শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলন শুরু

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় সম্মেলন শুরু

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন (কাউন্সিল) রোববার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় শুরু হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য মাওলানা মীর ইদরিস জানিয়েছেন। সম্মেলনে সারাদেশের কওমি অঙ্গনের ৪০০ জন শীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তারাই আল্লামা আহমদ শফীর উত্তরসূরী নিধারণ করবেন।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ৫৯ দিন পর কওমি অঙ্গনের শীর্ষ সংগঠন হেফাজতের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলন  (কাউন্সিল) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় হেফাজত থেকে পদত্যাগকারী সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরী। আজ সকাল ১০টায় দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনে কাউন্সিলের অনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।

হেফাজতের সম্মেলনে কমিটিতে ব্যাপক রদবদল করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমির ও দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহা-পরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকে হেফাজতের আমিরের পদটি শূন্য রয়েছে। তার মৃত্যুর পর প্রথম হেফাজতের কেন্দ্রীয় সম্মেলন (কাউন্সিল) উপলক্ষে সারাদেশ থেকে কওমি অঙ্গের শীর্ষ আলেমরা কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

হেফাজতের নেতৃত্বে বাবুনগরী-কাসেমী?
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত কওমি মাদ্রাসার আলেম ও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেফাজতের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (কাসেমী) মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা ভূমিকা রাখছেন। এক্ষেত্রে এই তিন অংশের নেতাদের সঙ্গে সরকারের একটি পক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে নিয়মিত, এমন দাবি করেছেন একাধিক আলেম।

সম্ভাব্য নতুন কমিটিতে আমির হিসেবে জুনায়েদ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বা চট্টগ্রাম হেফাজতের আমির মাওলানা তাজুল ইসলাম থাকতে পারেন। এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হকের নাম থাকতে পারে বলে জানান হেফাজতের একাধিক নেতা।

তাদের দাবি, মূল কমিটি অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে গেছে। হেফাজতের একটি অংশের নেতারা জানান, হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিজের প্রভাব অটুট রাখায় হেফাজতের আমির পদটিতে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দেখা যাবে। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে তার অনুসারী বেশি হওয়ায় সম্মেলনেও বিষয়টি প্রভাব ফেলবে, এমন ধারণা করছেন কোনও কোনও আলেম।

এদিকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীপন্থি হিসেবে পরিচিত অনেকেই বাদ পড়ছেন। এমনকি আল্লামা শফীর পুত্র হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানীকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাকে সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানিয়েছেন মাওলানা আনাস। আনাসের অনুসারীদের মধ্যে বর্তমান কমিটির হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত আমিনীসহ হেফাজতের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাকে পদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা যায়, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কওমি আক্বীদাপন্থি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যদিওবা পরে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রয়াত প্রধান পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আমির ও মাদ্রাসার তৎকালীন সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শুরা কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই সময়। দেশ বরেণ্য শীর্ষ আলেম আহমদ শফী চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর হেফাজতের আমিরের পদটি এখন শূন্য রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে ৫ মে শাপলা চত্বর অবরোধের মাধ্যমে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা মীর ইদরিস বলেন, আজকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের ৬৪টি জেলা থেকে কওমি অঙ্গন ও হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের আমির নির্বাচিত করা হবে। সফলভাবে আমাদের সম্মেলন শেষ হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে হাটহাজারীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য থাকবে। যে কোন অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ