কিডনী রোগ,অস্বাভাবিক রক্তচাপ,রক্ত আমাশয়, ইত্যাদি রক্তজনিত রোগ বা মানসিক রোগী নন এমন ব্যক্তি
৪. গত ১ বছরের মধ্যেবড় যে কোন ধরনের অপারেশান হয়নি এমন ব্যক্তি।
৫. ছয় মাসের মধ্যে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড,চর্ম ও যৌন রোগ আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি ।
৬. মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায়, দুগ্ধ দানকালীন কিংবা মাসিক চলাকালীন  সময়ে রক্ত দিতে পারবেন না।
৭.এক সপ্তাহের মধ্যে এন্টিবায়োটিক কিংবা এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ সেবনকারী এবং এক মাসের মধ্যে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন না।
৮. কোন প্রকার নেশাজাতীয় ঔষধ সেবন ,একাধিক অরক্ষিত যৌন মিলন কিংবা অপরীক্ষিত রক্ত বা রক্তের উপাদান গ্রহণকারী ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন না।
কেনো রক্তদান করবেন ?
■ রক্তদান করার সাথে সাথে আপনার শরীরের “ব্যোন ম্যারো” নামক নতুন কনিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্ত দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর লোহিত কনিকার ঘাটতি পূরণ হয়ে যায় ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই।
■ মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত রক্ত দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
■ নিয়মিত রক্তদানে হৃদযন্ত্রের সামগ্রিক উন্নতি হয়। রক্তে যদি লৌহের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে কোলেস্টেরলের অক্সিডেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়, ধমনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলাফল হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত রক্তদাতাদের দেহদাতাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৮৮ ভাগ কমে যায় এবং স্ট্রোক সহ অন্যান্য হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে যায় ৩৩ ভাগ ।
■ রক্তদানে শরীরের Free radicals এর পরিমাণ কমে যাওয়ায় বার্ধক্যজনিত জটিলতা দেরিতে আসে
■ “আপনার দানকৃত রক্তে বেঁচে যাচ্ছে একজন মানুষের প্রাণ” রক্তদানের জন্য এমন একটি কারনই কী যথেষ্ট নয় ?
আরও পড়ুন

সর্বশেষ