শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
প্রচ্ছদটপফরিদপুরের ডিসি আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে নিক্সন চৌধুরীর ফোন কল রেকর্ড করেছেন!

ফরিদপুরের ডিসি আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে নিক্সন চৌধুরীর ফোন কল রেকর্ড করেছেন!

ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর মামলা নতুন মোড় নিয়েছে। এই মামলায় যে অডিও টেপ ব্যবহৃত হয়েছে। এবং যে অডিও টেপের সূত্র ধরে নিক্সন একজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই মামলার অডিও টেপ করার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আজ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে যে; নিক্সন চৌধুরী যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারকে টেলিফোন করেছিলেন। এই ফোনটি কে রেকর্ড করেছিলো।

 বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সাংবিধানিক বিধি বিধান অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে কারো ফোনের কথপোকথন রেকর্ড করা শাস্তিযোগ্য দন্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশে টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ৯৭(১) ধারা অনুযায়ী শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন টেলিফোন রেকর্ডের জন্য মোবাইল কোম্পানীগুলোকে নির্দেশ দিতে পারবে। সেই নির্দেশ প্রতিপালনে টেলিফোন কোম্পানীগুলো বাধ্য থাকবে।

ওই আইনের ৯৭(২) এ বলা হয়েছে যে এই রকম নির্দেশনা দেয়ার আগে অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যে টেলিফোন আলাপ সেই আলাপটি রেকর্ড হয়েছে। এবং সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার নিজেও বলেছেন তিনি এই ফোন কলটি রেকর্ড করেছেন। কিন্তু একজন জেলা প্রশাসক হয়ে তিনি কিভাবে আইনের ব্যতয় ঘটালেন সে নিয়ে এখন খোদ সরকারের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

 কারণ একজন জেলা প্রশাসক টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ৯৭ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের কথোপকথন রেকর্ড করার এখতিয়ারভুক্ত প্রতিষ্ঠান নন। এবং সেটি রের্কড করে অন্যকে শোনানোটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আমাদের সংবিধান গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেয় এবং চিঠিপত্র টেলি আলাপের যে গোপনীয়তা সুরক্ষা সেই সুরক্ষাকে মূল্যায়ন করে।

সম্প্রতি বাংলাদশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি রায় আছে। বৃহত্তর বেঞ্চ (তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত) একটি রায়ে কল রেকর্ডকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। একজন নাগরিকের বিনা অনুমতিতে তার কথোকথন রেকর্ড করা বা তার কল লিস্ট সংগ্রহ করাটা আইন বহিভূত এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ বলে মতামত দেয়।

ফরিদপুরের ঘটনাটি এখন কেবল জেলা প্রশাসককে কর্তব্যে বাধা দান কিংবা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে হুমকি ধামকি দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন অন্য মাত্রা পেয়েছে।

সরকারের মধ্য থেকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন যে একজন জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইন কিভাবে লংঘন করেন। এবং কিভাবে এই কথপোকথন রেকর্ড করেন। এই কথোকথন রেকর্ড এখন ফরিদপুরের ঘটনাকে নতুন মেরুকরণের দিকে নিয়ে গেছে।

একজন আইনযজ্ঞ বলছেন ফরিদপুরের ঘটনার তিনটি দিক আছে। প্রথমত নির্বাচন কমিশন প্রভাবিত হয়ে একজন প্রার্থীকে হারানোর জন্য কাজ করেছে। সেটি নির্বাচন আচরণবিধি এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত।

দ্বিতীয়ত; যে অভিযোগে নির্বাচন কমিশন মামলা করেছে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনি কর্মকর্তার স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করেছেন। তৃতীয়ত সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সংসদ সদস্যের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে এবং একজন সরকারি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন তিনি কথোপকথন রেকর্ড করেছেন যা টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী অপরাধ।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আইন তার নির্মোহ গতিতে চলবে। যে যেখানে যতটুকু অপরাধ করেছে সে ঠিক ততটুকু সাজা পাবেন।

কাজেই জেলা প্রশাসক যে কথপোকথন রেকর্ড করেছেন তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা অথবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মাধ্যমে এই ফোনকলটি রেকর্ড করিয়েছেন এবং সেটি তাদের কাছ থেকে তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করেছেন। এটি যদি তিনি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে সেখানে আইনের ব্যতয় হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন জেলা প্রশাসক এবং নিক্সন চৌধুরীর দ্বন্দ্বের মাধ্যমে কার কতটুকু ক্ষমতা, কার কতটুকু জবাবদিহিতা। এবং কে কী করতে পারেন না পারেন তার বহু কিছুই বেরিয়ে আসবে।

এই মামলাটি শেষ পর্যন্ত একটি দিক নির্দেশনামূলক মামলা হিসেবে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেক আইনজীবী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ